|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
বংশী চন্দ্রগুপ্ত ব্রাত্য কেন |
শিলাদিত্য সেন |
অঞ্জন দত্ত মমতাশঙ্করের বিয়েটা কি ভালবাসার না বাপ-মায়ের দেওয়া? খারিজ-এ সেট তৈরির সময় শিল্প-নির্দেশক নীতীশ রায়ের এমন প্রশ্ন শুনে মৃণাল সেন তো অবাক। অঞ্জন-মমতা ওই ছবিতে দম্পতি, এটুকুই যথেষ্ট নয় কি? ‘না’, জানালেন নীতীশ। মধ্যবিত্ত দম্পতির ঘরে বাপ-মায়ের দেওয়া দামি ভারী সাবেকি ডিজাইন-এর (বউবাজার থেকে কেনা) আসবাবপত্র থাকলে এক রকম চেহারা। আবার ভালবেসে বিয়ে করলে আর এক রকম চেহারা। দম্পতিটি তাদের পছন্দমতো হালফিল ডিজাইন-এর আসবাবে ঘর সাজাবে, কিন্তু প্রয়োজনের বাইরে কিছু কিনবে না, মিতব্যয়ী হবে খরচের ব্যাপারে। ঘটনাটা জানা গেল আর্ট ইন আর্ট ডিরেকশন/ আ বায়োগ্রাফি অব নীতীশ রায় (দেবাদিত্য দত্ত। দীপ, ১৫০০.০০) থেকে। ইংরেজি হলেও সম্ভবত এই প্রথম কলকাতা থেকে এক শিল্প-নির্দেশককে নিয়ে এমন বই বেরল। খারিজ ছাড়াও মৃণাল সেনের খণ্ডহর, জেনেসিস-এ কাজ করেছেন নীতীশ। মৃণালবাবুর যোগাযোগেই শ্যাম বেনেগাল পান তাঁকে। মাণ্ডি, ত্রিকাল, সুসমান, সূরয কি সাতয়াঁ ঘোড়া বেনেগালের এই কাহিনিচিত্রগুলির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ তথ্যচিত্র ‘নেহরু’ বা নেহরুর ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’তেও কাজ করেছেন নীতীশ। বেনেগাল এ-বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন যে, বংশী চন্দ্রগুপ্তের আকস্মিক মৃত্যুতে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তিনি বা তাঁর মতো চলচ্চিত্রকারেরা যখন এক শিল্পবোধসম্পন্ন সংবেদনশীল শিল্প-নির্দেশকের খোঁজে ছিলেন, ঠিক তখনই এলেন নীতীশ। গোবিন্দ নিহালানির পার্টি, আঘাত, দৃষ্টি, তমস; কুমার সাহানির চার অধ্যায়, কসবা; মীরা নায়ারের সালাম বম্বে; রমেশ শর্মার নিউ দিল্লি টাইমস এ রকম বহু গুরুত্বপূর্ণ ছবি এবং চাণক্য, মির্জা গালিব-এর মতো টিভি সিরিয়ালে কাজ করেছেন তিনি। সহকারী হিসেবে তাঁর কাছে কাজ শিখেছেন সমীর চন্দ ও নীতীন দেশাইয়ের মতো শিল্প-নির্দেশকেরা। তাঁর প্রতিটি ছবি বা সিরিয়ালের সেট ডিজাইন-এর রেখাচিত্র ও স্থিরচিত্রে অলংকৃত গোটা বইটি। যাতে যে কোনও পাঠকই ছবি তৈরির পিছনে শিল্প-নির্দেশকের নৈপুণ্য দক্ষতা ও মননটুকু চিনতে পারে। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে এমন প্রাপ্তির জন্যে যেমন প্রসন্ন লাগে, তেমনই মনখারাপ হয়ে যায় বংশী চন্দ্রগুপ্তের কথা ভেবে। তাঁকে নিয়েও তো এমন একটি বই হওয়া উচিত ছিল। বাঙালির আজও এত গর্ব পথের পাঁচালী নিয়ে; সত্যজিৎও বলেছেন ‘শিল্প-নির্দেশনায় বংশীর সমকক্ষ ভারতবর্ষের চলচ্চিত্র ইতিহাসে আর কেউ হয়েছে বলে আমার মনে হয় না...’; এমনকী কল্পনির্ঝর, চিত্রভাষ, প্রসঙ্গ চলচ্চিত্র-এর মতো ফিল্ম সোসাইটির পত্রপত্রিকায় তাঁকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা করা হয়েছে। তবু কলকাতা থেকে কোনও প্রকাশকই এগিয়ে এলেন না বংশীকে নিয়ে বই করার ব্যাপারে। ভারতীয় সিনেমার শিল্প-নির্দেশনায় পথের পাঁচালী যে পথিকৃৎ ছিল আর তা ঘটেছিল বংশীর হাতে, সে ইতিহাস অধরাই থেকে গেল। |
|
|
|
|
|