মিথ্যে মামলা সাজিয়ে দুই যুবক ও তাঁদের গাড়ির চালককে গ্রেফতার করার অভিযোগে বারাসত থানার তিন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন।
মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে বারাসত থানার ওই তিন সাব-ইনস্পেক্টর তাপস ঘোষ, আশিস দলুই ও মন্টুচন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তেরও সুপারিশ করেছে কমিশন। পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার তিন ব্যক্তির জন্য কুড়ি হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণও ধার্য করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত তাপস ঘোষের বেতন থেকে এর ৩০ হাজার টাকা দিতে বলেছে কমিশন। এই সুপারিশের চিঠি পাওয়ার পরে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা দু’মাসের মধ্যে কমিশনকে জানাতে হবে বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বালির বাসিন্দা রণজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে মানবাধিকার কমিশনের এডিজি রিপোর্ট দেন। তার ভিত্তিতেই কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় এবং অন্য দুই সদস্য বিচারপতি এন সি শীল এবং এস এন রায় রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে তিন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের যুগ্মসচিব সুজয়কুমার হালদার।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৫ এপ্রিল। রাজ্য মানবাধিকার কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তারিখের রাতে রণজিৎবাবু ও তাঁর বন্ধু রাজ ভট্টাচার্য গাড়িতে সল্টলেক থেকে বারাসত যাচ্ছিলেন। গাড়ির চালক ছিলেন তাপস বারুই। বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজের কাছে পৌঁছে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে তাঁরা গাড়ি থামিয়েছিলেন। অভিযোগ, ওই সময়ে তাঁরা নাকি রাস্তায় দাঁড়িয়ে মদ্যপান করছেন বলে বারাসত থানার এসআই তাপস ঘোষ, আশিস দলুই এবং আরও কয়েক জন পুলিশ তাঁদের গালিগালাজ করতে থাকেন। পুলিশ তাঁদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকাও দাবি করে বলে রণজিৎবাবু তাঁর অভিযোগে মানবাধিকার কমিশনকে জানিয়েছেন।
রণজিৎবাবুর অভিযোগ, পুলিশকে টাকা না দেওয়ায় তাঁদের গ্রেফতার করে বারাসত থানার লকআপে পুরে দেওয়া হয়। তখন থানার ডিউটি অফিসার ছিলেন এসআই মন্টুচন্দ্র মণ্ডল। পরের দিন সকালে জামিন পান ধৃতেরা। কমিশনে রণজিৎবাবুর অভিযোগ, এক মুহুরির মাধ্যমে পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা নেয়।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশনের এডিজি-কে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। কমিশন সূত্রে খবর, তদন্তে জানা যায়, রণজিৎবাবুদের গ্রেফতারের সময় কোনও নিয়ম মানেনি পুলিশ। গ্রেফতারের পরে ধৃতদের কোনও মেডিক্যাল পরীক্ষাও করা হয়নি। অথচ রাস্তায় দাঁড়িয়ে মদ্যপান করার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। কীসের ভিত্তিতে এই অভিযোগ আনা হল, তার কোনও সন্তোষজনক জবাব মেলেনি পুলিশের কাছ থেকে। এ ছাড়া, কোনও গ্রেফতার মেমোও দেয়নি পুলিশ। গ্রেফতার করার পর পুলিশের পক্ষ থেকে রণজিৎবাবুদের বাড়িতে কোনও খবর দেওয়া হয়নি। তাঁদেরও বাড়িতে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি বলে এডিজি-র তদন্তে জানা গিয়েছে।
এডিজি রিপোর্টে জানান, তিন এসআই তাপস ঘোষ, আশিস দলুই ও মন্টুচন্দ্র মণ্ডল ধৃতদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন ও মিথ্যে মামলা দায়ের করে বেআইনি ভাবে আটকে রাখেন। তদন্তের সময়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসাররা রণজিৎবাবুদের বিরুদ্ধে মদ্যপানের অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
|
সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাস খুনের ঘটনায় চার্জশিট দিল সিআইডি। শনিবার বনগাঁ আদালতে দাখিল করা ১০০ পাতার চার্জশিটে গণধর্ষণ কাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সুশান্ত চৌধুরী-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ৫ জুলাই গোবরডাঙা রেল স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে দুষ্কৃতীরা স্কুল শিক্ষক বরুণবাবুকে গুলি করে খুন করে। সেই ঘটনার ৮৭ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা পড়ল। বনগাঁ আদালতের সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, “চার্জশিটে নাম থাকা ১০ জনের মধ্যে ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। বাকি তিন জন পলাতক। মামলায় ৫২ জনকে সাক্ষী করছে সিআইডি। কিছু দিনের মধ্যেই শুনানি শুরু হবে।” |