ট্র্যাডিশনাল তাঁতের শাড়ি নয়। পুজোয় চাই সিল্ক ঢাকাই। কাপড় যেমন পাতলা তেমনই নরম। পরতেও আরাম। তা বলে সাদামাটা নয়। পুরো কাপড় জুড়েই থাকবে রকমারি নকশা। আঁচলও এক রকম হবে না। তাতে আবার আলাদা কাজ।
এবার পুজোয় ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় সবার উপরে সিল্কের শাড়ি। এমনই দাবি করলেন, পূর্বস্থলীর সমুদ্রগড় এলাকার কাপড় ব্যবসায়ীরা। আর তাই ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে শেষ মুহূর্তেও তৈরি হচ্ছে প্রচুর সিল্কের শাড়ি।
কালনা মহকুমার সমুদ্রগড়। গোটা জেলার শাড়ির বাজারগুলির অন্যতম। সারা রাজ্যে বিক্রি হয় এখানকার শাড়ি। সমুদ্রগড় তো বটেই, পাশের ধাত্রীগ্রামেও তৈরি হয় শাড়ি। দুই এলাকা মিলিয়ে ছোট বড় ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। পুজোর মরসুমেই সবচেয়ে বেশি ব্যবসা বাড়ে। সমুদ্রগড়ের তাঁতের কাপড়ের হাট থেকে পাইকারি ক্রেতারা কিনে নিয়ে আসেন তাঁতের শাড়ি। বৈশাখ মাস থেকেই কলকাতা, দুর্গাপুর, আসানসোল, মেদিনীপুর, শিলিগুড়ি-সহ রাজ্যের নানা জায়গায় পাইকারি বাজারের জন্য লরি ভর্তি পুজোর কাপড় যেতে শুরু করে। এমন কী বহু ব্যবসায়ী পাইকারি ছাড়াও নিজেদের দোকান থেকেও খুচরো শাড়ি বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীদের কথায়, “পুজোর বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নানা ধরনের শাড়ি তৈরি করতে হয়। এই শাড়িগুলিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের সুতো। পুজোর মাস তিনেক আগে থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতাদের পছন্দের শাড়ির অর্ডার আসতে থাকে। সেই অনুযায়ী তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের শাড়ি। |
ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে ক্রেতাদের ঝোঁক ছিল ছ’পাড়, মিস্ড কল, আমকল্কার মতো বিশেষ ধরনের শাড়ির। তবে এবার সব থেকে বেশি চাহিদা সিল্ক ঢাকাইয়ের। শাড়ির জমি জুড়ে বুটির কাজ। নকশাও হরেক রকম। তাঁতিরা নানা রঙের এই শাড়িতে ব্যবহার করছেন ১২০ কাউন্টের সিল্কের সুতো। আঁচলের কোথাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লতার নকশা, কোথাও বা বাহারি ফুল। দাম ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। ক্রেতাদের নজর কাড়ছে সিল্ক জুট শাড়িও। পাটের সুতো ও সিল্কের সুতোর মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে এই শাড়ি। গত বছর নদিয়ার ফুলিয়ায় এই শাড়ি বিক্রি হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু এ বারই প্রথম এই শাড়ি তৈরি করলেন সমুদ্রগড়ের তাঁতিরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, কলকাতা-সহ বেশ কিছু এলাকা থেকে জুট সিল্কের ভাল বিক্রির খবর মিলেছে। শাড়ির খোলের নানা জায়গায় রয়েছে পাটের সুতোর নকশা। মূল বৈশিষ্ট্য, ছয় থেকে আট ইঞ্চির চওড়া পাড়, কাপড়ের খোল ও আঁচলের নকশার সঙ্গে যা খুবই মানানসই। এই কাপড় তৈরির জন্য লাগে ১০০ কাউন্ট সুতো। দোকানে বিকোচ্ছে মাত্র দেড় থেকে দু’হাজার টাকায়। ছোট থেকে বড় সব বয়সের মেয়েদের কথা মাথায় রেখেই এই কাপড়ের মানানসই রং ও নকশা ব্যবহার করছেন তাঁতিরা।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, বিকোচ্ছে চায়না ও কোরিয়ার সিল্কও। হাতে চালানো তাঁতে তৈরি এই শাড়ির এক দিকে ব্যবহার করা হচ্ছে সিল্কের সুতো। অন্য দিকে, মারসিরাইস্ড সুতো। চায়না সিল্কের কাপড় খুবই হালকা বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে, সমুদ্রগড় ও ধাত্রীগ্রাম এলাকায় তৈরি বালুচরি কটন শাড়ি। গোটা শাড়িতে রয়েছে জরির নকশা। পাড়ও জরির। তবে দু’টোতে ব্যবহার করা হয়েছে দুই ধরনের জরি। দাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। এর সঙ্গে রঙিন তসরের বাজার ভাল বলেও জানালেন বস্ত্র ব্যবসায়ীরা। সমুদ্রগড়ের শাড়ির ব্যবসায়ীদের সব চেয়ে বড় সংগঠন টাঙ্গাইল তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতি। সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কার্তিক ঘোষ বলেন, “এ বার ক্রেতারা কাজ করা শাড়ির দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। সিল্কের শাড়িই সেই চাহিদা মেটাচ্ছে।” সমিতির আর এক সদস্য সুরেশ বসাকের কথায়, “সুতো ও বিভিন্ন কাঁচা মালের দাম বাড়ায় সমুদ্রগড়ের শাড়ির দাম দু’শো থেকে তিনশো টাকা অবধি বেড়েছে। তা সত্ত্বেও গুণমান ভাল হওয়ায় ক্রেতারা শাড়ি কিনতে পিছপা হচ্ছেন না।” |