শনিবারের নিবন্ধ
বলছি তোমার কানে কানে
খুব ছোট্ট কিছুর অভিঘাতও মারাত্মক রকম বড় হতে পরে। অনেকটা ওই বিন্দু দিয়ে সিন্ধু তৈরির গল্পের মতো। কিন্তু ওই ছোট বিন্দুটি মিস্ হলেই পুরো সিন্ধু চৌপাট। যেমন, ষষ্ঠীর সকালে আপনার কানের লতি থেকে রাগী মুখ করে একটা ছোট্ট পাখি না তাকালে আপনার সাজটা এক্কেবারে সেকেলে। কিংবা সপ্তমীর সকালে টাঙ্গাইল শাড়ির আভিজাত্যের সঙ্গে কানে মানানসই জোড়া লক্ষ্মীপেঁচা। বাকি অষ্টমী, নবমী আর দশমীতেও সাজে হিট হতে গেলে কানের দুল পছন্দের ক্ষেত্রে আপনাকে হতেই হবে অফবিট।

নবীনা বনাম প্রবীণা
এ নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডায় মশগুল একদল কলেজ সুন্দরীর শরণাপন্ন হতেই হইহই করে উঠল ওঁরা। শ্রী বললেন, “দুল নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের বেস্ট সময় পুজো। টানা চারদিন বেরোনোর প্ল্যান থাকবে। ভারী দুলে কানে ব্যথা হয়, তাই একদম বাদ। বরং হাল্কা, কিন্তু দেখতে অনন্য দুলই সাজটাকে কমপ্লিট করে তোলে।” মানালি জানালেন, আনারকলি সালোয়ারের সঙ্গে প্রত্যাশিত ভাবে সকলেই সোনার বা রূপোর ঝুমকা পড়ে। তাই সকলের থেকে আলাদা হতেই তিনি অফবিট ডিজাইনের অক্সিডাইসড্ ঝুমকা ট্রাই করবেন।
তবে চমকে দিলেন স্বামীর সঙ্গে কফি খেতে আসা পাশের টেবিলের বছর চল্লিশের ইন্দ্রাণী। জানালেন, প্রথমে মেয়ে একজোড়া অ্যাঙ্গরি বার্ড দুল কিনে এনেছিল নিজের জন্য। শখ করে কানে পরতেই তাঁরও চট্ করে ভাল লেগে গেল। ঠিক করে ফেললেন নতুন কেনা শিফন শাড়ির সঙ্গে পুজোয় ওটাই পরবেন। কথা কেড়ে নিয়ে ইন্দ্রাণীর কর্পোরেটে চাকুরিরত স্বামী বললেন, “এখনও ইন্দ্রাণীর সাজে এমন এক্সপেরিমেন্ট দেখলে মনে হয় নতুন করে ওর প্রেমে পড়ে যাই।” ভাবুন একবার কানের দুলের এমন গুণ যে মুখের শোভাই বদলে যায়। নতুন করে প্রেমে পড়তে পারে পুরনো বরও।

বাজার কী বলছে
নিউ মার্কেট চত্বরের এক জুয়েলারি শপের মালকিনের কথায়, শুধু পনেরো থেকে পঁচিশেরাই নয়, হাল্কা কিন্তু অফবিট দুলের চাহিদা রয়েছে মধ্যবয়সিদের মধ্যেও। বিশেষ করে নানা মোটিফ-সহ দুলের চাহিদাই বেশি। মোটিফের মধ্যে গণেশ, পেঁচা, তালা-চাবি, কাঁচি, পাখি, মাছ, বিছে, প্রজাপতি, ফুল এবং জ্যামিতিক নকশার দুল বিকোচ্ছে দেদার। আর সোনা বা রুপোর যা দাম, মধ্যবিত্তের পুজোর বাজেটে পোষাবে না। তাই কম বাজেটে স্টাইলিশ লুক আনতে এখন জাঙ্কের বাজারই তুঙ্গে। গড়িয়াহাটের এক গয়নার দোকানের মালিক জানালেন, রুপোলি পর্দার চরিত্রদের সাজ দেখে পোশাক-গয়না ম্যাচ করে পরার রেওয়াজ বহু দিনের। আর ইদানীং সিরিয়াল-সিনেমায় জাঙ্ক জুয়েলারির ব্যবহার যথেষ্ট বেশি হচ্ছে। ফলে বয়স্কা নারীরাও তাঁদের কাছে ওই নতুন ধরনের কানের দুল চাইছেন। চাহিদা বেশি থাকায় আর্টিফিসিয়াল গয়নার দোকানের মালিকেরা চেষ্টা করছেন ডিজাইনে বৈচিত্র আনতে। কারণ সোনা-রুপোর মতোই জাঙ্ক জুয়েলারির বাজারও এখন যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক। এ ধরনের দুলগুলোর দাম সাধারণত ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে হওয়ায় কলেজ-ছাত্রী ছাড়া স্কুল-পড়ুয়াদেরও পকেট ফ্রেন্ডলি হয়।

