|
|
|
|
|
|
|
একটা [ভয়] কষ্ট লজ্জা ঘেন্না |
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়
|
আচ্ছা ওরা কি সত্যিই আমার দিকে তাকাচ্ছে? না নিজেরা গল্প করছে? আমি তো টাইট গেঞ্জি পরিনি! আমি তো প্রোভোক করিনি। তা হলেও কি...
রেলের কামরা ফাঁকা বলেই কি ওরা আমার দিকে এ রকম করে দেখছে? আমার নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে বার বার, অপমানে কান গরম, চোখ দিয়ে জল গড়াল বলে, গলার কাছটা দলা পাকিয়ে উঠছে, শিরা-উপশিরাগুলো বোধ হয় সব জড়িয়ে গিঁট্টু পাকিয়ে গেল। আমার যে ভীষণ ভয় করছে! কী করব আমি? আমি কেন বারুইপুর থেকে বালিগঞ্জের এই ফাঁকা কামরায় উঠতে গেলাম? কী দরকার ছিল? আজকের রাতটা থেকে গেলে কী হত? ওরা কত করে বলল। তবে রাত তো বেশি হয়নি। নটা দু’য়ের ট্রেন, লাগবে মাত্র আধ ঘণ্টা।
ছেলেগুলোকে দেখে তো লোফার বলে মনে হচ্ছে না! তবু কি ওরা আমায় হ্যারাস করতে পারে? আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে কেন? ঠিক যে ভয়টা করেছিলাম সবুজ গেঞ্জি এ দিকেই আসছে কেন? আচ্ছা, আমার গায়ে যদি হাত দিতে চায়, তা হলে আমি আটকাব কী করে? আমি কি তবে দরজার কাছে দাঁড়াব? লাফিয়ে পড়লে কি খুব লাগবে? আমি কি মরে যেতে পারি? জীবন বড় না সম্মান বড়?
সবুজ গেঞ্জি আমার পাশের জানলা দিয়ে স্টেশনের নাম দেখে চলে গেল। ওরা কি বুঝতে পেরেছে যে আমি ভয় পেয়েছি? মা, আমি তোমার বীরাঙ্গনা নই। আমি খুব ভীতু, মা। হে ঠাকুর, এই অনন্ত সময়টা কাটিয়ে দাও। আর কখনও রাতে একা বেরোব না। ওরা ‘রূপ তেরা মস্তানা’ গাইছে কেন? এটা কি কোনও ইঙ্গিত? ঠিক হ্যায়... আমি প্রস্তুত। এক বার তো ফাইট দেবই। চিন্তা কোথায়? ও দিকের বুড়ো লোকটার পাশে গিয়ে বসব? ভীষণ বাথরুম পেয়েছে। উঠতেও পারছি না। পা দিয়ে ঘাম গড়াচ্ছে। আমি জানলায় মুখটা চেপ্পে ধরে রেখে দিয়েছি। বেশ বুঝতে পারছি, ওরা আমার দিকে তাকিয়েই হাসছে। পাঞ্জাবি-পাজামা পরা ছেলেটা হঠাৎ উঠে এসে কেন উল্টো দিকের সিটে বসল? ও.কে... ফাইন... তা হলে সময় আগত...
আমি এত ভয় পাচ্ছি কেন? আমায় যে বাড়িতে ‘ছোট মস্তান’ বলে? আমি যে বাসে একটা ছেলেকে চড় মেরেছিলাম অন্য একটা মেয়েকে জ্বালাচ্ছিল বলে? আমায় যে সবাই নারীবাদী বলে খোঁটা দেয়? ও! তার মানে আমিও সেই মেয়েটাই যে নিজের ইজ্জত নিয়ে সমান ইনসিকিয়োর? না কি, এই ভয়টা আমার পাওয়ারই কথা?
অনেক মেয়েরই তো এ রকম হয়, না? তারাও তো বেঁচে থাকে। আর আমার মা-বাবু নিশ্চয়ই বুঝবে। ওরা আমাকে ফেলে দেবে না। ব্যস, আর একটা স্টেশন। ঠাকুর, তুমি এটুকু পার করে দাও।
ট্রেনটা দাঁড়াল। সবাই নেমে গেল কামরা থেকে। ছেলেগুলো আমার দিকে তাকিয়ে প্রচণ্ড হাসছে। ওরা তার মানে বুঝতে পেরেছে, আমি ভয় পেয়েছি? সবুজ গেঞ্জি পিছন ফিরে আমায় টা টা করে চলে গেল। ওরা জিতে গেল। আমায় সাকসেসফুলি ভয় দেখাতে পেরেছে বলে।
আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়ায় ব্যস্ত ছিলাম। আমার গায়ে কেউ হাত দেয়নি। কেউ জ্বালায়নি। আমার হ্যারাসমেন্ট হয়নি। কিন্তু হলও তো! একটা গভীর ক্ষত। একটা নাছোড় ভয় বছর পনেরো বাদেও আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। যদি ওরা কিছু করত? |
|
|
|
|
|