|
|
|
|
|
|
|
ওস্তাদরা ছিলেন আছেন থাকবেন |
ঘুড়ির শহর |
ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে লকে কান কেটে গিয়েচিল, সেই কাটাতেই তাঁর ভগ্নী চিনে ফেল্লেন...‘জাল’ প্রতাপচাঁদ সম্পর্কে জনরব উদ্ধার করেছিলেন হুতোম, তাঁর খাঁটি উত্তর কলকাত্তাইয়া জবানে। ক-এ কাগজ, ক-এ কাঠি আর ক-এ কারিগর ভাল ঘুড়ির জান এই যে তিন ক, তার সঙ্গে আর একটি, (না হয় বিশ্বকর্মারটি ধার নিয়েই) যোগ করা যাক, ক-এ কলকাতা। সেই যে কবে কলকাতার লাটাইয়ে লখনউ-এর সুতোটি জড়িয়ে দিয়েছিলেন মেটিয়াবুরুজের ফুর্তির প্রাণ নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ্ তার পরে প্রায় শ’দেড়েক বচ্ছর পেরিয়ে গেল, কলকাতার ঘুড়িতে হাওয়া ধরাই থাকল। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার, কলেজ স্ট্রিট, শ্যামবাজার, ধর্মতলা, এন্টালি, মেটিয়াবুরুজের কাচ্চিগলিতে ছড়িয়ে আছেন যে ওস্তাদ কারিগরেরা, কখনও কখনও তাঁরা লখনউয়ের সঙ্গেও মাঞ্জা লড়তে পারেন। আর আছেন পাক্কা ঘুড়িয়ালেরা ধরবাবু, ভানুবাবু, কাশিম সাহেব, নিমাই সেন, রাজনাথ দত্ত, ঋষিবাবু, বেঁটেবাবু, শৈলবাবু আকাশে যেন ওস্তাদের ঝাঁক। তবে, মাঝে মাঝে বটে ছিঁড়েছিল তার, ভোকাট্টা জড়িয়েছিল জীবনেও। |
|
ছোটবেলা থেকেই দৃষ্টিশক্তি কম ছিল কৃষ্ণচন্দ্র দে-র। তেরো বছর বয়স যখন, সিমলেপাড়ার সেই বিখ্যাত বাড়ির ছাতে ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতেই হঠাৎ জ্বলে উঠল চোখটা। তার পরে দৃষ্টি হারালেন পুরোপুরি। আর ছিলেন অসিতবরণ। ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের ঘুড়ির প্রতিযোগিতায় ফি বচ্ছর সকাল থেকে এসে ঠায় বসে থাকতেন সারা দিন, নিজে ওড়াতেন ঘুড়ি, দেখতেন জমজমাট প্রতিযোগিতা। সেই মাঠেই এক দিন খবর এল তাঁর নাতি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। সেই যে ঘুড়ির মাঠ ছেড়েছিলেন অসিতবরণ, আর আসেননি। তবু, বিশ্বকর্মার কলকাতাকে দুয়ো দেবে কে? এ শহরেরই আকাশে সোনার আখরে লেখা থাকবে ওস্তাদ নৌয়েবাও-এর নাম। দুর্ঘটনায় এক পা হারানো শ্রীশচন্দ্র দত্ত ওরফে ভানুবাবু এক হাতে ক্রাচ নিয়ে একটা ঘুড়ি দিয়ে অনায়াসে ন’টা ঘুড়ি কেটে নাম নিয়েছিলেন নৌয়েবাও। এমন আরও অনেক ওস্তাদ ছিলেন, আছেন, থাকবেন... শুধু মাটিতে অবজ্ঞাটুকু না থাকলেই হয়।
|
ফাদার ফালোঁ |
তাঁর বাংলা জ্ঞান অত্যন্ত সড়গড়, উচ্চারণেই যা ফারাক বোঝা যেত, জিভ থেকে সাহেবিয়ানার আড়টুকু সরেনি।... দেখতে অনেকটা মুনিঋষিদের মতো, পিঠে বইপত্রের ঝোলা, চোখে সোনালি ফ্রেমের গোল গোল চশমা, শুকনাসা, হাসি হাসি মুখ, ফাদার ফালোঁকে প্রায়ই দেখতে পেতুম আমাদের রাস্তায়। নবনীতা দেবসেন স্মৃতিগদ্য লিখেছেন ফাদার পিয়ের ফালোঁকে (১৯১২-’৮৫) নিয়ে, যিনি বেলজিয়াম থেকে