শরীরের অসুখ সারাতে ডাক্তারের ওষুধ ছাড়া গতি নেই।
ঐতিহাসিক সৌধের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। সময়ের অভিঘাতে তার ভগ্ন-জীর্ণ দশা শোধরাতেও চাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।
এ কথা মাথায় রেখেই পুরনো ভবন সংস্কারে নতুন একটি রসায়নাগার তৈরি করেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়েই সংস্কার করা হবে ওই সব ভবন। হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন মনে করেন, পূর্বাঞ্চলে ঐতিহাসিক সৌধ সংরক্ষণে এই গবেষণাগার অচিরেই মাইলফলক হয়ে উঠবে। তাঁর কথায়, “পূর্ব ভারতে এ ধরনের গবেষণাগার এই প্রথম। যে কেউই সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের কাছে এই গবেষণাগারের সাহায্য নিতে পারেন।”
হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থ দাস বলছেন, “মূলত তিনটি বিষয় পরীক্ষানিরীক্ষা হবে গবেষণাগারে। যে ভবন সংস্কার হবে তা কী কী ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে, সেই উপকরণগুলির সহন ক্ষমতা কতটা এবং বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে কী পদ্ধতি নেওয়া প্রয়োজন।”
তাই আলাদা আলাদা সৌধের জন্য পৃথক ওষুধ-পথ্য। যেমন, বীরভূমের রাজনগরে মোগল আমলে তৈরি ইমামবাড়া, বারুদঘর বা তোরণ কিংবা বীরভূমের লাভপুরে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সংস্কারের পদ্ধতি এক হবে না। পুরনো ভবন সংস্কারে বিশেষজ্ঞ পার্থবাবু জানান, আগেকার দিনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার হয়েছে। পুরনো বাড়িতে মশলা তৈরি হত চুন-সুরকি দিয়ে। অনেক জায়গায় চুনের সঙ্গে বালি মেশানো হত। পার্থবাবু বলেন, “সুলতানি বা মুঘল আমলে চুনের সঙ্গে সুরকি মেশানো হত। অনেক সময়ে কাঠামো শক্তপোক্ত করতে তার সঙ্গে মেশানো হত মেথি শাকের নির্যাসও। আবার ইংরেজ আমলে চুনের সঙ্গে মেশানো হত বালি।”
এ বার কোনও পুরনো বাড়ি সংস্কারের সময়ে জানা দরকার কী অনুপাতে, কী কী উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। পার্থবাবু বলেন, “সেই অনুপাত অনুযায়ী ওই উপাদানগুলি আমরা রসায়নাগারে মেশাব। সেই সঙ্গে দেওয়ালের প্লাস্টারের ক্ষেত্রে কী কী উপাদান কী ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাও সেই ভাবে বার করে নিতে পারব। তারপর সেই ভাবেই সংস্কার করা হবে।”
এত দিন পর্যন্ত এই সব উপাদান এবং তার প্রকৃতি জানতে রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন গবেষণাগারের সাহায্য নিতে হত। এ বার কলকাতাতেই সে কাজ করা যাবে। বেহালায় কমিশনের অফিসে কাজ শুরু করেছে ওই গবেষণাগার। কিন্তু পুরনো দিনের সেই সব ব্যবহৃত উপকরণ কি এখন পাওয়া সম্ভব? পার্থবাবু জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না ঠিকই। কিন্তু এখন গবেষণাগারে সেই ধরনের উপাদান তৈরি করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
পার্থবাবু জানাচ্ছেন, পাথর, কাঠ, ইট এবং কংক্রিট, চার ধরনের উপকরণ এক নয়। তাই পরিষ্কারের পদ্ধতিও আলাদা। তাতেও সাহায্য নেওয়া হবে রসায়নাগারের। ঐতিহ্যবাহী বাড়ি সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের কাজে সাহায্য করতে গবেষণাগারের সঙ্গে তৈরি হচ্ছে একটি পাঠাগারও। কমিশন সূত্রে খবর, সঠিক ভাবে সংস্কার করতে তাদের তালিকাভুক্ত স্থপতিদের এই গবেষণাগারে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। |