নাটক সমালোচনা...
যুদ্ধের পরেও শেষ হয় না যুদ্ধযাপন
হুরূপীর ‘নানা ফুলের মালা’ মহাভারতের কাহিনি। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে মহাভারতের ভূখণ্ড ছিল নানা রাজ্যে বিভক্ত। নায়ক দুর্যোধন মনে করেন প্রতিটি রাজ্য তার নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয়ে সবার সম্মান নিয়ে সবার পাশে থাকুক। তাই এক শবর কন্যার গাঁথা একটি নানা ফুলের মালা তাঁর ভাল লাগে। এ যেন এই ভূখণ্ডের রাজনৈতিক শক্তিবিন্যাসের প্রকৃত প্রতীক। কিন্তু পাণ্ডবদের রাজসূয় যজ্ঞ গোটা ভূখণ্ডের কোনও এক রাজাকেই রাজচক্রবর্তী বলে প্রতিষ্ঠিত করাতে তার বিরোধিতা। দ্বৈপায়ন হ্রদের তীরে পরাজিত, নিঃসঙ্গ এই দুর্যোধনকে নতুন চোখে দেখার চেষ্টা এই নাটকে।
এই নাটকের দুর্যোধন প্রমাণ করে বাংলা থিয়েটার কতটা জীবন্ত। পুরনো ছাঁচ ভেঙে সম্পূর্ণ নতুন এক দুর্যোধনকে প্রতিষ্ঠা করেছে বহুরূপী। দেবতার সন্তান পাণ্ডবদের সামনে একা দুর্যোধনের বহুস্বরের ধর্ম রক্ষার লড়াই নতুন এক মহাকাব্যিক ভাষ্য তৈরি করে নাটকে। যুদ্ধের পরেও যুদ্ধযাপন করেন তিনি। তাঁকে কেন্দ্র করে রচিত হয় মায়ার আবরণ। এই নাটকে তিনি যেন ছুঁয়ে যান কর্ণকে। এই দুর্যোধন মনে করিয়ে দেন মেঘনাদকে।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে ব্যাসের হাত ধরে রাষ্ট্রের যে রূপের কথা ভেবেছেন দুর্যোধন, ক্রমশ সেই ভাবনায় প্রাণিত হচ্ছেন যুধিষ্ঠিরও। ব্যাস যুধিষ্ঠিরকে বলেছেন নানা ফুলের মালাটি কোনও একটি সূত্রে বাঁধা। প্রেম, ধৈর্য ও সহ্যক্ষমতা। পাণ্ডব শিবিরে অশ্বত্থামার ধ্বংসকাণ্ডের পরে যেন কলিঙ্গ যুদ্ধের পরের ধর্মাশোকের মতোই অদৃশ্য টলারেন্সকেই স্বীকার করে নেন মহাভারতের ভূখণ্ডের অভিভাবক। যুধিষ্ঠিরের কাছে এই টলারেন্সের প্রতীক হয়ে ওঠেন জননী কুন্তী।
এই নাটকে বলা হয়, কুন্তীর সন্তানেরা প্রেমের সন্তান প্রণয়জাত। দুর্যোধন বলেছিলেন, পাণ্ডবেরা জারজ সন্তান। যুধিষ্ঠির আবিষ্কার করেন, তাঁরা সত্যকুলজাত। তাই কুন্তীর মধ্যেই যুধিষ্ঠির খুঁজে পাচ্ছেন দেশমাতৃকাকে। যিনি বহুস্বর ধারণ করেন সমান স্নেহে। তাই তাঁকেই যুধিষ্ঠির অর্পণ করেন মালাটি। সমকালের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত গভীর এই বিষয়টিকে মুনশিয়ানায় বেঁধেছেন নাট্যকার অলখ মুখোপাধ্যায়। নাট্য প্রকল্পনা তারাপদ মুখোপাধ্যায়ের। এ নাটকের নির্দেশক দেবেশ রায়চৌধুরী। অভিনয়ে এবং নির্দেশনায় তিনি অন্যন নজির গড়েছেন এমনই ধারণা দর্শকদের। নিরাভরণ মঞ্চকে ভরিয়ে রেখেছেন দুর্যোধন (পার্থ গোস্বামী) তাঁর বলিষ্ঠ অভিনয়ে। ভীমের (কল্যাণ আঢ্য) গদার আঘাতে ভগ্ন-ঊরু দুর্যোধনের শরীরী অভিব্যক্তি অবিস্মরণীয়। অন্যান্য ভূমিকায় গৌতম চক্রবর্তী (শবর), মনোজ গঙ্গোপাধ্যায় (কৃষ্ণ), অমিয় হালদার (যুধিষ্ঠির), তুলিকা দাস (কুন্তী) এবং আবহে ময়ূখ-মৈনাক যথাযথ। আলোয় জয় সেন। ভাল লাগে শেষ দৃশ্যের কম্পোজিশনটি। নানা চরিত্রকে পরিক্রমা করে যুধিষ্ঠিরের হাত থেকে নানা ফুলের মালাটি সমর্পিত হচ্ছে কুন্তীর পায়ে। মৃত প্রাণেরা আবহের তালে তালে উঠে দাঁড়াচ্ছে। অসাধারণ দৃশ্য। যেন অভাবনীয় অনুভব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.