শুরুর আগেই শেষ!
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ভিত্তিতে ২০১২ সালের মধ্যে বারকোড-যুক্ত ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু করার কথা। কিন্তু টাকার অভাবে রাজ্যে ওই প্রকল্প বাতিল হওয়ার মুখে। আর তার জেরেই ধাক্কা খেতে বসেছে ভুয়ো রেশন কার্ড ঠেকানোর উদ্যোগ।
না-জন্মাতেই ওই প্রকল্পের মৃত্যুঘণ্টা কেন? কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রকল্পের মোট খরচের অর্ধেক দেবে তারা। বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ জোগাতে হবে রাজ্য সরকারকে। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পের মোট খরচের ১০ শতাংশের বেশি দিতে পারবে না। ফলে অন্তত এ রাজ্যে গোটা প্রকল্পেরই ভবিষ্যৎ নিয়ে ঘোর সংশয় দেখা দিয়েছে। আর এই ব্যবস্থা চালু না-হলে ভুয়ো রেশন কার্ডের রমরমা বন্ধ করা কঠিন।
নয়া রেশন কার্ড চালু করার উদ্যোগ থেকে রাজ্য পিছিয়ে আসছে কেন?
প্রাথমিক ভাবে রাজ্য সরকার ঠিক করেছিল, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যে বারকোড-যুক্ত ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু করবে। খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে এখন মোট ন’কোটি চার লক্ষ রেশন কার্ড রয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “ইতিমধ্যেই ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রকল্পের খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তার উপরে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, ওই প্রকল্পের খরচের অর্ধেক দিতে হবে রাজ্যকে। যা আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব না।” তিনি জানান, রাজ্য বড়জোর ওই প্রকল্পের মোট খরচের ১০ শতাংশ দিতে পারে। কেন্দ্র বাকি ৯০ শতাংশ টাকা না-দিলে রাজ্যের পক্ষে প্রকল্প রূপায়ণ করা সম্ভব নয়।
গণবণ্টন ব্যবস্থায় বৈদ্যুতিন পদ্ধতি চালু করার দায়িত্ব পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল ইনফর্মেটিক সেন্টার বা এনআইসি। ওই সংস্থার এক কর্তা জানান, ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরির কাজে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের মঞ্জুরি মিলেছে। প্রাথমিক ভাবে ওই প্রকল্পের মোট খরচের ৫০ শতাংশ দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। জাল রেশন কার্ড রুখতে এই ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীও মনে করেন, ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু করতে না-পারলে ভুয়ো রেশন কার্ড বন্ধ করা সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, “বিগত দেড় বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। রাজ্যে এখনও প্রায় ৭০ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে।” চলতি বছরের ১ জুন থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে রাজ্যের দু’টি জেলায় দু’টি রেশন দোকানের এলাকায় ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু করার কথা ছিল। সেই কাজ শুরুও হয়। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই কাজ শেষ হয়নি। ফলে ওই কার্ড কাউকে দেওয়া যায়নি।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, যে-সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানোর কথা ভাবা হয়েছিল, তাদের হিসেব অনুযায়ী গোটা রাজ্যে এই কাজ শেষ করতে খরচ পড়বে ৩১৮ কোটি টাকা। অথচ প্রাথমিক ভাবে খরচ ধরা হয়েছিল ২৯১ কোটি টাকা। ওই সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, কাজের বরাত দিতে যত দেরি হবে, খরচ তত বাড়বে।
এই অবস্থায় জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানিয়ে দিয়েছেন, পঞ্চায়েত দফতর নতুন বিপিএল (দারিদ্রসীমার নীচের বাসিন্দাদের) তালিকা দিলে খাদ্য দফতর ফের কাগজের বিপিএল কার্ডই দেবে। |