|
|
|
|
|
|
অন্য পাঠশালা |
একটু ‘আলো’র জন্য |
আর্যভট্ট খান |
সন্ধ্যা নেমেছে অনেকক্ষণ। ছুটি হয়ে গিয়েছে আদালতে। আর সেখানেই মেঝেয় বসে বারান্দার আলোয় মন দিয়ে পড়াশোনা করছে দশ-বারো জন খুদে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত সাড়ে ৮টা বেজে যায়। তখনও ‘স্যর’-এর কাছে হিন্দি ও ইংরেজি পড়া দেখিয়ে নেওয়া চলে। কলকাতা হাইকোর্টের সি ব্লকের বারান্দা তখন ছোটখাটো এক ক্লাসঘর।
এটাই রোজকার দৃশ্য। তাই রোজ অফিস ছুটি হয়ে গেলেও কাজ শেষ হয় না ‘স্যর’ চন্দ্রেশ্বর প্রসাদের। বছর ছাপ্পান্ন-র চন্দ্রেশ্বর রাজভবনের সচিবালয়ে সেকশন অফিসের কর্মী। অফিস ছুটির পরে তিনি চলে আসেন হাইকোর্টের সি গেটের করিডরে। সেখানেই শুরু হয় তাঁর বিনা বেতনের পাঠশালা। চন্দ্রেশ্বরবাবু বলেন, “পড়াতে ভালবাসি। রাজভবন, হাইকোর্ট চত্বরের এই ছেলেমেয়েগুলো খুবই গরিব। এদের বেশির ভাগই রাজভবনের ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। আমি স্কুলের হোমটাস্কগুলো দেখিয়ে দিই।”
বছর তিনেক আগে দু’জন ছাত্র নিয়ে শুরু হয়েছিল এই পাঠশালা। এখন প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোট বারো জন ছাত্রছাত্রী পড়ে। |
|
ছবি: রাজীব বসু |
এদের কারও বাবা হাইকোর্ট চত্বরে চা বিক্রি করেন, কারও বাবা ঝাড়ুদার। প্রতি সন্ধ্যায় স্বপ্না রাউত, সোনা পরভিন বা শ্রীসন্তদের পড়ানোটা এখন চন্দ্রেশ্বরবাবুর কাজের মধ্যেই পড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “অফিস থেকে বাড়ি ফিরে তেমন কোনও কাজ থাকে না। আমার ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে বসে কী করব? চায়ের দোকানে আড্ডা মারতে ভাল লাগে না। তাই সন্ধ্যায় এই বাচ্চাদের পড়ানো নিয়েই থাকি।”
চন্দ্রেশ্বরবাবু জানান, বছর তিনেক আগে যখন এলাকার দু’টো ছেলে তাঁর বাড়িতে হোমটাস্ক করতে আসত, তখনই মনে হয়েছিল এলাকার গরিব বাচ্চাদের একসঙ্গে পড়ানোর কথা। কিন্তু কোথায় পড়ানো হবে? চন্দ্রেশ্বরবাবু থাকেন রাজভবনের কোয়ার্টারে। সেখানে দশ-বারো জন বাচ্চাকে পড়ানোর মতো জায়গা নেই। তখনই হাইকোর্টের সি ব্লকের বারান্দাটা তাঁর নজরে আসে। সেখানে সন্ধ্যায় পড়াতেও কোনও অসুবিধা নেই। বারান্দায় পর্যাপ্ত আলো জ্বলে। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। হাইকোর্টের বারান্দাতেই পড়াতে শুরু করেন চন্দ্রেশ্বরবাবু।
দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল। সপ্তাহে শুধু শনি ও রবিবার ছুটি থাকে। বাকি দিনগুলো সন্ধ্যা হলেই কচিকাঁচাদের দুলে দুলে পড়ার আওয়াজে গমগম করে কলকাতা হাইকোর্টের সি ব্লকের বারান্দা। |
|
|
|
|
|