বর্ষায় খরস্রোতা নদীর জলে ডুবে থাকা কজওয়ে শুধু বাঁকুড়ার রাইপুরের অমৃতপালে নয়, জঙ্গলমহলের অন্য দুই জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়াতেও রয়েছে। কিন্তু, অমৃতপালে ভৈরববাঁকি নদীর কজওয়েতে বৃহস্পতিবার ঘটে যাওয়া বাস দুর্ঘটনার পরেও ওই কজওয়েগুলিকে কবে উঁচু করা হবে, তার নিশ্চিত জবাব মেলেনি প্রশাসনের কাছে। তবে ৮টি প্রাণ যাওয়ার পরে সেতু তৈরি করার ব্যাপারে মন্ত্রীর আশ্বাস মিলেছে।
শুক্রবার ভৈরববাঁকি নদীর জল নেমে যায়। উদ্ধার হয় একটি শিশু-সহ ওই বেসরকারি বাসের আরও ৬ যাত্রীর দেহ। এ নিয়ে দু’দিনে মোট ৮ জনের দেহ উদ্ধার হল। আসানসোল ও দুর্গাপুর থেকে আসা বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং ডুবুরিরা ওই নদীতে এ দিন তল্লাশি চালান।
যাত্রীদের বারণ উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার অমৃতপালের কজওয়েতে বাস নামিয়েছিলেন চালক। তার মাসুল গুনতে হয়েছে নিরীহ যাত্রীদের। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দেহ মিলেছে বারিকুলের ফুলকুসমার বাসিন্দা মৃণালকান্তি সাহু (২৯), ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা সুমন্ত হালদার (২৪) ও অজিত মুদি (২৩), বেলপাহাড়ির ডড়রা গ্রামের জয়ন্তী শবর (২৪) এবং হুগলির বেঙ্গাইয়ের বাসিন্দা বিভাস প্রামাণিকের (৩৪)। রাইপুরের একপাল, আমবাড়ি, পাপড়পুর, কাঁটাপাল থেকে ওই ৫ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লালগড়ের লছিপুরে মেলে বছর তিনেকের এক অজ্ঞাতপরিচয় মেয়ের দেহ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন মহাকরণে বলেন, “দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবার পিছু রাজ্য সরকার ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে।” |
উদ্ধার কাজ ঠিকমতো না হওয়ার অভিযোগে এবং অমৃতপালে ওই কজওয়ের বদলে উঁচু সেতু নির্মাণের দাবিতে এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৪ ঘণ্টা ফুলকুসমা বাজারে বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলার বিধায়ক তথা নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং প্রশাসনিক কর্তাদের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। অবরোধে সামিল প্রবীর ঘোষাল, উদয় সেন, নিমাই কিস্কুদের ক্ষোভ, “প্রশাসন আগেও ওই কজওয়ে উঁচু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এত দিন সেই কাজ হয়নি বলেই ৮ জনের প্রাণ গেল!” ওই কজওয়েতে ফি বর্ষায় নদীর জল বাড়লেই দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগেও কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। বৃহস্পতিবারই মহাকরণে উদ্ধারকারীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গে উদ্ধারকারীদের কয়েকজনের বক্তব্য, “নদীর উপর স্থায়ী সেতু তৈরি করে দেওয়া হলে সেটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার।”
টানা বৃষ্টি হলেই কেবল মাত্র ওই নদীগুলিতে কয়েক দিন জল থাকে বলে মাঝখানে ঢালু কংক্রিটের এই কজওয়ে অনেক বছর আগে তৈরি হয়েছিল। বাঁকুড়া জেলার খাতড়ায় কেচোন্দাঘাট, রাইপুরের সুরগি খাল, সিমলাপালের আনন্দপুর, বারিকুল ও সোনামুখীতে কয়েকটি কজওয়ে রয়েছে। কিছু কজওয়ের দু’পাশের রেলিং ভেঙে পড়েছে। বার বার দুর্ঘটনা ঘটলেও উঁচু সেতু তৈরি করা হয়নি কেন? রাইপুরেরই বাসিন্দা তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সিপিএম সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদারের অভিযোগ, “বামফ্রন্ট সরকার এবং বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের কাছে দু’দফায় আমরা অমৃতপাল-সহ তিনটি কজওয়ে উঁচু করার জন্য ‘ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট’ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু দুই সরকারই তা মঞ্জুর করেনি।” পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার অবশ্য আশ্বাস, “বিপজ্জনক কজওয়েগুলি সারিয়ে সেতু তৈরির জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলিকে প্ল্যান-এস্টিমেট দিতে বলা হয়েছে। তার আগেই দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে গেল।” মহকুমাশাসক (খাতড়া) দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “ভৈরববাঁকি নদীর কজওয়েটি উঁচু করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য পূর্ত দফতর ।” |