দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ লাইনে কিশোরীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে গাফিলতির অভিযোগে বালুরঘাট থানার এক অফিসারকে সাসপেন্ড করা হল। শুক্রবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বিদায়ী পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ ওই নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে রূপা সোরেন নামের ওই ১৩ বছরের কিশোরী নিখোঁজ হয়। দুপুরে তাঁর মা রেণুকাদেবী ও বাবা ইশপ সোরেন মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি করাতে গেলে বালুরঘাট থানার ডিউটি অফিসার পিনাকী সাহা ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সুপার বলেন, “পিনাকী সাহাকে কর্তব্যে গাফিলতির অবিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিশদ তদন্ত চলছে। ধৃত সঞ্জয় পাহানকেও জেরা চলছে।” মঙ্গলবার রূপা পুলিশ লাইনের আমবাগানে পাতা কুড়োতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। বুধবার দুপুরে তার দেহ মেলে পুলিশ লাইনের চালকদের ব্যারাকে পিছনে। তা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও আন্দোলন চলছেই। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে সঞ্জয়কে গ্রেফতার করেছে কি না সেই প্রশ্নেও তদন্তের দাবি উঠেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেছেন, “ধৃতের বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনার অনেক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। আমরা সিবিআই তদন্তের দাবিতে শনিবার থেকে আন্দোলনে নামছি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যেখানে কিশোরীর দেহ মিলেছে তার অদূরেই গত মঙ্গলবার ঘটনার পর বিকেলে একটি মরা কুকুরকে পুঁতেছিলেন এক পুলিশ কর্মী। অথচ ঘটনায় ধৃত যুবক সঞ্জয় পাহানের বয়ান অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সকালে কিশোরীকে খুন করে পুলিশ লাইনের পিছনের দিকে আমবাগানের মধ্যে ঘরের দেওয়াল এবং সীমানা পাঁচিলের মাঝখানে সরু গলিতে দেহ ফেলে রেখে আসে সে। তার কিছুটা পাশেই কুকুরের দেহ মাটি খুঁড়ে পোঁতা হলেও কেন কিশোরীর দেহটি চোখে পড়ল না, এই প্রশ্ন উঠেছে। জেলা পুলিশ লাইনের রিজার্ভ ইন্সপেক্টর উদয় ছেত্রী বলেন, “ওই সরু গলিটি এমন আড়ালে যে বাগান চত্বর থেকে চট করে দেখা যায় না। তা ছাড়া পিছনের দিকে কেউ যান না। ফলে কুকুরের দেহ পোঁতার সময় ওই গলির দিকে নজর যাওয়া সম্ভব নয় বলে কিশোরীর দেহটি কারও চোখে পড়েনি।” এ দিন নিহত কিশোরী রূপা সরেনের মা রেণুকা দেবী বলেন, “মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর মেয়ের খোঁজ না পেয়ে পুলিশ লাইনের আমবাগানে যাই। সঙ্গে আমার স্বামী ও শাশুড়ি ছিলেন। পাতার বস্তা পেলেও মেয়ের কোনও হদিশ পাইনি।” এ দিকে, অভিযুক্ত যুবক সঞ্জয়কে ঘটনার পরদিন হোটেল মালিক অনিল দাসই ধরিয়ে দিয়েছেন দাবি করেছেন। অনিলবাবু বলেন, “দেহটি উদ্ধারের পরে সঞ্জয়ের আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখে সন্দেহ হয়। রাতেও খাবার খায়নি। তার পরে চেপে ধরতেই সে কিশোরী খুনের কথা স্বীকার করে কাঁপতে থাকে। পুলিশকে ফোন করে সঞ্জয়কে তুলে দেওয়া হয়।” এ দিন বালুরঘাটের কুয়ারণ গ্রামে অভিযুক্ত সঞ্জয়ের পিসি শান্তি ভেন্ডা ও পিসেমশাই লুকাশ ভেন্ডা বলেন, “সঞ্জয়ের মা ভিন রাজ্যে কাজ করতে চলে গিয়েছে বাবার সঙ্গে। পঞ্চম শ্রেণিতে উঠে সঞ্জয় পড়া ছেড়ে দিয়ে চায়ের দোকানে কাজে ঢোকে। আমরা তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।” |