বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আইনস্টাইনের চিঠি ই-নিলামে
যেন ‘ঈশ্বরের’ অবিশ্বাস। তা-ও আবার অন্য কোনও বিষয়ে নয়। স্বয়ং ঈশ্বরের অস্তিত্বেই। এবং সেই অবিশ্বাসের খতিয়ান নিজের হাতেই একটি চিঠিতে লিখে ফেলেছিলেন তিনি। তিনি অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। বা বলা ভাল বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যার ঈশ্বর। সম্প্রতি তাঁর লেখা সেই চিঠিই উঠতে চলেছে অনলাইন নিলামে। এবং নিলাম সংস্থা ‘অকশন কজ’ সূত্রে খবর, ওই ‘ঈশ্বর-পত্রের’ ন্যূনতম মূল্য হবে ৩০ লক্ষ ডলার।
নিন্দু্কেরা চিঠির দাম বা নাম শুনে যতই ভুরু কোঁচকান, চিঠিটি যে আক্ষরিক অর্থেই ঈশ্বর-পত্র, তা নিয়ে অবশ্য জোরদার আপত্তি তুলতে পারছেন না তাঁরাও। কারণটাও খুব পরিষ্কার। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে গোটা দুনিয়া যে ঈশ্বর-মাহাত্ম্যে মেতে থাকে, চিঠিটিতে সেই ঈশ্বরকেই মানুষের দুর্বল মানসিকতার প্রমাণ হিসাবে দেখিয়েছেন এই নোবেলজয়ী পদার্থবিদ্। স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, “আমার কাছে ঈশ্বর আসলে মানুষের দুর্বলতার প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।” শুধু ভগবান নয়, বাইবেলের ব্যাপারেও কিন্তু একই রকম অনাস্থার সুর তাঁর লেখায়। সেই জন্যই বোধহয় চিঠিতে বাইবেলকে সাফ ভাবে ‘আদিম শিশুসুলভ গল্পের’ সম্ভার বলতে দ্বিধা করেননি তিনি। একই সঙ্গে তাঁর দৃঢ় ঘোষণা, “কোনও ব্যাখ্যা, কোনও যুক্তিই আমার এই ধারণা বদলাতে পারবে না।”
প্রথমাংশের বয়ান পড়লে হয়তো রক্ষণশীলদের মনে হতে পারে, শুধুমাত্র খ্রিস্টধর্মের উপর যাবতীয় ‘আঘাত’ হেনেছিলেন আইনস্টাইন। তবে, চিঠিটিকে আদ্যোপান্ত পড়লে বোঝা যাবে জন্মসূত্রে ইহুদি হলেও নিজের ধর্মের ব্যাপারে একই রকম অবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। চিঠিতে তাঁর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, “বাকি সব ধর্মের মতো ইহুদি ধর্মও আমার কাছে শিশুসুলভ কুসংস্কারেরই প্রতিফলন।.....আমার অভিজ্ঞতা বলছে, ইহুদিরা মানুষ হিসাবেও বাকিদের থেকে ভালও কিছু নন।” এবং এই সমস্ত বক্তব্যই নির্দ্ধিধায় তিনি পেশ করেছিলেন ইহুদি-দার্শনিক এরিক গুটকিন্ডের কাছে। চিঠিটা যে আসলে গুটকিন্ডকেই লেখা। সময়টা ১৯৫৪। তার ঠিক এক বছর পরেই মারা যান আইনস্টাইন।
তবে ‘ঈশ্বর-জীবনের’ এই শেষ পরিণতির পিছনেও একটা ছোট্ট গল্প রয়েছে। আইনস্টাইন তখন মৃত্যুশয্যায়। এতই অসুস্থ যে স্বাধীন ইজরায়েলের জন্মের সাত বছর পূর্তি উপলক্ষে যে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর, সেটাও তৈরি করে উঠতে পারেননি। চিকিৎসকেরা তখন আইনস্টাইনকে শল্যচিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গেই পদার্থবিদের স্পষ্ট উত্তর, “আমার যখন ইচ্ছা হবে চলে যাব। কৃত্রিম ভাবে আয়ু বাড়িয়ে বেঁচে থাকা অর্থহীন। অনেক বেঁচেছি, এখন আমার যাওয়ার সময়। এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে যেতে চাই।” নিজের সিদ্ধান্তে কিন্তু অনড় ছিলেন আইনস্টাইন। পর দিনই মারা যান তিনি।
যে ঈশ্বরের অস্তিত্বে জীবদ্দশাতেই আঙুল তুলেছেন, জীবনের শেষ দৃশ্যেও তাঁকে থাকতে দেন নি আইনস্টাইন। মৃত্যুকেও শুধুমাত্র তাঁরই সিদ্ধান্ত মেনে আসতে হয়েছে।
হাজার হোক, তিনি-ই তো ‘ঈশ্বর’। আর তাই ঈশ্বর-পত্রের ঐশ্বরিক মূল্য যে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত, সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী নিলাম সংস্থাটিও।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.