মুখোমুখি...
বাবার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে দেখা করতে আসি
পত্রিকা: বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি, মা শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ফার্স্ট লেডি, আপনি শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় অফিসিয়াল হোস্টেস...।
শর্মিষ্ঠা: না না... মা ফার্স্ট লেডি, মা-ই অফিসিয়াল হোস্টেস।

পত্রিকা: কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরে আপনি সাংবাদিকদের বিবৃতি দিয়েছেন, তার পর রাখি বন্ধন উৎসবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আপনাকেই দেখা গিয়েছে...
শর্মিষ্ঠা: মা সেই সময়টা অসুস্থ ছিলেন। তাই আমিই কাজ চালিয়ে দিয়েছি।

পত্রিকা: তা আপনার স্টেটাস কী? রাষ্ট্রপতির কন্যাকে কী বলব? ‘ফার্স্ট ডটার’, ‘ফার্স্ট গার্ল’....
শর্মিষ্ঠা: ‘ফার্স্ট গার্ল’ (হাসতে হাসতে) স্কুল নাকি? আরে আমি যা ছিলাম তাই আছি।

পত্রিকা: তবুও... রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের পরে, জীবন তো একেবারে উত্তর মেরু-দক্ষিণ মেরু হয়ে যাওয়ার কথা।
শর্মিষ্ঠা: যদি একেবারে ঠিক উত্তর চান, হ্যাঁ পাল্টে গিয়েছে। মনস্তত্ত্ব বিচার করলে পরিবর্তন তো হয়েছেই দুর্দান্ত অনুভূতি। তবে বাবা তো বাবা-ই, মা তো মা-ই। তাঁরা যাই হোন না কেন।

পত্রিকা: লাইফস্টাইলে তো কিছু পরিবর্তন আসতে বাধ্য। ‘টু বি দ্য প্রেসিডেন্ট’স ডটার অর নট টু বি দ্য প্রেসিডেন্ট’স ডটার’....
শর্মিষ্ঠা: মানে সেই ভাবে কিছু....

পত্রিকা: এই ভাবে দেখা যাক ব্যাপারটা। রাষ্ট্রপতি-কন্যা কী কী করতে পারেন না?
শর্মিষ্ঠা: প্রোটোকল সব এখনও জানি না। তবে কী জানেন বাবা-মা তাঁদের সরকারি ক্ষমতার কোনও ফয়দা তুলতে দেননি আমাদের। বাবা তো গুনে গুনে পয়সা দিতেন। বাবা তখন মন্ত্রিসভায় দু’নম্বর। আমি কিন্তু বাসে করে কলেজ গিয়েছি। খবর নিয়ে দেখবেন, কলেজে প্রায় কেউ-ই জানতেন না আমি কার মেয়ে। এখনও আমার বন্ধুদের কাছে আমি কার মেয়ে তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। আমার ঠিকানা আজও সেই গ্রেটার কৈলাস। রাষ্ট্রপতি ভবনে অবশ্যই আসি, বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। প্রোটোকলের কোনও সুযোগ আমি নিতেও চাই না। পাঁচ বছরের জন্য কী হবে অভ্যাস খারাপ করে? আমি এক জন নৃত্যশিল্পী, কত্থক করি, সেটাই আমার প্রধান পরিচয়।

পত্রিকা: একটু বিস্তারিত বলুন। সঙ্গে পছন্দ-অপছন্দ।
শর্মিষ্ঠা: ছোটবেলা থেকে নাচ শিখছি। গুরু পণ্ডিত দুর্গালাল, উমা শর্মা, রাজেন্দ্র গনগানি। দেশে বিদেশে প্রচুর অনুষ্ঠান করেছি। এখন নিজের দল করেছি। পছন্দ? কালো-অফ হোয়াইট-বেইজ-মরচে রং। পোশাক: শাড়ি, রুপোর গয়না। খাবার: ইলিশ মাছ ভাজা, ভাজার তেল আর লঙ্কা দিয়ে ভাত, গুড়ের কাঁচাগোল্লা, ক্ষীরকদম্ব।
ছবি তুলেছেন সঙ্গীতা ঘোষ
পত্রিকা: নাচকে পেশা করলেন কেন? নিশ্চয় টাকার জন্য নয়।
শর্মিষ্ঠা: (হাসতে হাসতে) নয় কেন? অন্য পেশায় টাকা নিলে দোষ নেই। যত দোষ শিল্পীদের? নাচ আমার নেশাও। সৃষ্টিশীলতা ও দর্শকের করতালি এর জন্যেও নাচি।

পত্রিকা: কোনও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
শর্মিষ্ঠা: (একটু ভেবে) রাষ্ট্রপতি কালাম রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন আইসল্যান্ডে। সাংস্কৃতিক দলে ছিলাম আমার ট্রুপের ছ’জনকে নিয়ে।

পত্রিকা: বরফের উপর নাচলেন?
শর্মিষ্ঠা:(হাসতে হাসতে) না, না। মঞ্চেই নেচেছি। তবে বরফ নিয়ে অন্য অভিজ্ঞতা আছে। সিয়াচেন ও অ্যান্টার্কটিকায়। বাবা তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সিয়াচেনে গিয়েছিলাম ওঁর সঙ্গে। সৈন্যরা যে কী কষ্ট করেন! অ্যান্টর্কটিকায় গিয়েছিলাম বাবার সঙ্গেই। ককপিটে পাইলটের সিট চেপে ধরে দাঁড়িয়েছিলাম নামার সময়। বিমান যখন নামল বরফের মধ্যে বোঝাতে পারব না সেই অনুভূতি। তবে এও মনে হয়েছিল, ওরে বাবা রে গেলাম রে। ট্রেকিং করতাম। পাহাড়ে চড়া আমার প্যাশন ছিল। সবচেয়ে প্রিয় হিমালয়।