সস্তায় বাজিমাত
বারো ক্লাসে পড়া মেয়ে এষাকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে পুজোর কেনাকাটা সারতে এসেছিলেন সুস্মিতা। সুস্মিতা বললেন, “একটা ফ্যাশন ম্যা গাজিনে প্রথম দেখি ময়ূরের পালকের কানের দুল। খুব ভাল লেগেছিল। এখানে এসেই কিনে ফেললাম। আমি তো অষ্টমীর দিন শাড়ির সঙ্গে পরবই, মেয়ে বলছে ওর নবমীর জন্য কেনা শর্ট স্কার্টের সঙ্গেও নাকি দারুণ মানাবে ওই দুলটাই। এক বাজেটে দু’জনেরই সমস্যা মিটে গেল।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী স্বপ্নালী কানের দুল বাছতে বাছতে জানালেন, পুজোয় তিনি বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে সারা রাত ঠাকুর দেখতে বেড়ান। বেশি রাতের দিকে ভিড়টাও বাড়ে। দামি দুল পরলে ছিনতাই হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। এই ধরনের দুল পরলে চুটিয়ে সাজাও হয় আর নিশ্চিন্তে ঘোরা যায়।

তারাদের কথা
অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় বললেন, “আমি নিজে জাঙ্ক জুয়েলারির মধ্যে কানের দুল ভীষণ ভালবাসি। শু্যটিংয়ে, পার্টিতে ড্রেসের সঙ্গে ফিউশন করে জাঙ্ক জুয়েলারি পরি। বিশেষ করে যে সব গয়নায় পেঁচার মোটিফ থাকে সেগুলো আমার খুব পছন্দের। আমার নিজের কালেকশনে এর অনেকগুলো ভ্যারাইটি রয়েছে। আর এখন তো গয়নার অফবিট ব্যবহারটাই ফ্যাশন। সোনা বা রুপোর রক্ষণাবেক্ষণে যতটা সময় দিতে হয় তার অর্ধেকও এর জন্য লাগে না।”
জুয়েলারি আর্টিস্ট ইনা অলুওয়ালিয়ার কথায়, ডিজাইন যদি অভিনব হয়, তা হলে আজকের মেয়েরা সোনা-রুপোর বদলে অন্যান্য কম দামি সরঞ্জামে (কাপড়, লোহা, তামা, বেত, কাঠ, পাট, পোড়া মাটি) তৈরি দুলও যথেষ্ট পছন্দ করে। আর এগুলি দেখতেও যথেষ্ট সুন্দর লাগে। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে রেসিন আর পিতল ব্যবহার করে বেশ কিছু দুল তৈরি করেছেন, যেগুলো যথেষ্ট ভাল সাড়া পেয়েছে। ওঁর তৈরি ডিজাইনের দুল কিনতে হলে যান www.boticca.com/einaahluwalia-এই সাইটে।
সময়ের অপচয় না করে চষে ফেলুন সস্তায় ‘পুষ্টিকর’ কানের দুলের ঐশ্বর্য ভাণ্ডার। ঢাকে কাঠি পড়তে তো আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.