তৃণমূল ছেড়ে হাজার দু’য়েক নেতা-কর্মী তাঁদের দলে যোগ দিলেন বলে দাবি করল সিপিএম। শুক্রবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের জীবনতলা বাজারে সিপিএম এক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানেই দলের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী, ক্যানিং (পূর্ব)-র বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার উপস্থিতিতে ওই তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আনুষ্ঠানিক ভাবে সিপিএমে যোগ দেন। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন সুজন, রেজ্জাকরা। রেজ্জাক বলেন, “যাঁরা আমাদের দলে যোগ দিলেন, তাঁদের সম্মান জানাতে হবে। ওঁদের সঙ্গে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।”
বিধানসভা ভোটের পর থেকেই ক্যানিংয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। মাঝে মধ্যেই মারামারি বাধছে দলেরই একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে। কয়েক মাস আগে ক্যানিং ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক পাইককে খুনের পিছনেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ওঠে। একের পর এক এ ধরনের ঘটনার জেরেই তৃণমূলের অন্দরে ফাটল দেখা দিচ্ছে বলে দলের একাংশও মনে করছে।
এ দিন ক্যানিং ২ ব্লক তৃণমূল নেতা আবদুল রহিম মোল্লা, ক্যানিং ২ ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি আতিয়ার রহমান পিয়াদার নেতৃত্বে ক্যানিং (পূর্ব) বিধানসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে সিপিএমে যোগ দিতে এসেছিলেন তৃণমূলের লোকজন। সমাবেশে প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সদ্য সিপিএমে যোগ দেওয়া আতিয়ার বলেন, “অনেক মেহনত করে, সিপিএমের সঙ্গে লড়ে তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছিলাম। কিন্তু সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজনের হাতে ক্যানিং এলাকায় দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং এলাকার অনুন্নয়নের জন্যই আমরা দল ছাড়তে বাধ্য হলাম।” |
রহিমের কথায়, “যারা সিপিএমের সর্বনাশ করে তৃণমূলে এসেছে, তারা তৃণমূলকেও শেষ করবে।”
জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহন জাটুয়া অবশ্য ঘটনার সত্যতাই মানতে চাননি। তিনি বলেন, “জীবনতলায় ওদের (সিপিএম) পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই উল্টো-পাল্টা বলতে শুরু করেছে। আমাদের দল থেকে কেউ ওদের দলে যোগদান করেননি।” আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁর পাল্টা দাবি, “ওই এলাকায় যাঁরা সিপিএমের সঙ্গে আছেন, তাঁরাও খুব শীঘ্র আমাদের দলে যোগ দেবেন।”
সিপিএমের সভাকে কেন্দ্র করে এ দিন দু’পক্ষের মারপিট বাধে। সিপিএমের অভিযোগ, সভায় যোগ দিতে আসার পথে ঝোড়োর মোড়, ভবেনের হাট, চিন্তার মোড়, ন্যাতরা বাজার প্রভৃতি এলাকায় তাঁদের দলের লোকজনের পথ আটকে হামলা চালায় তৃণমূল। জখম হয়েছেন জনা পঞ্চাশ সিপিএম কর্মী-সমর্থক। রেজ্জাকের দাবি, সভা সেরে ফেরা পরে সদ্য সিপিএমে যোগ দেওয়া রহিমকে মারধর করেছে তৃণমূল। খাগরায় তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর করেছে। হামলা চালানো হয়েছে পাশাপাশি আরও তিনটি বাড়িতে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) কঙ্করপ্রসাদ বারুই। সুজনবাবু বলেন, “আমাদের জনসভা ভেস্তে দিতে চেয়েছিল তৃণমূল।” সুজনবাবুর দাবি, সিপিএম থেকে ‘বহিষ্কৃত’ তৃণমূল নেতা সওকত মোল্লার নেতৃত্বেই এ দিন হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। ক্যানিং ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সওকতের দাবি, “সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে সিপিএমের লোকজনই আমাদের দলীয় পতাকা ছিঁড়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে ওরা উল্টে আমাদের লোকজনকে মারধর করেছে। ৪ জন জখম হয়েছেন।” |