পত্রিকা: বাবার সঙ্গে খুব বেড়াতেন?
শর্মিষ্ঠা: বাবার সময় কোথায়? তবে এই দু’টোর ক্ষেত্রে বলেছিলাম, ‘হয় নিয়ে চলো, নয় মেরে ফেলো’। (হাসি)।

পত্রিকা: আচ্ছা, বাবার কাছে কখনও বকুনি খেয়েছেন?
শর্মিষ্ঠা: (হাসতে হাসতে) এর জন্য মা সম্পূর্ণ দায়ী। বাবার কাছে নালিশের পর নালিশ, ‘মেয়ে পড়ছে না, পড়ছে না... ’ কত সহ্য করবে বলুন তো? হঠাৎ এক দিন ফেটে পড়তেন।

পত্রিকা: বাবার সঙ্গে অন্য কোনও স্মৃতি?
শর্মিষ্ঠা: বাবা ইতিহাস পড়াতেন আমাকে। অনার্স ছিল। বাবা সারাদিন কাজ করে, এমনকী বাজেট পেশ করে ফিরে এসে আমাকে পড়িয়েছেন। বাবা ইতিহাসের জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। পড়াতে বসলে কেবল তারিখ বা ঘটনাক্রমেরই উল্লেখ করেন না, ঘটনার পিছনে কোন শক্তি কাজ করেছে তাও বুঝিয়ে বলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশটা বাবার খুব প্রিয়।

পত্রিকা: বাবার সঙ্গে অন্য কোনও বিষয়ে চর্চা...?
শর্মিষ্ঠা: আলাদা ভাবে কিছু নয়। তবে কী জানেন, আমাদের বাড়িতে সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা হত নিয়মিত। মা রবীন্দ্র অনুরাগিণী, গান করতেন। মায়ের ‘গীতাঞ্জলি’ ট্রুপে আমি নাচতাম। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, জীবনানন্দ... আমি এভাবেই বড় হয়েছি সাহিত্যচর্চার পরিমণ্ডলে। আজও আমার কাছে এঁরা অনুপ্রেরণা। এই তো রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষে তিনটে প্রোডাকশন করেছি। ‘বাদলবাউল’, ‘আনন্দধারা’ ও ‘বর্ষশেষ’। ‘বর্ষশেষ’-এ কবিগুরুর ‘বর্ষশেষ’ কবিতা ও শেলির ‘ওড টু দ্য ওয়েস্টউইন্ড’-এর মিশ্রণ ঘটিয়েছি।

পত্রিকা: ‘গ্রামান্তের বেণুকুঞ্জে নীলাঞ্জনছায়া সঞ্চারিয়া হানি দীর্ঘধারা’...
শর্মিষ্ঠা: (হেসে) ‘বর্ষা হয়ে আসে শেষ, দিন হয়ে এল সমাপন,/ চৈত্র অবসান ’ রবীন্দ্রসঙ্গীত ও ভিভালডির ‘ফোর সিজনস’ নিয়েছি আমার প্রোডাকশনে।

পত্রিকা: রাজনীতিতে আসছেন? এই নিয়ে তো সব মহলে প্রচুর জল্পনা।
শর্মিষ্ঠা: এখনও? জঙ্গিপুরে দাদা (অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়) দাঁড়াবে সে তো ঠিক হয়ে গিয়েছে।

পত্রিকা: ভবিষ্যতে?
শর্মিষ্ঠা: আপাতত কোরিওগ্রাফি ও সৃষ্টিধর্মী কাজে মন দিতে চাই। নৃত্যশিল্পীদের ট্রাজেডি হচ্ছে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা যখন ম্যাচিওর করতে থাকেন, তখন শরীরটা আর আগের মতো উচ্ছল থাকে না। ক্রিয়েশনের দিকে ঝুঁকছি। ইউরোপের পাঁচটা দেশে ঘুরে এলাম আমার নতুন প্রোডাকশন ‘শি: টেলস অব এনসিয়ান্ট গডেসেস’ নিয়ে। ব্রহ্মাণ্ডে নারীর শক্তি ও রহস্যময়তা নিয়ে এই রচনা। ঋক্ বেদের ছয় দেবী অদিতি, বাক, ভূমি, অরণ্যানী, রাত্রি ও উষা মুখ্য চরিত্র ‘শি’-র। প্রকৃতির শক্তির সঙ্গে মানবিক আবেগ ও দেবীত্বের মিশ্রণ ঘটিয়েছি। এক সময় সমসাময়িক নাচ নিয়ে একটা ফিল্ম বানিয়েছিলাম ‘বিয়ন্ড ট্র্যাডিশন’। ইচ্ছা আছে ‘কোরিওগ্রাফি ফর ক্যামেরা’ করার।

পত্রিকা: কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ?
শর্মিষ্ঠা: (হাসতে হাসতে) নিয়মিত আছে। এই তো ‘শি’ পারফর্ম করব কলকাতার সায়েন্স সিটিতে ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়।

পত্রিকা: আর রাজনীতিটা?
শর্মিষ্ঠা: (হাসতে হাসতে) আবার রাজনীতি? ঠিক আছে... তা ভবিষ্যতের কথা কেই বা বলতে পারে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.