সম্পাদকীয় ২...
নজরদারি
ঞ্চয়িতা নামক অভিজ্ঞতাটি মধ্যবিত্ত বাঙালি এখনও সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয় নাই। বহু পরিবার এখনও সেই বিপর্যয়ের ধাক্কা সম্পূর্ণ সামলাইয়া উঠিতে পারে নাই। তবে, সঞ্চয়িতা উদাহরণমাত্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিট ফান্ডে টাকা রাখিয়া সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনা এখনও ঘটিতেছে। একটি আধুনিক দেশে এমন ঘটনা কী ভাবে ঘটিতে পারে? আইনের ফাঁক গলিয়া। কোনও সংস্থা জনসাধারণের নিকট হইতে আর্থিক লগ্নি সংগ্রহ করিলেই যে তাহা ‘সেবি’ নামক নজরদারি সংস্থাটির আওতায় পড়িবে, তাহা নহে। অন্তত, এত দিন পর্যন্ত সেবি-র নজরদারি এড়াইবার পথ বিলক্ষণ ছিল। সহারা ইন্ডিয়া পরিবারের উদাহরণটি উল্লেখযোগ্য। এই গোষ্ঠীর দুইটি সংস্থা কার্যত ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের উদ্যোগ করে। কিন্তু, একটি ভিন্ন মোড়কে ‘অপশনালি ফুললি কনভার্টিবল ডিবেঞ্চার’ হিসাবে। আইনত, এই জাতীয় আর্থিক লেনদেন সেবি-র নজরদারির অধিকারসীমার বাহিরে। কেন, সেই আইনি জটিলতায় ঢুকিবার প্রয়োজন নাই, কিন্তু সেবি-কে এড়াইবার জন্যই যে এই মোড়কের দরকার পড়িয়াছিল, এক্ষণে তাহা স্পষ্ট।
বর্তমান ঘটনাটিতেই স্পষ্ট, কোন প্রকল্প সেবি-র আওতায় থাকিবে, কোনটি থাকিবে না, সেই হিসাব যথেষ্ট ঘোলাটে। বহু ক্ষেত্রেই সরকারি নজরদারি এড়াইয়া টাকা সংগ্রহের পরিমাণ বহু কোটি টাকা ছাড়াইয়া যায়। অনুমান করা চলে, এই প্রকল্পগুলিতে যাঁহারা বিনিয়োগ করেন, তাঁহাদের একটি অংশ বাস্তবে আর্থিক সংস্থাটির সহিত জড়িত। সহারার বিনিয়োগকারীর তালিকার প্রথম পৃষ্ঠাতেই ‘কলাবতী’ নাম্নী এক জনের উল্লেখ আছে। সুপ্রিম কোর্ট তাঁহার অস্তিত্ব বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন। অনুমান করা চলে, এই তালিকায়, বা অন্য সংস্থার তালিকাতেও কলাবতী নিঃসঙ্গ নহেন। কালো টাকা সাদা করিবার ইহাও এক উপায়ই বলিয়া অভিযোগ। কিন্তু এই অংশটিকে বাদ দিলে যাঁহারা পড়িয়া থাকেন, তাঁহারা মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত, এমনকী নিম্নবিত্ত মানুষ। সঞ্চয়িতার উদাহরণটি ফের স্মরণীয়। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা এই শ্রেণির মানুষদের পক্ষে কঠিন। আবার, ব্যাঙ্কে বা পোস্ট অফিসে টাকা রাখিলে যে সুদ মেলে, তাহা যৎসামান্য। ফলে, চিট ফান্ডই তাঁহাদের ভরসা। সেই ভরসা মাঝেমধ্যেই তাঁহাদের পথে বসায়, কারণ আইনের ফাঁকফোকর এই প্রকল্পগুলিকে প্রায় বিনা বাধায় যথেচ্ছ ব্যবসা করিতে সম্মতি দিয়াই রাখিয়াছে।
অনুমান, সুপ্রিম কোর্টের আদেশের ফলে পরিস্থিতি বদলাইবে। সুপ্রিম কোর্ট জানাইল, যে কোনও আর্থিক চুক্তির ক্ষেত্রেই যদি ৫০ জন বা ততোধিক মানুষ জড়িত থাকেন, তবে সেই চুক্তির নাম যাহাই হউক না কেন, তাহা সেবি-র আওতাভুক্ত হইবে। এবং, প্রকল্পের নাম নহে, তাহার কার্যপদ্ধতিই সেই প্রকল্পের চরিত্রের পরিচায়ক হইবে। অর্থাৎ, ওএফসিডি দিয়া দিয়া চিট ফান্ড ঢাকা চলিবে না। যে কোনও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেই কঠোরতম নজরদারির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সংস্থার তরফে সামান্য বেচাল দেখিলেই কঠিন হাতে তাহা সংশোধন করিতে হইবে। তাহার জন্য সেবির হাতে আরও বেশি ক্ষমতা থাকা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ কার্যত সেই ক্ষমতার কথাই বলিয়াছে। শুধু নজরদারি নহে, শাস্তির ব্যবস্থা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট জানাইয়াছে, লগ্নিকারীদের স্বার্থ রক্ষা করিতে সেবি যে কোনও সিদ্ধান্ত করিতে পারে, আর্থিক সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করিতে পারে। জরুরি সিদ্ধান্ত। যে বিনিয়োগে বৃহৎ বিনিয়োগকারীরা জড়িত, তাহা স্বভাবতই অনেক বেশি আলোয় থাকে। যে বিনিয়োগ প্রকল্প ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে, যাহার বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বিপুল কিন্তু প্রত্যেকের বিনিয়োগ অকিঞ্চিৎকর, সেই প্রকল্পগুলিই আড়ালে থাকিতে পারে। আর, তাহাতেই বিপদ হয়। এই সংস্থাগুলি যাহাতে সর্ব ক্ষণ নজরদারির আলোয় থাকে, তাহা নিশ্চিত করাই কর্তব্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.