মিশনারি হয়ে এই দেশে এসে, বাংলা ও সংস্কৃতে এম এ করেছিলেন। পড়াতেন সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল আর কলেজে। থাকতেন গোলাম মহম্মদ রোডে ‘শান্তিভবন’-এ। এ রকম গদ্যের সমাহারে নতুন ২০-র (সম্পা: অনিমেষ দত্ত বণিক ও দিগন্ত রায় চৌধুরি) প্রথম প্রকাশ: ‘ফাদার ফালোঁ সংখ্যা’, তাঁর শতবর্ষ উপলক্ষে। তাতে ফাদারের রচনার পুনর্মুদ্রণ, তাঁকে আর তাঁর কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে লেখাপত্র, তাঁর জীবনবৃত্তান্ত ও রচনাপঞ্জি ইত্যাদি। হিরণ মিত্রের প্রচ্ছদ। পত্রিকাটি প্রকাশ করবেন রবিশংকর বল, ২০ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাংলা আকাদেমি সভাঘরে। শুভাশিস চক্রবর্তীর দু’টি বই ছুটির লেখা প্রকাশ করবেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও আটপৌরে প্রকাশ করবেন ব্রাত্য বসু। দ্বিতীয় পর্বে ফাদার ফালোঁকে নিয়ে আলোচনা, বলবেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও বিশ্বজ্যোতি দাশগুপ্ত। আয়োজক অহর্নিশ পত্রিকা।
|
|
স্মরণ |
উনিশ শতকে ইলাহাবাদের বিখ্যাত ব্যবসায়ী নীলকমল মিত্র যুক্ত ছিলেন বহু গঠনমূলক কাজে। ইলাহাবাদে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা ছাড়াও যুক্তপ্রদেশের প্রথম ইংরেজি সংবাদপত্র ‘রিফ্লেক্টর’ তাঁরই কীর্তি। হুগলি জেলার বন্দিপুরের আদি বাসিন্দা নীলকমল ছিলেন ডেভিড হেয়ারের ছাত্র, রাজনারায়ণ বসুর সহপাঠী। পরে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলেও পড়া ছেড়ে দেন। ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ১৮৬৫ পর্যন্ত অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন। ছিলেন যুক্তপ্রদেশ আইনসভার সদস্য। তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের (ভারতসভা) প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতসভার প্রথম সম্পাদক আনন্দমোহন বসুর জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে নীলকমল মিত্রের ছবির আবরণ উন্মোচিত হবে। ‘বাংলার নবজাগরণে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা’ সম্বন্ধে বলবেন ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজের সভাপতি প্রণব রায়।
|
সহমর্মিতার মঞ্চ |
সেটা ১৯৮৪। শ্রমজীবীদের দিকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্যতিক্রমী কয়েক জন। বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের হয়ে বিভিন্ন মঞ্চে সেই থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এ শহরেরই সংগঠন নাগরিক মঞ্চ। পাশাপাশি চলছে তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলি মুদ্রিত করে সবার সামনে তুলে ধরা। চা-শ্রমিকের দুর্দশা থেকে শুরু করে বন্ধ কারখানার কর্মীদের জীবনযুদ্ধ, স্পঞ্জ আয়রন কারখানার দূষণ, অরণ্যবাসীদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে শামিল এই মঞ্চ। ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় বিড়লা তারামণ্ডল সেমিনার হলে নাগরিক মঞ্চ আয়োজন করেছে বিজয় চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা। বিষয়: ‘বিশ্ব অর্থনীতি সঙ্কট ও ভারতীয় অর্থনীতি।’
|
সম্মান |
‘আমার কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল অভিনয়, আর কিছু নয়। নিছক অভিনয় করার আনন্দ’ মনে করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্র তো বটেই, তাঁর সঙ্গে আরও দুই পূর্ববর্তী দাদাসাহেব ফালকে প্রাপক মৃণাল সেন ও মান্না দে’কেও সম্মানিত করবে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা)। ১৯ সেপ্টেম্বর মহাজাতি সদনে সাড়ে পাঁচটায়। অন্য দিকে সত্যজিৎ থেকে সুব্রত মিত্র বংশী চন্দ্রগুপ্ত তপন সিংহকে নিয়ে এতাবৎ পত্রিকা প্রকাশ করেছে বালির যে সিনে গিল্ড, তাদের ১৫০তম বুলেটিনটি বেরোল সম্প্রতি, সংগঠন-সদস্যদের রচনায় ঋদ্ধ হয়ে। সঙ্গে মৃণাল সেন, মিকলস জাঙ্কসোকে নিয়ে লেখা। মূলত ওঁদেরই উদ্যোগে যে বালি উৎসব হল সম্প্রতি, তার স্মারক পুস্তিকাটি প্রকাশ পেল রবীন্দ্রনাথ-সহ বাঙালি তথা ভারতীয় মনীষী ও বিশিষ্ট জনের কর্ম ও জীবনপঞ্জি নিয়ে। পরিশ্রমী ও মননশীল উদ্যোগ।
|
প্রাঙ্গণ |
প্রবাসে নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে বিচ্ছিন্নতায় মাঝে মাঝে অসহায় বোধ হয়। মুম্বইবাসী ‘রবিতীর্থে’র ছাত্রীরা তাই তরুণ প্রজন্মকে রবীন্দ্র-ভাবধারার সঙ্গে পরিচয় করাতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রাঙ্গণ’। সেটা সত্তর দশকের শেষ দিক, মুম্বই রক অ্যান্ড রোল-এ ভাসছে। উৎসাহ দেন স্বয়ং সুচিত্রা মিত্র: ‘রবীন্দ্রনাথের গান এক অনির্বাণ জ্যোতি। সারা জীবন আমার ব্রত এই জ্যোতি সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার। আমার অতি স্নেহের তিন ছাত্রী যখন মুম্বই শহরে মিলিত হল, তাদের আমি ডাক দিলাম ব্রত উদ্যাপনে সামিল হতে।’ বর্তমানে মুম্বইতে এর তিনটি শাখা। ১৯ সেপ্টেম্বর সুচিত্রা মিত্রের জন্মদিন। সেই উপলক্ষে ২১ সেপ্টেম্বর এ শহরেও উদ্বোধন হবে ‘প্রাঙ্গণ’-এর শাখা। সন্ধ্যায় সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে সুচিত্রা মিত্রকে স্মরণ করবেন তাঁরা। সংকলন ও পরিচালনায় প্রণতি ঠাকুর, গানে অদিতি গুপ্ত। দেখানো হবে রাজা সেন পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘সুচিত্রা মিত্র’।
|
ডোভার লেন |
