শেষ মুহূর্তের পুজোর বাজার জমে উঠেছে। কেনাকাটায় হিড়িক পড়েছে। পুজোর দিন যত এগিয়ে আসার সঙ্গে বিশেষ করে ছুটির দিনগুলিতে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে বলে ব্যবসায়ী মহলের অনুমান। যদিও পুজোকে ঘিরে যে বাজার-অর্থনীতি তাতে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে বৃষ্টি। শনিবারের পরে রবিবার সকাল থেকে বহরমপুরের বৃষ্টি ব্যবসায়ীদের চিন্তায় ফেলেছে। জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদ্যোৎ দে বলেন, “পুজোর আর ২০ দিন বাকি! এই অবস্থায় বৃষ্টি কিছুটা হলেও বাজারে প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে শনি ও রবিবার ছুটির দিনে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় সামলানো যায় না। কিন্তু ওই দু’দিনই সকাল থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন।”
যদিও পুজোর অনেক আগে থেকে বাজার ধরতে হরেক রকমের পোশাকের সম্ভার নিয়ে খাগড়া এলাকায় যেমন ৮ হাজার স্কোয়ার ফুটের নতুন শো-রুম সেজে উঠেছে। সেখানে হাল ফ্যাশানের পোশাক কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ওই বাজারে লটারির মাধ্যমে আকর্ষণীয় পুরস্কারেরও অফার রয়েছে। আবার কোনও কোনও পোশাকের দোকান ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে গাড়ি পার্কিং-এর বিশেষ ব্যবস্থাও করেছে। তা সত্ত্বেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তা দখল করে সারি দিয়ে মোটরবাইক-গাড়ি রেখে দেওয়ার পাশাপাশি রিকশার দাপট সন্ধ্যার পর থেকে যানজটের ফাঁসে আটকে পড়ছে খাগড়া এলাকা।
এদিকে দশমীর তিন দিন পরে ইদুজ্জোহা! ফলে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের কেনাকাটায় বহরমপুরের বাজারে এখন উপচে পড়া ভিড়। কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “জেলার অর্থনীতির বুনিয়াদ শক্ত করে ওই উৎসব। তাতে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষও জড়িয়ে পড়েন। বাতাসে আগমণীর সুর বেজে ওঠে। তাই সারা বছর দুর্দিন আর অভাবের ঘরেও এই সময়টাই অন্য রকম।” নতুন পোশাক খুঁজে নেওয়ার তুমুল ব্যস্ততা কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণী ও গৃহিনীদের মধ্যে। ওই ব্যস্ততা থেকে পিছিয়ে নেই ব্যবসায়ী মহলও। বহরমপুরের ব্যবসায়ীরা একে অপরকে টেক্কা দিতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন।
বহরমপুরের বাসিন্দা অপর্ণা চন্দ্র বলেন, “এবার পুজোয় গিজা তসর চলছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রঙের মটকা শাড়ি, অসম সিল্ক, মেখলা সিল্কের পাশাপাশি ঐতিহ্যশালী সিল্ক হিসেবে পৈথানি, ইক্কত, মঙ্গলগিরি শাড়ি তো রয়েছে। তবে হালকা রংয়ের পশমিনা সিল্ক বাড়ির বয়স্ক মহিলা দারুণ পছন্দ করছেন।” নিজের জন্য কেনাকাটা ছাড়াও ইদুজ্জোহাকে সামনে রেখে পরিবার, আত্মীয়-পরিজনদের নামের তালিকা তৈরি করে কেনাকেটা করছেন গৃহবধূ জিনিয়া কাদের। তিনি বলেন, “ফোনে আগাম জেনে নিয়ে আত্মীয়পরিজনদের রুচি-পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করেছি।” তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহওয়ার কারণে তাঁরা এদিন কেউই বাজারে বের হতে পারেননি। এদিকে পুজোর বাজার ধরতে ছেলেদের পোশাক, মেয়েদের পোশাক, বাচ্চাদের জামাকাপড়, জিন্স-পাঞ্জাবী-খাদি, এই সব নানান সামগ্রীর পৃথক কাউন্টার থাকলেও ‘সব পেয়েছির আসর’ গোছের একই ছাদের তলায় পশরা সাজিয়ে বসেছেন বড় ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে পুজোর মুখে মঙ্গলবার বহরমপুরের সমস্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান খোলা থাকছে। খাগড়ার নামী ব্যবসায়ী শেখর মারুটি বলেন, “ক্রেতাদের হাতে সময় কম। দোকান ঘুরে কেনাকাটার চেয়ে একই দোকানে ঢুকে পুজোর বাজার সেরে নিতে চাইছেন অনেকে। তবে বৃষ্টি ছুটির দু’দিনের বাজার নষ্ট করে দিল। কোনও দোকানেই উপচে পড়া ভিড় ছিল না।” অনেকে আবার পুজোর মুখে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বেচাকেনায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মহাজনকে অর্ডার দিতেও ভরসা পাচ্ছেন না। যদিও পুজোয় সেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে! |