জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে আহতের পরিচয় জেনে তাঁর বাড়িতে খবর পাঠাতেই বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। আহতের পরিজনদের পৌঁছতে পৌঁছতে বয়ে যায় আরও খানিকটা সময়। তার উপরে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও অনেক ক্ষেত্রে চটজলদি পাওয়া যায় না।
এ-সব সমস্যার কথা মাথায় রেখেই জাতীয় সড়কগুলিতে দুর্ঘটনায় আহতদের প্রথম দু’দিন নিখরচায় চিকিৎসার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা যাতে আরও কমানো যায়, তার জন্যও বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে তারা। প্রথমে ‘পাইলট প্রকল্প’ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ চারটি রাজ্যে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। তার কার্যকারিতা দেখে পরে তা চালু হবে গোটা দেশেই।
টাকা আসবে কোথা থেকে?
সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে প্রকল্পের খরচ বরাদ্দ করবে ওই মন্ত্রকই। পরে বিমা সংস্থাকে দিয়ে এই কাজ করানো হবে। এর জন্য যে-কর্মী প্রয়োজন হবে, তাঁদের নেওয়া হবে নেহরু যুব কেন্দ্র থেকে। ওই সব কর্মীকে বলা হবে ‘স্বেচ্ছাসেবক’। বর্তমান ব্যবস্থায় দুর্ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর কথা জাতীয় সড়ক-কর্তৃপক্ষেরই। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় প্রশাসন বা আমজনতা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নতুন প্রকল্প চালু হলে আহতেরা অনেক তাড়াতাড়ি চিকিৎসার সুযোগ পাবেন বলে সড়ক পরিবহণ কর্তাদের দাবি।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে কাজ হবে কী ভাবে?
সড়ক পরিবহণ কর্তারা জানান, দূরত্ব হিসেব করে প্রতিটি জাতীয় সড়ককে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হবে। প্রতিটি ভাগেই থাকবে অ্যাম্বুল্যান্স। থাকবে উদ্ধারকারী গাড়ি বা ক্রেন। তাতে থাকবে হাইড্রোলিক কাটার ও হাইড্রোলিক জ্যাক। থাকবেন উদ্ধারকাজ ও প্রাথমিক চিকিৎসায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবক। দেওয়া হবে একটি করে ‘টোল-ফ্রি’ বা নিঃশুল্ক ফোন নম্বর। সেই নম্বরে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স ও উদ্ধারকারী ক্রেন বা গাড়ি দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। তারাই আহতকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে পৌঁছে দেবে। এই গোটা কর্মপদ্ধতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। তাতে ক্যামেরার সাহায্যে কন্ট্রোল রুমে বসে আহতকে উদ্ধারের পুরো প্রক্রিয়ায় নজর রাখা যাবে।
|
পথে বিপদ
|
২০১২
|
দুর্ঘটনার সংখ্যা
|
মৃত্যু
|
|
মে |
৩৫ |
১ |
জুন |
৮৮ |
৪ |
জুলাই |
৯০ |
৫ |
অগস্ট |
১০৯ |
৬ |
মুম্বই রোড (খড়্গপুর পর্যন্ত) ও দিল্লি রোড (ডানকুনি পর্যন্ত) |
|
মুম্বই রোড বা দিল্লি রোডে এখন অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা রয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। যাঁরা রাস্তা মেরামত বা তৈরির দায়িত্ব পান, এখন মূলত তাঁরাই ওই পরিষেবা দেন। কলকাতা-খড়্গপুর ১১১ কিলোমিটার রাস্তার দু’টি ভাগে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা আছে। কিন্তু ক্রেন সে-ভাবে আলাদা করে রাখা নেই। নেই কোনও আলাদা টোল-ফ্রি ফোন নম্বরও। যা আছে, তা এলাকা-ভিত্তিক সাধারণ ফোন নম্বর। সেখানে ফোন করেও অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা যায়। তবে নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।
নতুন প্রকল্প চালু হলে সত্যিই লাভ হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সড়ক মন্ত্রকের কলকাতার এক কর্তা। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটলে আহতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা যায় প্রথম দু’দিনই। ওই সময় টাকার প্রয়োজন হয়। প্রাথমিক ভাবে ওই দু’দিনের খরচের ব্যবস্থা করা গেলে তো বিরাট উন্নতি বলতে হবে। তার সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা টোল-ফ্রি ফোন নম্বর। এটারও প্রয়োজন খুব।”
শুধু মুম্বই রোডেই এখন মাসে কমবেশি ৫০টি দুর্ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে ৫-৬টি মারাত্মক। তাতে মৃত্যুও হচ্ছে। জাতীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের কলকাতা ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ার রাজা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুম্বই রোডে আগামী দু’বছরের মধ্যে ছ’টি লেন চালু হয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা কমাতে কলকাতা থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত ওই রাস্তায় ২১টি উড়ালপুল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তার সঙ্গে নতুন প্রকল্প যুক্ত হলে অনেকটাই উপকার হবে বলে কেন্দ্রের আশা। |