|
|
|
|
|
শরীরের ঠিক রিং‘টোন’ |
‘টোন্ড’ বডি বা টান-টান পেশি না থাকলেই শরীরে অকালবার্ধক্য, হাজার অসুখ।
মোকাবিলায় জিম, যোগাসন, বাড়ির ব্যায়াম। ফিটনেস এক্সপার্ট বিশ্বজিৎ তপাদার |
অসময়ে যদি দেহের পেশি ঢিলেঢালা হতে শুরু করে, তা হলে প্রকৃত বয়সের তুলনায় অনেক বেশি বয়স্ক দেখায়। জন্মতারিখ যা-ই হোক, তখন বয়স ধরে রাখা মুশকিল। শরীর মজবুত ও টানটান থাকলে, শারীরিক সক্ষমতা বেশি থাকে, বাইরে থেকেও কমবয়সী বলে মনে হয়। যাঁরা নিজেদের ‘লুক’ নিয়ে ভাবেন, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন, তাঁদের কাছে ঢিলেঢালা, ঝুলে যাওয়া শরীর সত্যিই এক বিড়ম্বনা।
আজকাল সবাই নিজের সুন্দর গড়ন ও দীর্ঘস্থায়ী যৌবন চান। কিন্তু তার জন্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে হবে। ফিট থাকতে চাইলে শরীরের পেশিগুলো আলগা হতে দেবেন না। মনে রাখবেন, শরীরের নমনীয়তা, মাংসপেশির প্রসারণ ক্ষমতা, কোমলতা, এগুলো এক জিনিস, আর থলথলে শিথিল ভাবটা আর এক জিনিস। এদের একটার সঙ্গে আর একটাকে গুলিয়ে ফেলবেন না। অনেক সময় মোটা থেকে রোগা হয়ে যাওয়ার পরও শরীরে টোনিং সংক্রান্ত সমস্যা আসে, চর্বি ঝরে গিয়ে চামড়া ও পেশি শিথিল হয়ে যায়। এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকুন। টোন্ড বডি হল ছিপছিপে, টানটান গড়ন। এতে শরীরে মেদের মাত্রা কম থাকবে, নমনীয়তা বজায় থাকবে, পেশিগুলি বেশি বড় দেখাবে না, সুন্দর ভাবে বোঝাও যাবে।
মহিলাদের ক্ষেত্রেও বডি টোনিং অপরিহার্য। দেহে অতিরিক্ত মেদ না থাকলে আপনার সাজগোজ, চুলের স্টাইল আরও আকর্ষণীয় দেখাবে। টোন্ড চেহারা হলে ত্বকে তারুণ্যও ফুটে ওঠে। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমলেই টোনের ওপরে সরাসরি প্রভাব পড়ে। ব্যস্ত জীবনযাত্রায় শরীরচর্চার অনভ্যাস ও ভুল ডায়েটের জন্য মেদ জমে ওজন বাড়লে, শরীরের টানটান ভাবটাই নষ্ট হয়ে যায়। বয়স ত্রিশ পেরোতেই শরীরে বয়সের কামড় পড়তে শুরু করে। মা হওয়ার পর, কোনও অপারেশনের পরে এই টোনের সমস্যা বিরাট আকার নিতে পারে, এ দিকে টোন কমে গেলে শরীরের নিজস্ব ভঙ্গিমাটিও নষ্ট হয়ে যায়। তখন দ্রুত কিছু ব্যবস্থা না নিলে যত দিন যাবে, সমস্যা বাড়বে।
অন্য দিকে, বয়স বৃদ্ধির অর্থ শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গেই টোন-এর নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র মস্তিষ্কেরও বয়স বেড়ে যাওয়া। প্রকৃতির নিয়মেই বয়স বাড়বে, বয়সের চিহ্ন হিসাবে দেহে ঢিলেঢালা ভাবও আসবে। কিন্তু এই ঢিলেঢালা ভাবটা প্রতিরোধ করাই স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যসচেতন মানুষের লক্ষ্য। এই শারীরিক শিথিলতাকে পিছিয়ে দিতে চাই ঠিক পরিকল্পনা। |
