নির্যাতনের মামলা তুলতে রাজি না-হওয়ায় স্ত্রীকে ‘শিক্ষা’ দিতে ৩ বছরের শিশুকন্যাকে খুনের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গণপ্রহারের পরে পুলিশের হাতে তুলে দিল উত্তেজিত জনতা। বুধবার রাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার পূর্ব হালদারপাড়ায় ঘটনাটি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই বধূর বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গাছতলা থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনায় মদত দেওয়ার অভিযোগে ধৃতের মাকে জনতা গণপ্রহারের পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। গঙ্গারামপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে ধৃতরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। |
|
|
শোকার্ত সুমিদেবী ও ধৃত উত্তম সরকার। ছবি: অমিত মোহান্ত। |
|
পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে দু’জনকে ফের ধরে ফেলে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “ধৃতরা জেরায় খুনে জড়িত থাকার কথা কবুল করেছে। স্ত্রীকে শিক্ষা দিতেই শিশুকন্যাটিকে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে নিয়ে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে তারা খুন করেছে বলে স্বীকারও করেছে। খুনের মামলা রুজু হয়েছে। দ্রুত তদন্ত সম্পূর্ণ করে ধৃতদের যাতে উপযুক্ত সাজা হয় সে জন্য পুলিশের যা করণীয় তা করা হবে।” পুলিশ জানায়, নিহত শিশুটির নাম বৃষ্টি সরকার। তার মা সুমিদেবী অভিযোগ করেন, তাঁকে ‘শিক্ষা’ দিতেই ফুটফুটে শিশুটিকে তাঁর স্বামী উত্তম ও শাশুড়ি মিনতিদেবী খুন করেছেন। ঘটনার পর থেকে সুমিদেবী ঘন ঘন জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তাঁর ভাই রনোবাবু জানান, ১১ বছর আগে পাশের গলাকাটা কলোনির বাসিন্দা রিকশা চালক উত্তম সরকারের সঙ্গে সুমির বিয়ে হয়। পর পর চার মেয়ে হওয়ায় সুমিদেবীর উপরে অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ১৯ মে সুমিদেবী স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে চার মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান। পুলিশ উত্তমকে গ্রেফতার করে। ৪২ দিন জেলে থাকার পরে সম্প্রতি ছাড়া পান উত্তম। রনোবাবুর অভিযোগ, এর পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে চড়াও হয়ে মামলা না-তুললে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন উত্তম। বাড়ির লোকের সন্দেহ, বুধবার সকলের অলক্ষ্যে শিশুটিকে উত্তম বেড়াতে যাওয়ার নাম করে নিয়ে চলে যান। রাত হলে শিশুটির খোঁজ না- মেলায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। জনতা গিয়ে উত্তমের বাড়িতে চড়াও হয়। উত্তম ও তাঁর মাকে বেধড়ক মারধর করে জনতা। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এ দিন ভোরে প্রাতর্ভ্রমণের সময়ে স্থানীয় বাসিন্দা শুকদেব সরকার, অরুণ সাহারা বস্তাবন্দি দেহটি দেখে পুলিশে খবর দেন। |