লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না কিংফিশারের, বিমান সংস্থাটির কাছে এ বার সরাসরি সেটাই জানতে চাইল ডিরেক্টোরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। কিংফিশারে বর্তমান অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের তরফে শুক্রবার রাতেই তাদের এই কারণ দর্শানোর নেটিস পাঠানো হয়েছে। ডিজিসিএ-র প্রধান অরুণ মিশ্র এ দিন রাতে দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, “এত কিছুর পরে ওঁরা কী ভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা ও পারদর্শিতার সঙ্গে যাত্রীদের সুরক্ষা বজায় রেখে উড়ান চালাতে পারবেন, কিংফিশার-কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা তা-ও জানতে চেয়েছি।”
শো-কজের জবাব দেওয়ার জন্য কিংফিশার সময় পাচ্ছে দু’সপ্তাহ। ডিজিসিএ-প্রধান বলেন, “ওঁদের পনেরো দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে শো-কজের উত্তর দিতে হবে। ব্যাখ্যা করতে হবে, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিসিএ ব্যবস্থা নেবে না।” বিক্ষুব্ধ কর্মীদের দিয়ে সুরক্ষার কাজ কতটা সুষ্ঠু ভাবে করা সম্ভব, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। বস্তুত ভারতের কোনও বিমানসংস্থাকে এ জাতীয় শো-কজ নোটিস পাঠানোর নজির খুব একটা নেই বলেই বিমান পরিবহণ মহলের দাবি। |
কিংফিশার কর্মীর ‘আত্মঘাতী’ স্ত্রীর আত্মার শান্তি কামনায়
মোমবাতি মিছিল। কলকাতা বিমানবন্দরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
কর্মী-বিক্ষোভের জেরে গত তিন দিন যাবৎ কিংফিশারের যাবতীয় উড়ান থমকে। সাত মাস বেতন বন্ধ থাকায় লোকসানের ভারে জর্জরিত বিমানসংস্থাটির ইঞ্জিনিয়ার ও পাইলটদের একাংশ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আর যে হেতু ইঞ্জিনিয়ারদের সার্টিফিকেট ছাড়া বিমান উড়তে পারে না, তাই সংস্থার যে দশটা বিমান চালু ছিল, সেগুলোকেও বসিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। শুধু তা-ই নয়, ১২ অক্টোবর পর্যন্ত সংস্থায় আংশিক লক-আউট ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চালিয়েও কোনও সমাধান-সূত্র বেরোয়নি। উপরন্তু পরিস্থিতি জটিলতর হয়েছে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এক ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’র ঘটনায়। সুইসাইড নোটে যিনি স্বামীর বেতন না-পাওয়া এবং আর্থিক অনটনকেই দায়ী করে গিয়েছেন বলে পুলিশের দাবি।
সব মিলিয়ে বিজয় মাল্যের বিমানসংস্থার উপরে চাপ ক্রমশ বাড়ছে। তাদের বিরুদ্ধে ‘কড়া ব্যবস্থা’র ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ এত দিন বসে থাকা বিমানগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মন্ত্রী সকালে দিল্লিতে বলেছিলেন, “যাত্রী-সুরক্ষা সম্পর্কে ডিজিসিএ-কে সন্তুষ্ট করার পরে তবেই বিমানগুলো ফের উড়তে পারবে।” রাতে ডিজিসিএ-র শো-কজ নোটিসের পরে অনিশ্চয়তার ছায়া আরও ঘনীভূত হয়। পরে কিংফিশারের তরফে বলা হয়, শো-কজের জবাব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সংস্থা পুনরুজ্জীবনের বিস্তারিত পরিকল্পনা-রিপোর্টও ডিজিসিএ’কে দেওয়া হবে বলে কিংফিশার-কর্তৃপক্ষের দাবি।
এ দিকে কিংফিশারের বাজেয়াপ্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘মানবিক কারণে’ মুক্ত করেছে আয়কর দফতর। বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ বৈঠক ডেকে তারা এ কথা ঘোষণা করে। এতে অবিলম্বে নগদ ৬০ কোটি টাকা মিলবে, যা দিয়ে কর্মীদের দু’মাসের বেতন মেটানো হবে বলে এ দিন কিংফিশার-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। কারণ, বিক্ষুব্ধ কর্মীরা দু’মাসের বেতন নিতে রাজি নন, তাঁরা বকেয়া সাত মাসের টাকা একসঙ্গে চান।
আর এর জেরে কর্মীদের মধ্যে কিছুটা ‘বিভাজন’ সৃষ্টি হয়েছে বলে সংস্থা-সূত্রের খবর। কী রকম?
কর্মীদের অন্য অংশের মতে, এত দিন বেতন না-নিয়ে তাঁরা যে ভাবে চালিয়ে গিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আর ক’টা দিন সে ভাবেই চালানো উচিত। “কোম্পানির দুঃসময়ে এই বিক্ষোভ-আন্দোলন পিছন থেকে ছুরি মারার সামিল। কর্তৃপক্ষ তো বার বার বলছেন যে, বিদেশি লগ্নির খোঁজ চলছে! ওঁদের উপরে বিশ্বাস না-রাখলে আখেরে আমাদেরই ক্ষতি।” বলেন এক কর্মী। বিক্ষুব্ধরা অবশ্য প্রতিশ্রুতিতে ভুলছেন না। তাঁদের প্রশ্ন, ‘আট হাজার কোটি টাকা লোকসানের সংস্থায় কারা টাকা ঢালবে?” সংস্থার এ হেন দুরবস্থার সময়ে কর্ণধার বিজয় মাল্য কেন বিলাসবহুল ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেন সেটি বেচে দিচ্ছেন না, এ প্রশ্নও শোনা গিয়েছে কারও কারও মুখে।
কিংফিশারের প্রতিবাদী কর্মীরা এ দিন দিল্লি ও মুম্বইয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সন্ধ্যায় কলকাতাতেও তাঁদের মোমবাতি-মিছিল বার হয়। |