টোনিং এক্সারসাইজ: কী ভাবে |
টোনিং এক্সারসাইজের ধারণাটাই হল পেশিগুলির অন্তর্বর্তী টেনশনকে ধাপে ধাপে ব্যবহার করে টোন বাড়িয়ে তোলা। পেশির টোন বাড়াতে চাইলে তার নির্দিষ্ট যা কাজ, সেই কাজকে বাধা দিয়ে ব্যায়াম করতে হবে, আর এই বাধার পরিমাণটা কখনও অতিরিক্ত হলে চলবে না। একগাদা ওজন তুলে টোন বাড়ানোর চেষ্টার কোনও প্রয়োজন নেই। মাংসপেশি আকারে বাড়িয়ে তোলা, আর শুধু টোন বাড়ানো এক জিনিস নয়। কেউ যদি জিমে গিয়ে বডি টোনিং করতে চান, তা হলে যে কোনও ভাল জিমেই আপনার ‘নেকলাইন’ থেকে শুরু করে পায়ের কাফ মাসল অবধি টোন বাড়িয়ে তোলার সমস্ত সুবিধেই পাবেন। অনেকেই জিমের মেশিনগুলিকে বাদ দিয়ে শরীরের টোন বাড়াতে চান। তাঁদের জন্য ‘ইলাস্টিক ব্যান্ড’, ‘রাবার স্ট্র্যাপ’, ‘ওয়েট কাফ’, ‘ডাম্বেল’, ‘কেট্লবেল’, ‘সুইস বল’ এবং ‘মেডিসিন বল’ ইত্যাদি খুবই কাজে আসতে পারে। |
চাইলে বাড়িতেই |
শুধু যদি খালি হাতেই টোন বাড়িয়ে তুলতে চান, তা-ও সম্ভব। সে ক্ষেত্রে আপনার নিজের শরীরটাকেই একটা জিম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বাড়িতে টোন বাড়িয়ে তোলার ব্যায়ামগুলি করার সময় নিজের শরীরের ওজনগুলি তো ব্যবহার করবেনই, তার সঙ্গে হালকা ওজনের হাতের সামনে যা পাবেন (বই, জলের বোতল, জলের বালতি, ব্যাগ, ইট) তা দিয়েও একটা বাধার সৃষ্টি করে টোন বাড়িয়ে তোলার ব্যায়ামগুলি করতে পারেন। শুধু খেয়াল করবেন, যেন একই মাংসপেশির ব্যায়াম টানা পর পর দু’দিন না হয়।
প্রথম প্রথম দশ থেকে বারোটা রিপিটেশন-এ তিনটে করে সেটে ব্যায়াম করুন। যে হেতু বাধার বিপরীতে মাংসপেশিকে সংকুচিত এবং প্রসারিত করাটাই আসল ব্যাপার, তাই খুব বেশি কলাকৌশল না জানলেও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। শুধু শুরু করার আগে শরীরের প্রতিটা কার্যকর মাংসপেশির স্বাভাবিক কাজগুলির একটা মূল্যায়ন করে নিন। প্রয়োজনে একটা কাগজে লিখে নিয়ে শুরু করুন। |
যোগ, যে নামেই ডাকি |
বেশ কিছু যোগাসনে নিজের দেহের ওজনকে ব্যবহার করতে হয়। টোনিং-এর জন্য যোগাসনও কাজে আসে। বিদেশে ‘পাওয়ার যোগা’ বলে যা জনপ্রিয়, তা আলাদা বিশেষ পদ্ধতি নয়। মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে দেহের ওজনকে ব্যবহার করা যোগ ভঙ্গিমাগুলিকে বিশ্রাম কম রেখে করে যাওয়ার পদ্ধতিকেই ‘পাওয়ার যোগা’ নাম দেওয়া হয়েছে। যোগশাস্ত্রে এ রকম আলাদা করে ‘পাওয়ার যোগ’ বলে কোনও কথা নেই। এটা সম্পূর্ণ আধুনিক ফিটনেস চর্চারই ফসল।
