|
|
|
|
কংগ্রেস বলছে ‘ঘরে ফেরা’ |
ঘাসফুল ছেড়ে হাত ধরল কেশপুরের দু’শো
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
গোষ্ঠী কোন্দল ছিলই। এ বার তার জেরে দলবদল। কেশপুরের বাসিন্দা ২০০ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। মেদিনীপুর শহরের জেলা কংগ্রেস ভবনে তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শম্ভু চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন কংগ্রেস নেতা মহম্মদ রফিক। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, ‘ঘরে ফেরা’র এটাই শুরু। ধীরে ধীরে অনেকেই ফিরবেন।
সদ্য কংগ্রেসে যোগ দেওয়া দোগাছিয়ার আব্দুল হান্নান, চড়কার মসিউর রহমান, মুগবসানের শেখ আফসার, পীতাম্বর চকের লায়লা বেগমরা বলছেন, “সিপিএমের আমলে আমাদের ঘরছাড়া হতে হয়েছিল। কারণ, তৃণমূল করতাম। আবার তৃণমূলের আমলেও ঘরছাড়া হতে হচ্ছে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি চলছেই। প্রতিবাদ করলেই হচ্ছে হামলা। তাই ঘরে ফিরলাম।”
কিন্তু কেন এই ঘরে ফেরা? শম্ভুবাবুদের মতে, “দীর্ঘ ৩৪ বছর যাঁরা সিপিএমের হাতে অত্যাচারিত হয়েছেন, রাজ্যে সরকার বদলের পর তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছিল। এ বার তাঁদের মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে। মানুষকে বেশিদিন ভুল বুঝিয়ে রাখা যায় না।” |
দলীয় পতাকা হাতে ‘ঘরে ফেরা’ কর্মীরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
এফডিআই, কংগ্রেস-সিপিএম ‘গোপন আঁতাতে’র প্রতিবাদে রবিবার কেশপুরে সভা করেছে তৃণমূল। সেখানে উপস্থিত দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, “আমাদের কেউ দল ছেড়ে কোথাও যায়নি। বরং সরকারের উন্নয়নে খুশি হয়ে বহু মানুষ আমাদের সভা, সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।” একই সুরে তৃণমূলের কেশপুর ব্লকের সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, “এ দিন হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে কেশপুরে মিছিল করেছি। আমাদের লোক অন্য দলে গেলে মিছিল করলাম কী করে?”
একটা সময় কেশপুর ছিল ‘লাল-দুর্গ’। বিরোধী স্বর শোনাই যেত না। শাসক সিপিএমের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে বিরোধীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠত। সিপিএম নেতৃত্বের অবশ্য দাবি ছিল, কেশপুরবাসী আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। বিরোধীরা তাই এখানে সংগঠনই গড়তে পারেনি। ২০১১ সালে পরিবর্তনের ঝড়ে যখন সব ওলটপালট হয়ে গেল, তখনও কেশপুর বিধানসভা আসনি ধরে রেখেছিল সিপিএম। সেই কেশপুরে তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে দল ছাড়ছেন মানুষ, অথচ সিপিএমে যোগ দিচ্ছেন না! কেন? স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দলুইয়ের মতে, “ওঁরা কোনও দিনই আমাদের সঙ্গে ছিলেন না। এখন তৃণমূল-কংগ্রেসের গোলমালের জেরে আবার কংগ্রেসে ফিরেছেন।”
তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে দলাদলি চলছে পালাবদলের পর থেকেই। গত দেড় বছরে তিন বার ব্লক সভাপতি বদল করেও পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। উল্টে সভাপতির পদ হারানো চিত্ত গরাই, আশিস প্রামানিক, শেখ মহিউদ্দিনের অনুগামীরা নতুন নতুন গোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছেন। বর্তমানে ব্লক সভাপতি পদে আছেন তপন চক্রবর্তী। এই চার সভাপতির বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন প্রবীণ তৃণমূল কর্মী নেপাল ঘোষ ও তাঁর অনুগামীরা। এঁরাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পরিণামে কেশপুর ছেড়ে মেদিনীপুরে ত্রাণশিবির বানিয়ে ছিলেন। ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’ গড়ে মিছিল, সভাও করেছেন। এঁদের দাবি নেপাল ঘোষকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি করতে হবে। তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মূলত নেপাল অনুগামীরাই এ দিন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তবে দলবদলের দলে নেতৃস্থানীয় কেউ ছিলেন না। এ নিয়ে মন্তব্য করতেও রাজি হননি নেপাল ঘোষ, গোলাম মোর্তাজারা। |
|
|
|
|
|