সংস্কার নিয়ে কোন পথে, দিশাহীন বিজেপি
নমোহন সিংহের সরকার যে ভাবে সংস্কারের ঝড় তুলেছে, তাতে এখন উভয়সঙ্কটে বিজেপি নেতৃত্ব।
দলের মধ্যে অরুণ জেটলি থেকে অরুণ শৌরি, এমনকী সভাপতি নিতিন গডকড়ী নিজেও খুচরো বিক্রি, বিমা, পেনশন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির জঙ্গি বিরোধিতার বিপক্ষে। জেটলি-শৌরিরা এর মধ্যে আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েও দিয়েছেন, সংস্কার এবং প্রশাসনিক দক্ষতা আজ আমজনতার কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনমোহন সিংহ যে পথে হাঁটছেন, তাকে কিন্তু মধ্যবিত্ত সমাজের অনেকেই সমর্থন করছে। ভারতের মধ্যবিত্ত সমাজ প্রায় পঁচিশ কোটির। এদের মধ্যে বিজেপির একটা বড় ভোটব্যাঙ্ক আছে, যারা নিতিন গডকড়ীদের সংস্কারমুখী হিসেবেই দেখতে চায়। আর রয়েছে শিল্পমহল। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমল থেকেই বিজেপি সংস্কারমুখী। সেই কথা মাথায় রেখে আজ তাদের সংস্কারের সমর্থনে দাঁড়াতে আবেদন জানিয়েছে বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম এবং সিআইআই।
দলের একটি বড় অংশের বক্তব্য, শুধু কংগ্রেস বিরোধিতার জন্যই সংস্কারের বিরোধিতা করলে এদের সমর্থন হারাবে দল। তা ছাড়া বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্যও কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে প্রশাসনিক দক্ষতার উপরে, যে দক্ষতার জন্য দরকার আর্থিক সংস্কার। যেমন সঙ্ঘকে তুষ্ট রাখতে নরেন্দ্র মোদী মনমোহন সরকারের বিরোধিতা করলেও ভাল ভাবেই জানেন, বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করলে রাজ্যে যে উন্নয়নের ধারা শুরু করেছেন তিনি, তা আটকে যাবে। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার সময়কে পিছনে ফেলে এখন তিনি উন্নয়নমুখী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ন্যানো কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ডাকেই গুজরাতকে বেছে নেন রতন টাটা। মোদীর চেষ্টাতেই গুজরাতে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে অটো-হাব, যেখানে শুধু ন্যানো নয়, মারুতি, পুজোর মতো গাড়ি কারখানাও আসতে চাইছে। দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের নিয়ে নিয়মিত সম্মেলন করেন তিনি। মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহান এবং ছত্তীসগঢ়ের রমন সিংহও ক্ষমতায় রয়েছেন উন্নয়নমুখী কাজের জন্য। হিন্দুত্ববাদী প্রচারের জন্য নয়।
সঙ্ঘের কাছে তাই জেটলি-শৌরিদের বক্তব্য, তাঁরা যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সংস্কারের জঙ্গি বিরোধিতায় নামেন, তাতে বিজেপির লোকসানই বেশি হবে। তাঁদের মতের শরিক সুধীন্দ্র কুলকার্নি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, রাজনাথ সিংহ থেকে পীযুষ গোয়েল, অনেকেই। শুধু তাই নয়, দলের একটা অংশের মত, ইদানীং আরএসএস যে বিজেপির উপরে কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করছে, তা ঠেকাতে সংস্কারকে সমর্থন করা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দলের অনেকেই এখন বুঝতে পারছেন, হিন্দুত্ববাদ আঁকড়ে থেকে দলের আর কোনও লাভ নেই।

দিগভ্রান্ত
সংস্কার বিরোধী সংস্কারপন্থী বিদেশি লগ্নির পক্ষে
সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত
নব্য স্বদেশি আন্দোলন চান,
তাই সংস্কারের বিরুদ্ধে
লালকৃষ্ণ আডবাণী
সুষমা স্বরাজ
যশবন্ত সিনহা
নিতিন গডকড়ী
অরুণ জেটলি
অরুণ শৌরি প্রমুখ
নরেন্দ্র মোদী
শিবরাজ সিংহ চৌহান
