আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন হাওড়া জেলার কারুশিল্পীরা। পারিবারিক পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য কাজের সন্ধানে। প্রতিমা অথবা পূজামণ্ডপ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পীরা দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পরিশ্রমের পরেও হাতে পাচ্ছেন মাত্র ১২০-১৫০ টাকা। শিল্পীদের বক্তব্য, সেই টাকায় সংসার চালানো দায় হয়ে উঠেছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই এই শিল্পীরা পেশা পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকছেন।
কারুশিল্পী সুশান্ত পাত্র বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমি এই কাজ করে আসছি। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে হাতে পাই মাত্র ১২০ টাকা। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে এত অল্প টাকায় কি সংসার চলে? এই কাজ করতে করতে অনেক সময়ে চোখ, কোমর, কব্জির সমস্যায় ভুগতে হয়। আমাদের না আছে পিএফ, না আছে পেনশন। এখন তো কাজ করাই দায় হয়ে উঠেছে।”
হাওড়া জেলার কয়েক হাজার কারু শিল্পী এই সমস্যার সম্মুখীন। একটি কারখানার মালিক তপন নাথ বলেন, “এই কুটির শিল্পের কথা কেউ ভাবে না। আমার কারখানায় ৮ জন শিল্পী কাজ করে কিন্তু তাঁদের ঠিক মত পারিশ্রমিক দিতে পারি না। কারণ বর্তমান বাজারে কাঁচা মালের দাম অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। যে থার্মোকল গত বছর ৭০০ টাকা বান্ডিল ছিল, তা এ বার ১১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বর্ষার জলে রং যাতে না ধুয়ে যায়, সে জন্য দামি রং ব্যবহার করতে হচ্ছে।
এ ছাড়াও আঠা, পেরেক, কাগজের দাম আকাশ ছোঁয়া। অথচ পুজো কমিটি সামান্য টাকা বাড়ালেই বলে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অর্ডার না দেওয়ার হুমকি দেয়।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের সরকারি সাহায্য বা ব্যাঙ্ক ঋণ পেতেও প্রচণ্ড সমস্যায় পড়তে হয়। গত বছর তা চেষ্টা করেও টাকা মেলেনি।”
হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পাঁতিহালের বাসিন্দা সুবোধ ঘোষাল বলেন, “এ বারে আমি দু’টি পুজোর কাজ করছি। কিন্তু পারিশ্রমিক খুব কম থাকায় লোকাভাব দেখা দিয়েছে। তার উপর যাঁরা ছিল তাঁদের মধ্যে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য লাভজনক পেশায় চলে যাচ্ছেন।”
এই সমস্যা প্রসঙ্গে পাঁচলার আর এক কারুশিল্পী তপন ঘোষ বলেন, “আমার কাছে আগে অনেক শিল্পী ছিল কিন্তু অন্য পেশায় চলে যাওয়ার ফলে এখন মাত্র দু’জন শিল্পীতে এসে ঠেকেছে।” |