|
|
|
|
দেশি সুরার সুরক্ষা চেয়ে সুর চড়াচ্ছেন কমরেডরা |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
নিন্দুকে বলে, দলটার মতাদর্শই আমদানি হয়েছে বিদেশ থেকে! দলের নামও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি নয়! আন্তর্জাতিক ব্যাপার-স্যাপারে তাদের আগ্রহ বরাবরই বেশি!
দরকার পড়লে সেই কমিউনিস্টরাই যে কত দেশি হয়ে উঠতে পারেন, জানান দিচ্ছে কেরল সিপিএম। দক্ষিণী এই রাজ্যের এক্কেবারে নিজস্ব ঘরানার দেশি মদে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর কোনও চেষ্টা হলে আন্দোলনে যাওয়ার কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা! রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী আলোচনা করে বিবৃতি জারি করছে, রাজ্য থেকে ‘তাড়ি’ বিতাড়িত করার অপচেষ্টা তারা মানবে না! এই কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত অজস্র মানুষের জীবিকার কথা ভাবতে হবে তো! যদি ধরা যায় এ-ও এক খুচরো কারবার, তা হলে দলীয় অবস্থানে সিপিএম আছে দেশি কারবারিদের পাশেই!
কেরলের যে কোনও প্রান্তে ঘুরে বেড়ালে রাস্তার (বড় শহরের রাজপথে তুলনায় কম) ধারে ছোট ছাউনির গায়ে ‘টোডি শপে’র বোর্ড চোখে পড়বেই। হাতে-লেখা বোর্ড ঝুলিয়েও দিব্যি চলছে কারবার। পশ্চিমবঙ্গের গাঁয়ে-গঞ্জের চালু লব্জে যাকে ‘তাড়ি’ বলে, এ হল তারই মালয়ালি সংস্করণ। কেরলের বাসিন্দারা মালয়ালম ভাষায় বলেন ‘কাল্লু’। অল্প দামে জনপ্রিয় নেশা! সম্প্রতি কেরলের
শাসক জোট ইউডিএফের কয়েকটি শরিক দল এই
টোডি শিল্পে তালা ঝোলানোর দাবিতে বাজার সরগরম করছে। আর তাতেই বিদ্রোহের ভেঁপু বাজিয়ে দিয়েছেন পিনারাই বিজয়নেরা! |
|
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী |
টোডি-বিরোধী প্রচারের সামনের সারিতে আছে সরকারের শরিক মুসলিম লিগ। তাদের হাতিয়ার একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে হাইকোর্টের কিছু পর্যবেক্ষণ। যেখানে তরল নেশার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ভাবনাচিন্তার কথা বলা আছে। সেখান থেকেই সূত্র টেনে বলা হচ্ছে, ‘কাল্লু’র সঙ্গে কিছু রাসায়নিক মিশিয়ে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া তৈরি করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সমাজ বাঁচাতে তাই একে বিদায় কর!
পাল্টা নেমেছেন কমরেডরা! তাঁরা ইউডিএফ সরকারেরই নিযুক্ত উদয়ভানু কমিশনের রিপোর্ট দেখাচ্ছেন। রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করে দিলে তার পরিণাম কেমন হতে পারে, আন্দাজ করার জন্য ওই কমিশন গড়া হয়েছিল। তারা অবশ্য টোডি শিল্পকে রক্ষা করার পক্ষেই সওয়াল করেছে। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব বলছেন, কোনও নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক যুক্তি ছাড়াই এই শিল্পে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে হাজার হাজার শ্রমিককে পথে বসানোর তাল করছে সরকারের একাংশ। দেশি এই মদে যাতে বিষক্রিয়া না-হয়, তার জন্য সরকারি নজরদারি চলুক। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কেন?
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এবং কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী এম এ বেবির কথায়, “টোডি আমাদের রাজ্যের ঐতিহ্যশালী ঘরোয়া শিল্প। তাকে এ ভাবে উৎখাত করা যায় না! আদালতের কিছু মন্তব্য নিয়ে সরকারের শরিক কয়েকটি দল যে হইচই করছে, তার কোনও যুক্তি নেই। আমরা তার বিরোধিতা করছি।” কেরলের এই কুটির শিল্প কিন্তু বাংলার চোলাইয়ের মতো নয়! নারকেলের জল থেকে তৈরি এই নেশা-পানীয় সরকারের ঘরে রাজস্ব আনে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ বিজয়রাঘবন বলছেন, “সরকার যে রাজস্ব এর থেকে আয় করে, সেটা খুব কম নয়। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, স্বল্প পরিকাঠামোয় কত বেশি সংখ্যক লোকের রুজির ব্যবস্থা করে এই শিল্প!” এলডিএফ ক্ষমতায় থাকার সময় সমবায় গড়ে ‘কাল্লু’-কারবার চালাতে চেয়েছিল। এখন আবগারি ঠিকাদারদের হাতে পড়ে গরিব শ্রমিকদের ক্ষতি হচ্ছে বলেও সিপিএমের অভিযোগ।
কেরলের রাজনীতিতে ‘লিকার-মাফিয়া’ অন্যতম চর্চার বস্তু। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান মাঝে মাঝেই শোনা যায়। এখন টোডি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো বার্তা না চলে যায়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে সিপিএমকে। দলের নেতারা বলছেন, মদ্যপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রচার হোক, সচেতনতা বাড়ানো হোক। তা হলে বিদেশি সুরার কথাও ধরতে হয়। সে সব কিছু না-করে একটা খাঁটি ঐতিহ্যে কোপ মেরে গরিবের পেটে লাথি মারা কেন?
সরকার তা হলে শেষ পর্যন্ত কী করবে? রাজ্যের আবগারি মন্ত্রী, কংগ্রেসের কে বাবু মনে করছেন, কমরেডদের যুক্তি নেহাত ফেলনা হয়! আরও ভাবতে হবে। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, জানাচ্ছেন তিনি।
ঈশ্বরের আপন দেশে সোমরসের জন্য গলা চড়াতে সিপিএমের পাশে কংগ্রেস? ভাগ্যিস ও রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেই! |
|
|
|
|
|