এছাড়া, হালকা ওজনের কেট্লবেল এবং ডাম্বেল দিয়ে একটা ফোর্স ব্যবহার করে দুটো ভিন্ন মুভমেন্ট-এর অন্তর্বর্তী সময়কে কমিয়ে দিয়ে টোন বাড়ানোর জন্য পাওয়ার টোনিং এক্সারসাইজ এক কথায় অনবদ্য। টোন বাড়াতে এই ব্যায়ামগুলির সবচেয়ে বড় সুবিধে হল, একসঙ্গে অনেকগুলি পেশির মুভমেন্ট করা যায়, এবং দেহের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফাংশনাল মাসকুলার ফিটনেস বাড়িয়ে তুলে অল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত টোনে ফেরানো যায়।
সারা শরীরে টোন বাড়ানোর সঙ্গে আপনার মুখমণ্ডলকেও টান টান রাখতে হবে। প্রত্যেকের মুখেই কমবেশি প্রায় একশোখানা মাংসপেশি রয়েছে, যার সবগুলিই অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি। তাই একটা টোন কমলেই ঝুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত ‘ফেশিয়াল ওয়ার্কআউট’-এর অভ্যাস একটা ‘ন্যাচরাল ফেসলিফ্ট’ হিসেবে কাজ করবে এবং গলা ও মুখকে ঠিক টোনে রাখতে সাহায্য করবে।
|
কেন হয়, কী করবেন |
|
কী কী কারণে টোন নষ্ট হয়
• অতিরিক্ত স্ট্রেস, অবসাদ, মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ, শিরদাঁড়ায় সমস্যা, অত্যধিক মদ্যপান, ধূমপান, অনিদ্রা এবং অপুষ্টি পেশিগুলির টোন নষ্ট করে দেয়।
টোন মানে টান-টান
• টোন কথাটি টেনশন-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। মাংসপেশির দুটো দিক থাকে। এক দিক থেকে শুরু, অন্য দিকে গিয়ে শেষ। দুই দিকের মধ্যে সমপরিমাণ টোন বজায় রাখার জন্য ভেতরে টেনশন তৈরি হয়। তার থেকেই টোন-এর সৃষ্টি। এটা সুস্থ শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মেরুদণ্ড ও তার মধ্যে থাকা স্নায়ুগুলি। তাই টোন ঠিক ঠিক বজায় রাখতে হলে ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডকে পুরোপুরি সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে হবে।
ভয় অসুখেরও
• শরীর টোন্ড না হলে অল্প বয়সেই বুড়োটে ছাপ পড়ে যায়, পেশি ঝুলে যায়। স্বাভাবিকের থেকে মাংসপেশি অতিরিক্ত শিথিল হয়ে গেলে অর্থোপেডিক সমস্যাও দেখা দেয়। পেশির টোনের সঙ্গে তার কর্মক্ষমতার সম্পর্ক নিবিড়। তাই বেশি শিথিল শরীর কোমরে ব্যথা, স্লিপ্ড ডিস্ক, ঘাড়ে ব্যথা, সায়াটিকা, হাঁটুর বাত, ঘন ঘন পা মুচকে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলিকেও ডেকে আনে।
শুধু এক্সারসাইজ নয়
• ‘বডি টোনিং এক্সারসাইজ’, ‘স্পাইনাল এক্সারসাইজ’, মনের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে মেডিটেশন এবং সঙ্গে উপযুক্ত নিউট্রিশন, যেমন পর্যাপ্ত পানীয় জল, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন (বিশেষ করে, ডাইজেসটিভ অ্যামাইনো অ্যাসিড যুক্ত খাদ্য, হোয়ে প্রোটিন, সয়া প্রোটিন) ভিটামিন ই এবং স্নায়ুর সতেজতার জন্য ভিটামিন বি যুক্ত খাদ্যের একটা ঠিক মেলবন্ধন চাই। |
|
যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫ |
|
|
|
|
|