পুজোর বাজেটে এ বার আলাদা করে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে গয়নাও। উৎসবের মরসুমে নতুন জামা-জুতো কেনা বা বেড়ানোর জন্য যে ভাবে বোনাস বা সারা বছরের জমানো টাকা তোলা থাকে, ঠিক তেমনই করে গয়না কিনতে কিছু টাকা তুলে রাখার চল বাড়ছে এই রাজ্যে। আর সেই ব্যবসার গন্ধেই উৎসবের মরসুমের বাজার ধরতে ঝাঁপাচ্ছে গয়না শিল্প। বাঙালির পুজোর বাজেটে ভাগ বসাতে নতুন নক্শা আর ছাড়ের জোড়া কৌশল নিচ্ছে তারা।
শুধু সোনার গয়নাই নয়। উৎসবের মরসুমে বাজার ধরতে দোকানগুলির শো-কেসে ঠাঁই পাচ্ছে হিরের গয়নাও। তাদের লক্ষ্যও শুধু দুর্গা পুজো নয়। বরং তার হাত ধরে শুরু হয়ে যাওয়া বছরের শেষ তিন মাস জুড়ে উৎসবের মরসুম। কারণ, দীপাবলি, ধনতেরাস-এ গয়না কেনার ‘অবাঙালি চল’ এখন রপ্ত করে ফেলেছে বাঙালিও। বাড়ছে উপহার হিসেবে গয়না দেওয়ার রেওয়াজও। এই লোভনীয় বাজারকে কব্জা করার লক্ষ্যেই সোনার পাশাপাশি হিরের গয়নাও সাজিয়ে রাখছে গয়না সংস্থাগুলি।
ক্রেতাদের পছন্দ আঁচ করে বদলাচ্ছে নক্শাও। তৈরি হচ্ছে নতুন নক্শার হালকা গয়না। এম পি জুয়েলার্স-এর রুদ্র রায়চৌধুরির দাবি, গত পাঁচ বছর ধরেই এই চল বেড়েছে। এই সময় ছোট ও হালকা গয়নার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। তিনি বলেন, “এ কথা মাথায় রেখেই ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দামের গয়না তৈরি করি। মজুরি ও রত্নে ছাড়ও দেওয়া হয়। এই কৌশলে বিপুল সাড়া মিলেছে।”
উপহার হিসেবেও গয়নার বাজার বাড়ছে ভারতে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, বছরে সেই ব্যবসার অঙ্ক প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ রাজ্যেও ছবিটা একই।
হিরের গয়না এনে সেই বাজার দখল করতে চায় রিও টিন্টো। সংস্থার অন্যতম কর্তা প্রেমজিত সেনগুপ্ত জানান, শুধু বিয়ে বা অনুষ্ঠানে নয়। পুজোর মরসুমেও হিরের গয়নাকেই বাজি ধরছে তারা। দাম ধরা থাকছে ৫ থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে। অবশ্য সংস্থার দাবি, খুচরো ব্যবসায় নামার কোনও পরিকল্পনা নেই। বরং তাদের হিরে দিয়ে গয়না তৈরি করবেন কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহরের ব্যবসায়ীরা। রাজ্যে আপাতত ১০টি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে তারা। রাজ্যে ৫০টিরও বেশি দোকানে মিলবে নজরানা-গয়না। সারা দেশে এমন দোকানের সংখ্যা হবে ১৪০টি।
শুধু শহর কলকাতা নয়। গয়নার দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন আসানসোল, দুর্গাপুর ও শিলিগুড়ির মতো দ্বিতীয়-স্তরের শহরের বাসিন্দারাও। বাড়ছে ব্র্যান্ড নামের কদর॥
প্রতিযোগিতায় নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে স্থানীয় চাহিদা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলি। অঞ্জলি জুয়েলার্সের অনর্ঘ চৌধুরির দাবি, হাল ফ্যাশনের হালকা গয়নার বাজারে তাঁর সংস্থা নিজস্ব একটা জায়গা করে নিয়েছে। কারণ, উৎসবের চাহিদা মাথায় রেখে নতুন ধরনের গয়না তৈরির চল অনেক আগেই শুরু করেছেন তাঁরা। |