|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা |
বিধাননগর |
হাত বাড়ালেই জঙ্গল |
কাজল গুপ্ত |
এ যেন জঙ্গলে বাস!
বিধাননগরের প্রায় প্রতিটি ব্লকেই পড়ে আছে ফাঁকা প্লট। আর সেই প্লটে দীর্ঘ দিন ধরে গজিয়ে উঠেছে ঝোপজঙ্গল। চার দিক থেকে পড়ছে আবর্জনা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফলে ওই ফাঁকা প্লটগুলি কার্যত মশাদের ডেরায় পরিণত হয়েছে। সুপরিকল্পিত একটি উপনগরী বছরের পর বছর এই দশায় পড়ে থাকে কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এখন বলছেন, এ ভাবে জমি ফেলে রাখা যাবে না। জমির মালিকেরা কিছু না করলে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কী পরিস্থিতি বিধাননগরের?
সন্ধ্যা হলেই দ্রুত জানলা বন্ধ হয়ে যায়। মশার ধূপ জ্বলে ওঠে। অনেকে আবার মশা-প্রতিরোধী ক্রিম মেখে নেন। ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে এটাই এখন বিধাননগরের অধিকাংশ বাড়ির নিত্যদিনের ছবি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশার উপদ্রব বাড়ার অন্যতম কারণ ফাঁকা প্লট জুড়ে ঝোপজঙ্গল ও আবর্জনা। পুরসভার তরফে সে সব পরিষ্কার করার উদ্যোগ চোখে পড়ে না। যদিও পুরসভার পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
|
|
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ বছর মশাবাহিত রোগের প্রকোপ অনেক বেড়ে গিয়েছে। জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক। বিধাননগরের হাসপাতালগুলিতে জায়গা হচ্ছে না। ঠাঁই মিলছে না আশপাশের হাসপাতালগুলিতেও। ফলে মশা নিয়ন্ত্রণে পুরসভার ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। বিরোধী দল তো বটেই, খোদ নিজের দলের কাউন্সিলরদের চাপে পড়ে সচেতনতার প্রচার ও সাফাইয়ে জোর দিয়েছে পুরসভা। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, সে কাজও হচ্ছে ঢিলেঢালা ভাবে। কামান দেগেও মশা কমছে না। ফাঁকা প্লটগুলির ঝোপজঙ্গল সাফ না করলে মশা কমবে না বলে দাবি বাসিন্দাদের।
বিধাননগরের অন্যতম বড় আবাসন এলাকা রয়েছে ইই ব্লকে। এখানে বেশ কয়েকটি ফাঁকা প্লট ঝোপজঙ্গলে ভরা। এমনকী, পুরসভার মাতৃসদনের চারপাশের ফাঁকা প্লটেও জঙ্গল। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এ বছর ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে বলে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু প্লটগুলি বেশির ভাগ সময়েই জঙ্গলে ঢাকা থাকে। প্রশাসনের হুঁশ নেই। ব্লক কমিটির এক কর্তা মোক্তার আলি খান বলেন, ‘‘ব্লকের মধ্যে অনেকগুলি জায়গায় জঙ্গল রয়েছে। মশার অত্যাচারও বেড়ে চলেছে। কিন্তু জঙ্গল সাফ হয়নি।’’ যদিও স্থানীয় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের সুধীর সাহা বলেন, ‘‘প্রতিটি ওয়ার্ডেই সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আমার ওয়ার্ডেও কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত ফাঁকা প্লটগুলি পরিষ্কার করা হবে।’’
অন্য ব্লকগুলিরও প্রায় একই অবস্থা। তবে এ ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। অভিযোগ, বাসিন্দাদের একাংশ এ ধরনের ফাঁকা প্লটে আবর্জনা ফেলেন। এ কথা স্বীকার করেছেন ব্লক কমিটির কর্তারাও। যেমন, অমর্ত্য আবাসন কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ফাঁকা প্লটে বাসিন্দাদের কেউ কেউ আবর্জনা ফেলেন। আমরা এই নিয়ে প্রচারও করেছি। আমাদের আবাসন চত্বরের ঝোপ পরিষ্কার করে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েছি। কিন্তু সর্বত্র এই কাজ হয় না।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, কেষ্টপুর খাল ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল সংলগ্ন খালপাড় এলাকা জঙ্গলে ভর্তি। পাশাপাশি, একাধিক ঝুপড়িও রয়েছে।
|
|
বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল) দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘ওয়ার্ড কমিটিগুলি পুজোর আগে প্রতি বছর এই ধরনের ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করে। এর জন্য বাজেটে অর্থও বরাদ্দ করা হয়।’’ যদিও পুরকর্মীদের একাংশ জানান, অনেক সরকারি জমি ফাঁকা পড়ে আছে। খালপাড় সেচ দফতরের অধীন। এ সব জায়গা সাফ করলে সমস্যা কমবে। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ বছর শহর জুড়ে মশাবাহিত রোগ হচ্ছে। তাই সাফাইয়ের কাজে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়: ‘‘ফাঁকা প্লটে জঙ্গল সাফ করার দায়িত্ব স্থানীয় পুরসভার। তবে যাঁরা জমি নিয়েও ফেলে রাখছেন তাঁদের ইতিমধ্যেই নোটিস পাঠানো হয়েছে। জমি ফেলে রাখা যাবে না। জমির মালিকেরা কিছু না করলে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’
|
ছবি: শৌভিক দে |
|
|
|
|
|