কোনও অধ্যাপক-গবেষক-শিক্ষক কিংবা অফিসার কাজের প্রয়োজনে আগাম টাকা নিলে এক বছরের মধ্যে তাঁর থেকে হিসেব বুঝে নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরকেই। তা যদি না-হয়, সে ক্ষেত্রে টাকা ফেরত কিংবা হিসেব বুঝিয়ে না-দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোনও ভাবেই দায়ী করা যাবে না—এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির সদস্যেরা। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কর্মসমিতির বৈঠকে তা প্রস্তাব আকারে অনুমোদনের জন্য পেশও হয়েছে। কিন্তু, মূল কমিটির সদস্যদের একাংশ ওই প্রস্তাবকে ‘নজিরবিহীন’ ও সরকারের আর্থিক নীতির পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন। |
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমীর দাস বলেছেন, “ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য কর্মসমিতির সভায় পেশ হয়েছিল ঠিকই। তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কাজেই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি গৃহীত হয়েছে, তা বলা যাবে না। সব দিক খতিয়ে দেখার অবকাশ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বিধি মেনেই সব কাজ হবে।” ঘটনা হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার-গবেষক-অধ্যাপক-শিক্ষকদের নানা প্রয়োজনে যেমন গবেষণা, আলোচনাসভা, কেনাকাটা ইত্যাদি কাজে আগাম টাকা নিতে হয়। বিধি অনুযায়ী, ওই টাকা খরচের হিসেব নথি সহকারে অর্থ বিভাগের কাছে জমা দিতে হবে। কোনও কারণে দেরি হলে অর্থ বিভাগকে তাগাদা দিয়ে তা আদায়ে উদ্যোগী হতে হবে। গবেষক-অধ্যাপক ও শিক্ষকদের একাংশ জানান, অর্থ বিভাগের তরফে সেই উদ্যোগে ঘাটতি থাকাতেই সমস্যা হচ্ছে। তবে, অর্থ বিভাগের অফিসারদের বক্তব্য, তাঁদের উদ্যোগে ঘাটতি নেই।
অধ্যাপক-গবেষক ও বিভাগীয় প্রধানদের কয়েকজনের অভিযোগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক অবসর গ্রহণের পরে প্রয়াত হয়েছেন, তারপরে তাঁর বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে আগাম নেওয়া লক্ষাধিক টাকার হিসেব জমা দিতে বলা হয়েছে। আবার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দূরশিক্ষার বিভাগীয় প্রধান থাকার সময়ে আগাম হিসেবে নেওয়া লক্ষাধিক টাকার হিসেব জমা দেননি। দূরশিক্ষা দফতরের কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিভাগীয় প্রধান একই সঙ্গে নানা দায়িত্ব পালনের কারণে ওই হিসেব জমা দিতে পারেননি। অথচ অর্থ বিভাগের তরফে তাঁর কাছে তাগাদাও করা হয়নি। অর্থ বিভাগের যুক্তি, বারবার তাগাদা দিয়েও সাড়া না-মেলায় অন্তত ১০ লক্ষ টাকার হিসেব মেলেনি। তা ছাড়া, ১৮টি শূন্যপদ থাকায় তাঁরা কাজ করানো নিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন বলে অর্থ বিভাগের পক্ষে জানানো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অগস্টে কর্মসমিতির যে সদস্যেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তাঁদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কেউ আগাম নিলে তাঁর কাছ থেকে এক বছরের মধ্যে অর্থ দফতরকেই হিসেব বুঝে নিতে হবে। তা যদি না-হয়, যিনি টাকা নিয়েছেন, তাঁর আর কোনও দায় থাকবে না। কিন্তু মূল কর্মসমিতির বৈঠকে একাধিক সদস্য-সদস্যা জানান, সরকারি টাকা কেউ আগাম হিসেবে নিলে হিসেব বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব মূলত তাঁরই। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সদস্যেরা তাঁদের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা কার্যকরী হলে ফি বছর লক্ষ-লক্ষ সরকারি টাকা তামাদি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কর্মসমিতির সদস্য ময়নাগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ দেবকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “বেনজির প্রস্তাব। যিনি আগাম টাকা নেবেন, এক বছর পেরোলে তাঁর আর কোনও দায় থাকবে না? এটা হতে পারে না। এমন চললে আমজনতার টাকা নয়-ছয়ের আশঙ্কা বাড়বে। সে জন্য আমরা আপত্তি করেছি। আশা করব ওই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করে হবে।” |