বত্সরকাল পূর্বে রাহুল গাঁধী কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আশ্বাস দিয়াছিলেন, ভারতীয় শিল্পপতি ও বণিকসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের তিনি জম্মু-কাশ্মীরে লগ্নির সম্ভাবনা খতাইয়া দেখিতে শ্রীনগরে লইয়া আসিবেন। তিনি কথা রাখিয়াছেন। রতন টাটা, কুমারমঙ্গলম বিড়লা, দীপক পারেখ-সহ ভারতীয় শিল্পব্যক্তিত্বরা কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শতাধিক ছাত্রছাত্রীর সম্মুখে রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং তরুণ প্রজন্মের শিক্ষিত কাশ্মীরিদের মানবসম্পদকে সদ্ব্যবহার করিয়া কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র উন্মুক্ত করার বিষয়ে তাঁহাদের মতামত দিয়াছেন। কাশ্মীরি তরুণরা উচ্ছ্বসিত, যেমন উচ্ছ্বসিত শিল্পপতিরাও। এই পারস্পরিকতা কাশ্মীরের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হইবে, আশা করা যায়।
রাহুল গাঁধীর এ বারের কাশ্মীর সফরের লক্ষ্য বহুমুখী। রাজধানী শ্রীনগরে ভারতীয় শিল্পবাণিজ্যের কর্ণধারদের টানিয়া আনার আগে তিনি রাজ্যের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের সহিত দফায়-দফায় সাক্ষাৎ করিয়াছেন। অচিরেই ব্লক স্তরের ভোটগ্রহণ। রাজ্যের শাসক জোটের শরিক হিসাবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রভাব তৃণমূল স্তরের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলিতে সম্প্রসারিত করার অভিপ্রায়ও তাঁহার সফরকে প্রাসঙ্গিকতা দিয়াছে। এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের সহিত তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকিলেও সেটা শেখ আবদুল্লার সহিত জওহরলাল নেহরুর প্রতিদ্বন্দ্বিতারই ধারাবাহিকতা। এই প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক এবং ভারতীয় সংবিধানের চৌহদ্দির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এক দশক আগে ইহা সম্ভব ছিল না, সন্ত্রাস ও রক্তক্ষয়ে কাশ্মীরের জনজীবন তখন অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতায় দীর্ণ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্রমে রাজ্যের রাজনীতিতে স্থিতি আনয়নের পরই সেখানে আর্থিক উন্নয়নের কর্মসূচি রূপায়ণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হইয়াছে। আর সেই সূত্রেই ভারতীয় বৃহৎ শিল্পপতিদের শ্রীনগর যাত্রা।
জম্মু-কাশ্মীরে মোতায়েন মিলিটারি পুষিতে নয়াদিল্লির এ যাবৎ যত ব্যয় হইয়াছে, তাহার এক দশমাংশও রাজ্যের আর্থিক উন্নয়ন, পরিকাঠামো নির্মাণ বা লগ্নিতে বিনিয়োগ হয় নাই। শিক্ষিত কাশ্মীরি যুবক-যুবতীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ না পাইলে দারিদ্র, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হইয়া সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদের নিষিদ্ধ কিন্তু আকর্ষণীয় পথেই পা বাড়াইবেন, ইহা আশ্চর্য নয়। যুদ্ধকালীন অবস্থা চলিলে উন্নয়নের কাজ করা সম্ভব নয়, এই অজুহাতে দীর্ঘ কাল উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ সম্পদও রাজনীতিক ও আমলাতন্ত্রের দুর্নীতির কৃষ্ণ গহ্বরে নিক্ষেপিত হইয়াছে। কংগ্রেসের তরুণ নেতা রাহুল কাশ্মীরকে ভারতের মূল স্রোতে শামিল করিবার সামরিক-আমলাতান্ত্রিক ছকটির বাহিরে গিয়া চিন্তা করিতেছেন। তিনি সহযোদ্ধা হিসাবে পাইয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকে। ভারতীয় শিল্পপতিদেরও নিশ্চয় মনে হইয়াছে, কাশ্মীরের জন্য, শিক্ষিত কাশ্মীরি তরুণতরুণীদের জন্য তাঁহাদের কিছু করণীয় আছে। তাই রাহুলের আহ্বানে সাড়া দিতে তাঁহাদের দ্বিধা হয় নাই। শুভেচ্ছাকে কর্মসূচি ও প্রকল্পে রূপান্তরিত করা হোক। উন্নয়নই হোক আত্তীকরণের মাধ্যম। |