পার্সেল বোমা ফেটে নিহত চৈতালি সাঁতরার মোবাইলে দু’টি অচেনা ফোন এসেছিল বিস্ফোরণের দিন কয়েক আগে। একই দিনে নয়, দু’দিনে। একটি ক্যুরিয়ার সংস্থার নাম করে বলা হয়েছিল, চৈতালির নামে একটি পার্সেল আছে। সেটি তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রথম দিন হাওড়া ময়দানে ও পরের দিন বটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে এসে পার্সেলটি নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল চৈতালিকে। দ্বিতীয় বার ফোন আসে বিস্ফোরণের আগের দিন। সিআইডি-র জিজ্ঞসাবাদে এমনটাই জানিয়েছেন মৃতার মেয়ে শতাব্দী।
তার পর কে বা কারা পার্সেল পৌঁছে দিয়ে যায় সাঁতরা বাড়িতে, এখনও তা স্পষ্ট নয়। গোয়েন্দাদের আশা, ওই দু’টি ফোন-কল থেকে হত্যা-রহস্যের কোনও সূত্র বেরোতে পারে। সিআইডি-র ডিআইজি শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “নিহতের মোবাইলের কল-তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
চৈতালির স্বামী হিমাংশু পুলিশকে বলেছেন, পার্সেলে প্রেরকের নাম-ঠিকানা না থাকায় তিনি স্ত্রীকে সেটি না খুলে পুলিশকে খবর দিতে বলেন। কিন্তু সে কথা কানে নেননি চৈতালি। বিস্ফোরণের সময় ওই ঘরেই ছিলেন হিমাংশু। শরীরে ৮৭ শতাংশ পোড়া ক্ষত নিয়ে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন তিনি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চৈতালি একাধিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। সেগুলির কল-তালিকা খুঁটিয়ে দেখে সূত্র বার করার চেষ্টা চালাচ্ছে সিআইডি। এক গোয়েন্দা-কর্তা বলেন, “কবে, কখন ওই দু’টি কল চৈতালির ফোনে এসেছিল, তা বলার মতো অবস্থায় নেই তাঁর মেয়ে শতাব্দী। মাকে হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের শতাব্দীর সঙ্গে কথা বলবে সিআইডি।
গত বছর মালদহে এক শিক্ষিকাকে খুন করতে অপরাধীরা পার্সেল বোমা ব্যবহার করেছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, টেলিফোন রিসিভার রাখার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ১০০ টাকারও কমে ওই বিস্ফোরক বানিয়েছিল তারা। এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, “যে পার্সেল বোমায় চৈতালির মৃত্যু হয়েছে, তাতে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট ও ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে।” তিনি জানান, ২০০৮-এর জানুয়ারিতে কলকাতার শেক্সপিয়র সরণিতে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তাতে একটি গাছ দু’ভাগ হয়ে যায়।
ওই বিস্ফোরণের সঙ্গে হাওড়ার অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
মালদহ ও হাওড়ার ঘটনার পরে সিআইডি-র একাধিক কর্তার ধারণা, অতীত অপরাধের রেকর্ড নেই এমন লোকও বিস্ফোরক বানিয়ে ফেলছে অনায়াসে। এক গোয়েন্দা-কর্তা বলেন, “এত কম খরচে বিস্ফোরক তৈরির প্রযুক্তি জেনে গেলে ছোটখাটো জঙ্গি গোষ্ঠীও ওই কৌশল নিতে পারে। পরিত্যক্ত কোনও মোবাইল কিংবা রেডিও চালু করতে গেলেও হতে পারে বিস্ফোরণ।” একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও বিধ্বংসী বিস্ফোরক তৈরি সম্ভব বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। এটাই এখন পুলিশের মাথাব্যথা। |