প্রাক-পুজো তাঁতমেলা শুরু হল বর্ধমানে। শহরের গির্জা প্রাঙ্গনে বৃহস্পতিবার ছিল তারই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। উদ্যোক্তারা ছাড়াও এ দিন উপস্থিত ছিলেন জেলার হ্যান্ডলুম ডেভেলপমেন্ট অফিসার কৌশিক হালদার, বর্ধমান কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান জহরলাল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। পূর্বস্থলীর বিধায়ক স্বপন দেবনাথের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি বলে জানান উদ্যোক্তারা। |
উদ্যোক্তারা জানান, বর্ধমানের গির্জা প্রাঙ্গনে শুরু হওয়া এই মেলায় মোট ৩৮টি স্টল রয়েছে। চলবে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত। গতবার মেলা বসেছিল বর্ধমানের উৎসব ময়দানে। উদ্যোক্তারা জানান, সেখানে মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৮ লক্ষ টাকা। যদিও বিক্রির লক্ষমাত্রা ছিল এক কোটি। তাঁদের বক্তব্য, ক্রমশ সঙ্কটে পড়ছে তাঁতশিল্প। কমছে তাঁত সমবায়ের সংখ্যাও। কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের কাছ থেকে আগে যেখানে ১৫৩টি সমবায় নিয়মিত ঋণ নিত, বর্তমানে তা এসে ঠেকেছে মাত্র ৫২টিতে। উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমানে তাঁত শিল্পের মূল সমস্যা হল কাঁচা মালের দামের অস্থিতিশীলতা, উচ্চমানের সুতোর ধারাবাহিক জোগানের অনিশ্চয়তা, তাঁত শিল্পে উৎপাদিত বস্ত্র বাজারজাত করা ইত্যাদি। এই শেষ সমস্যাটির সমাধানের জন্যই রাজ্য জুড়ে এই ধরনের মেলার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানান তাঁরা। জেলার হ্যান্ডলুম ডেভেলপমেন্ট অফিসার কৌশিক হালদার জানান, বিক্রেতাদের অনুরোধ করা হয়েছে, তাঁরা যেন এই তাঁতবস্ত্র সম্পর্কে ক্রেতাদের মতামত শুনে রাখেন। ভবিষ্যতে ওই পরামর্শ বা মতামত বস্ত্র বিপণন ও বস্ত্র প্রস্তুতির কাজে লাগানো হবে। তাঁর কথায়, “আসানসোলে প্রতি বছর যে মেলা অনুষ্ঠিত হয়, তাতে বিক্রির পরিমাণ এক কোটি ছাড়ালেও, বর্ধমানের মেলার কেনাবেচা তার ধারে কাছে আসতে পারছে না। মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, তাঁতশিল্পীদের সাহায্য করতে একটু উদারতা দেখান।” |
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান জহরলালবাবুও জানান, উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় তাঁত সমবায়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমাদের তৈরি শাড়ি বা অন্যান্য বস্ত্রের মান যথেষ্ট ভাল। কিন্তু আমরা সেগুলিকে প্রচারের আলোয় আনতে পারিনি। বিপণনের উপযুক্ত ব্যবস্থাও করতে পারিনি। তাই কাটোয়া জুড়ে সমবায়ের সংখ্যা কমছে। তাঁত শিল্প এখন শুধু টিকে রয়েছে বর্ধমানের কালনা-পূর্বস্থলী এলাকায়।” তবে এ বারের মেলা নিয়ে আশাবাদী তাঁতিরা। কালনার নসরৎপুর থেকে এসেছেন তাঁতি অনিল বসাক। তাঁর কথায়, “গত বছর ব্যবসা ভাল হয়নি। এ বার যে শাড়ি এনেছি, তাতে হয়তো বর্ধমানের মানুষকে খুশি করতে পারব।”
|