একদা ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স-এর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসরে অবিচ্ছেদ্য ছিল ধ্রুপদী নৃত্য। পরে নৃত্যের অনুষ্ঠানটি নিয়ে যাওয়া হয় মাঝ-সেপ্টেম্বরে, শরৎকালীন আবহাওয়ায়। এ বারেও সেই আসর বসছে জি ডি বিড়লা সভাঘরে ১৯-২০ সেপ্টেম্বর, সন্ধে ছ’টায়। থাকবেন এ বছরের মেধা-সন্ধান প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানাধিকারীরা এবং বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী অলকা কানুনগো, মধুমিতা রায়, পৌষালি চট্টোপাধ্যায়, চান্দ্রেয়ী বসু ঠাকুর, ঝিনুক মুখোপাধ্যায় সিংহ, ইয়াসমিন ও আরতি সিংহ। উদ্বোধন করবেন মণিপুরি নৃত্যশিল্পী কলাবতী দেবী।
|
কালীঘাট পট |
রঙ ও রেখার সাবলীলতায় এক সময় বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল কালীঘাট পটচিত্রের নাম। সাহেবরাও সংগ্রহ করতেন এই পট। আজ এই ধারাটি ইতিহাস। ভারতীয় জাদুঘরের নিজস্ব সংগ্রহের ৫৫টি পট নিয়ে আয়োজিত হয়েছে ‘কালীঘাট পটচিত্র’ শীর্ষক প্রদর্শনী। প্রকাশিত হবে সচিত্র একটি পুস্তিকা। ২০ সেপ্টেম্বর সাড়ে ৩টেয় আশুতোষ শতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে এর উদ্বোধন করবেন শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখানো হবে সৌরভ গুহ পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘নগর পটুয়া’। প্রদর্শনী চলবে ২৬ সেপ্টেম্বর (১১-৬) পর্যন্ত। সঙ্গে ২০-২১ সেপ্টেম্বর কর্মশিবির, থাকবেন কালীঘাট ঘরানার শিল্পী আনন্দ চিত্রকর, সত্যরঞ্জন দাস এবং ভাস্কর ঘোষ।
|
নদীবক্ষে রবীন্দ্রনাথ |
১৮৯০-এর ২৫ নভেম্বর রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ যাত্রা করেন জমিদারি দেখতে। সপরিবার ছিলেন বোটে। ইন্দিরা দেবীকে লিখলেন, ‘পৃথিবী যে বাস্তবিক কী আশ্চর্য সুন্দরী তা কলকাতায় থাকলে ভুলে যেতে হয়।’ এমন বিষয়কে উপজীব্য করে দক্ষিণ কলকাতার ‘নান্দনিকী’ সম্প্রতি জিডি বিড়লা সভাঘরে নিবেদন করল ‘খেয়ার নেয়ে রবীন্দ্রনাথ’। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় এদেরই উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে ‘নদীবক্ষে রবীন্দ্রনাথ: প্রকৃতি ও জীবনের জলছবি’। ২৩ সেপ্টেম্বর আশুতোষ শতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে সকাল ১১টায় এই অনুষ্ঠানে বলবেন পবিত্র সরকার। প্রদর্শিত হবে ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র।
|
গোরা |
একদা নকশাল আন্দোলনে যুক্ত, অধ্যাপক শৈবাল মিত্রের সাহিত্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলি, বা পারিপার্শ্বিক জীবনের অভিজ্ঞতার ছবিই ফুটে উঠত সবচেয়ে বেশি। প্রয়াত এই মানুষটি কিন্তু শেষ উপন্যাসটি লিখেছেন শ্রীচৈতন্যের জীবন নিয়ে (গোরা, দে’জ। প্রচ্ছদ: যোগেন চৌধুরী)। ঐতিহাসিক সময়ের এক জটিল স্তরভেদ আখ্যানটির ভিতর। মুখবন্ধে পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন ‘নিমাই পণ্ডিত যখন সন্ন্যাসী শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য হয়ে অবতীর্ণ হলেন, তখন শৈবালের আখ্যান আর বিশ্বরূপের রহস্যাবৃত পুথিতে আটকে নেই।... সেই আধুনিক গণ-আখ্যানের যুক্তিতে প্রাধান্য পেয়েছে বাঙালির জাতীয় পরিচয় নির্মাণে চৈতন্যের ভূমিকা।’ ১৭ সেপ্টেম্বর ৬ টায় নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়াম সভাঘরে বইটি প্রকাশ করবেন অশোক মিত্র ও শঙ্খ ঘোষ। বলবেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
|
আঠেরো ভাটির দেশ |
নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণ দক্ষিণরায় বাঘ-রূপে মানুষকে মেরে ফেলত। গ্রামবাসীদের বাঁচাতে জন্ম বনবিবির। সে এই আঠেরো ভাটির দেশে এসে প্রথমে দক্ষিণরায়ের মা নারায়ণীর সঙ্গে যুদ্ধ করে। তাকে হারিয়ে সই পাতায় এবং ঠিক করে দেয়, জঙ্গলে নির্ধারিত জায়গায় সবাই মিলেমিশে ও শুদ্ধ মনে বাস করবে। ষোড়শ শতাব্দীর এই উপকথা প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রচলিত। জঙ্গলে ঢুকলে এঁরা স্মরণ করেন ‘বাবা দক্ষিণরায় হরি হরি’, ‘মা বনবিবি আল্লা আল্লা’। এই লোককথা সুন্দরবনে দুই সম্প্রদায়ের মানুষকে কী ভাবে এক সূত্রে বেঁধে রেখেছে, তাই নিয়ে মলয় দাশগুপ্ত তৈরি করেছেন ‘ল্যান্ড অব এইট্টিন টাইডস অ্যান্ড ওয়ান গডেস’। ১৯ সেপ্টেম্বর সাড়ে ছ’টায় ‘ক্রসওয়ার্ড ফিল্মস’ প্রযোজিত তথ্যচিত্রটি দেখানো হবে গ্যেটে ইনস্টিটিউট, ম্যাক্সমুলার ভবনে। অন্য দিকে নতুন ধারার ফরাসি ছবির উৎসব ১৯-২১ সেপ্টেম্বর নন্দনে। আয়োজনে নন্দনের সঙ্গে আলিয়ঁস ফ্রঁস্যাজ ও সিনে সেন্ট্রাল।
|
আগুনের ফুল |
নতুন করে ফুটল সেই ‘আগুনের ফুল’, সিডি-র আকারে। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আগুনের ফুল কবিতামালা একদা জনপ্রিয় হয়েছিল খুব। তাতেই সুর করে সম্প্রতি গানের এক কোলাজ উপস্থাপন করল কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণ সমিতি। ১৯৮৫-তে ৮টা গান আর ৫টা কবিতা নিয়ে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে প্রকাশিত হয়েছিল ‘আগুনের ফুল’। প্রকাশমাত্রেই জনপ্রিয়তা। তার পরে ২৭ বছর পেরিয়ে আবার সেই ফুল আর ফুলকির দেখা পেল কলকাতা।
|
চরিত্রাভিনেতা |
এই দেখো, আবার খোকা-খোকা কথা বলে! দু’দিন ভাল করে একটু যুদ্ধু করে নাও, তারপর তোমার ছুটি। জহর রায় বলতেই হাল্লার মন্ত্রীমশাই ভেসে ওঠেন চোখের সামনে। রাজাকে যিনি যুদ্ধ বাধানোর কুমন্ত্রণা দিতেন, যাঁর চারধারে ঘুরে ঘুরে গুপী গান গেয়েছিল আর বাঘা ঢোল বাজিয়েছিল ও মন্ত্রীমশাই ষড়যন্ত্রীমশাই! কিন্তু সত্যজিতের গুগাবাবা ছাড়াও তো আরও কত ছবিতে তাঁর অসামান্য অভিনয়। ঋত্বিকের সুবর্ণরেখা-য় মুখুজ্যেবাবু, ছাতিমপুর স্টেশন থেকে নিয়ে যাওয়ার পথে