রমন সিংহ

বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিই এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ। এখন সুশাসন এবং সংস্কারকে ধরে নতুন পথে চলতে হবে। তা হলে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিজেপি সরকার, সেই লাভ কেন্দ্রেও তারা তুলতে পারবে।
সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত কিন্তু চাইছেন নতুন করে স্বদেশি আন্দোলন। নাগপুরের সদর দফতর থেকে তাঁর সেই বার্তা দিল্লি আসার পর উৎসাহিত লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা। তাঁরা এখন মনে করছেন, মমতার দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বিজেপির উচিত এখনই রাজ্যওয়াড়ি আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া। যে দলে আছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহাও।
নিট ফল, চরমে উঠেছে বিজেপির কোন্দল। দলীয় নেতৃত্ব নিজেদের অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলতে না পারায় তৈরি হয়েছে দিশাহীনতা।
বিজেপি নেতাদের অনেকেই অবাক যশবন্ত সিনহার পরিবর্তনে। এনডিএ আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে বিমার বেসরকারিকরণে প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলেন যশবন্ত। তখন তার তীব্র বিরোধিতা করেছিল আরএসএস। দলের সভাপতি কুশাভাও ঠাকরে সঙ্ঘ এবং যশবন্ত সিনহার ঝগড়া মেটাতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী আডবাণীর। বিজেপির এক সংস্কারপন্থী শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “সে দিনের সংস্কারবাদী যশবন্ত সিনহা আজ যেন মেধা পাটকর আর অরুন্ধতী রায় হয়ে উঠেছেন!”
দলের এই প্রবল দিশাহীনতার মধ্যে যশবন্ত সিনহা আমেরিকায়, রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছেন। আডবাণীও গত রাতে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আজ রাতে দিল্লি এসেছেন গডকড়ী। কাল বাকি নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তিনি ভবিষ্যতের রূপরেখা ঠিক করবেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গডকড়ী কিন্তু বিমা ও পেনশন ক্ষেত্রে সংস্কারের বিরোধিতা করে নিজে মুখ খোলেননি। কোনও শীর্ষ নেতাকে দিয়ে বিবৃতিও দেওয়াননি। সংসদে বিল এলে বিজেপি কী করবে, সে প্রশ্নেও নেতারা শর্তসাপেক্ষে সমর্থনের কথা বলেছেন।
কিন্তু সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিজেপি নেতৃত্ব কি পারবেন দলকে সংস্কার এবং প্রশাসনিক দক্ষতার পথে নিয়ে যেতে?
সঙ্ঘপ্রধানের বার্তা আসার পরে আডবাণীরা, যাঁরা কংগ্রেস বিরোধিতাকে অগ্রাধিকার দিতে চান, তাঁদের যুক্তি, বিজেপি যতই সংস্কারপন্থী হোক, বিরোধী হিসেবে ভোটপ্রচারের সময় সংস্কারকে হাতিয়ার করা কখনওই সম্ভব নয়। এনডিএ আমলে বিলগ্নিকরণের তীব্র বিরোধিতা করে কংগ্রেস জোর দেয় সামাজিক দায়বদ্ধতায় আর নেহরুবাদী সমাজতন্ত্রে। তাই আডবাণীর প্রস্তাব, ভোটের আগে সংস্কার বিরোধিতার লাইন নিলে জনতার মন মিলবে। এনডিএ-র সম্প্রসারণেও অদূর ভবিষ্যতে সুবিধা হতে পারে।
বিজেপির মধ্যে আরএসএসের দাপট এখনও বেশি। তাই অনেকে মনে করছেন, জেটলি-শৌরি নন, যশবন্ত সিনহার লাইনই হবে পার্টি লাইন। কিন্তু অরুণ জেটলি দলের মধ্যে সংখ্যালঘু হলেও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা হিসেবে তিনি শীতকালীন অধিবেশনের আগে বিজেপির সংস্কার-বিরোধী প্রচারে রাশ টানতে তৎপর।
এখন প্রশ্ন, দিশাহীন বিজেপিতে কি সেই রাশ টানা সম্ভব হবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.