মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলে আসছেন, গর্ভবতী ও প্রসূতিদের যথাযথ পুষ্টি না-হলে সদ্যোজাতদের মৃত্যু আটকানো যাবে না। সেই অনুসারে রক্তাল্পতায় ভোগা হবু মা এবং সদ্যপ্রসূতিদের জন্য এক হাজার দিনের বিশেষ পুষ্টি প্রকল্প শুরু করতে চলেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ওই প্রকল্পে টাকা জোগাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। পাইলট হিসেবে পুরুলিয়ার পাঁচটি ব্লকে প্রকল্প শুরু হবে। সফল হলে অন্যান্য জেলাকেও আনা হবে এর আওতায়। শুক্রবার মহাকরণে মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্য, পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতর এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে।
নয়া প্রকল্পে কাজ হবে কী ভাবে? স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, এক হাজার দিনের পুষ্টি প্রকল্পে গর্ভাবস্থার ১৩ সপ্তাহ থেকে শুরু করে প্রসবের পরে ছ’মাস পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলের রক্তাল্পতায় ভোগা মায়েদের সপ্তাহে পাঁচ দিন রান্না করা পুষ্টিকর খাবার নিখরচায় দেওয়া হবে। খাবার বিতরণ করা হবে সাবসেন্টার বা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে।
এ ছাড়া কিশোরীদের জন্য থাকছে ‘সবলা’ প্রকল্প। রাজ্যের ছ’টি জেলায় ১১-১৮ বছরের ছ’লক্ষ ৮৬ হাজার কিশোরী এই প্রকল্পের (বার্ষিক বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা) অন্তর্ভুক্ত। এরা প্রতিদিন মাথাপিছু ১৭০ গ্রাম খাবার পাবে, যাতে ৬৬৮ গ্রাম ক্যালোরি এবং ১৫৯ গ্রাম প্রোটিন থাকবে।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বৈঠকে তাঁর দফতরের একটি ‘সাজেশন পেপার’-ও পেশ করেন। আগামী এক বছরে মূলত মা-শিশু ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা এবং পুষ্টির জন্য কী কী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, তার সবিস্তার বিবরণ আছে তাতে। স্কুল-স্বাস্থ্য এবং শহরাঞ্চলে মা-শিশুর স্বাস্থ্য পরিষেবাকেও তাতে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের ৯৯টি পুরসভায় কিছু দিনের মধ্যেই ৩৯৭টি শহুরে স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। এই প্রকল্প কেন নেওয়া হল, কী ভাবে এর কাজ হবে, কত দিনে শেষ হবে সবই জানানো হয়েছে ওই পেপারে।
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী ১৫-৫০ বছরের মহিলাদের ৬৩ শতাংশ রক্তাল্পতায় ভুগছেন। ‘সাপ্লিমেন্টারি নিউট্রিশন কভারেজ’-এর আওতায় রয়েছেন ৪২ শতাংশ মহিলা। চন্দ্রিমাদেবী বলেন, “জুলাই থেকেই আমরা রক্তাল্পতা রোধে একটা বড় কর্মসূচি শুরু করেছি। সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন রেশন দোকান থেকে আমরা এ বার পুষ্টি সংক্রান্ত প্রচারপত্র বিলি করব।” মহাকরণ সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের নেতৃত্বে সচিব পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ, পঞ্চায়েত, স্কুলশিক্ষার মতো একাধিক দফতরের সচিবেরা ওই কমিটিতে আছেন। পুষ্টি এবং মা-শিশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রকল্পের তদারকি ও নজরদারির কাজ করবে নয়া কমিটি। |