ছোট্ট সীতাকে যিনি স্বপ্নের নতুন বাড়ি চিনিয়েছিলেন। অভিনয়ের এই ব্যাপ্তি বুঝিয়ে দেয় জাত-অভিনেতা তিনি, চরিত্রাভিনেতা। বাঙালিই বরং তাঁকে কমেডিয়ান আখ্যা দিয়ে সংকীর্ণ করে ফেলেছে তাঁর পরিসর। কমেডিতে আটকে না থেকে তিনি পৌঁছে যেতেন নতুন নতুন চরিত্রে। জন্ম বরিশালে, ১৯১৯-এর ১৯ সেপ্টেম্বর। সেই উপলক্ষে নন্দন-এ তাঁর অভিনীত ছবির রেট্রো ২৪-২৫ সেপ্টেম্বর, অধিকর্তা যাদব মণ্ডল জানালেন ‘নতুন প্রজন্মের জন্যেই এ আয়োজন।’ তাঁর আর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুটি ছিল সুচিত্রা-উত্তম জুটির মতোই তুমুল জনপ্রিয়। ’৭৭-এ মারা যাওয়ার পর তাঁর জনহীন শ্মশানযাত্রায় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, ‘জহরের কি দেশের কাছে এইটুকুই পাওনা ছিল? অন্য দেশ হলে স্যার উপাধি পেত।’ |
|
|
|
ভাস্কর |
শুধু প্রতিমা গড়েই তৃপ্ত ছিলেন না। প্রতিমার সঙ্গে মানানসই হবে মণ্ডপসজ্জা। আর যে মণ্ডপে প্রতিমা যাবে সেখানে বাজবে বিসমিল্লার সানাই বা শাস্ত্রীয় যন্ত্রসঙ্গীত। শিল্পী রমেশচন্দ্র পাল এ ভাবেই ভাবতেন। জন্ম ফরিদপুরের পালং-এ। শিল্পশিক্ষার জন্য চল্লিশের দশকে আসেন কলকাতায়। প্রথমে মদনমোহনতলার ভাটিয়াবাড়িতে, পরে শোভাবাজারে রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিটে নিজস্ব স্টুডিয়ো গড়ে তোলেন। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের পেন্টিং-এর শিক্ষক বসন্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভোরবেলায় হেঁটে কলেজ যেতেন মডেলিং-এর ছাত্র রমেশ। তুলির টান দেখে বসন্তবাবু বলেছিলেন পেন্টিং-এ এলে ভাল শিল্পী হতে পারবে। শুধু ছবির জগতে থাকতে রাজি হননি রমেশচন্দ্র। সেই সময় কুমোরটুলিতেও চলছিল ভাঙাগড়া। দাঙ্গা, দেশভাগের ফলে ওপারের মৃৎশিল্পীরাও তখন কলকাতামুখী। ঢাকা-বিক্রমপুর থেকে এসেছিলেন রাখালচন্দ্র রুদ্রপাল, সঙ্গে হরিবল্লভ, েগাবিন্দ, নেপাল, মোহনবাঁশিরা চার ভাই। পঞ্চাশের দশক থেকেই কুমোরটুলিতে ওপার বাংলার মৃৎশিল্পীদেরই যুগ। আর্ট কলেজে পড়া রমেশচন্দ্র সেখানে যোগ দিলেন বটে, তবে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে। প্রতিমা গড়ার সঙ্গে ভাস্কর্যেও নিজের পরিচয় তৈরি করলেন তিনি। বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে ইন্দিরা গাঁধী-সহ এই শহরে বেশ কিছু মূর্তি তিনি গড়েছেন। কিংবদন্তি ভাস্কর রমেশচন্দ্র পাল ছড়িয়ে আছেন কুমোরটুলি থেকে চৌরঙ্গি হয়ে দেশবিদেশেও। দীর্ঘকাল তাঁর ফায়ার ব্রিগেড, একডালিয়া, কলেজ স্কোয়ার, পার্কসার্কাস ইত্যাদি মণ্ডপের প্রতিমা ছিল প্রবাদপ্রতিম। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন বছর দুই। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন কলকাতায়। |
|
|
|
|
|
|
|