দেশের মধ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থানে রয়েছে। গত বছর গোটা দেশে এই ধরনের যত অপরাধ হয়েছে, তার শতকরা ১২ ভাগই হয়েছে এ রাজ্যে। এমনটাই বলছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসেব। এই হিসেবের পদ্ধতি নিয়েই এ বার প্রশ্ন তুলল পশ্চিমবঙ্গ।
রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি , থানায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধের হিসেব রাখা হয়। সেখানেই গণ্ডগোল। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই ওই অভিযোগ মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়। একই ভাবে আদালতে মামলার ভিত্তিতেও অনেক সময় থানায় অভিযোগ করা হয়। পরে মামলা শেষ হলে দেখা যায়, সেই অভিযোগই খারিজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর খতিয়ানে ভুয়ো অভিযোগই অপরাধ হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে থাকে।
আজ রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের সম্মেলনে এই বিষয়ে জোর সওয়াল করেছেন নপরাজিত। তাঁর প্রশ্ন, বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির তালিকা তৈরি করে কী লাভ? ত্রিপুরা ও রাজস্থান পুলিশের ডিজি-রাও নপরাজিতবাবুকে সমর্থন জানিয়েছেন। দিনের শেষে পশ্চিমবঙ্গের যুক্তিই মেনে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ডিরেক্টর নেহচল সান্ধু। পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে কী পরিবর্তন করা উচিত তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করার বিষয়ে তিনি নীতিগত সম্মতি জানিয়েছেন।
মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে পশ্চিমবঙ্গ প্রথমে রয়েছে বলেই তাঁরা পরিসংখ্যান পদ্ধতি বদলের কথা বলছেন, এমনটা অবশ্য রাজ্যের পুলিশ কর্তারা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, বেআইনি অস্ত্র বা মাদক চালানের মামলার হিসেবই রাখে না ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো। অথচ চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত বহু অপরাধীকেই অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভা নির্বাচনের আগে বহু বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। একই ভাবে অপরাধ জগতের একটা বড় অংশই এখন দেশের বড় বড় শহরে মাদকের কারবারের সঙ্গে যুক্ত। জাতীয় স্তরে তারও কোনও পরিসংখ্যান রাখা হচ্ছে না। রাজ্য পুলিশের ডিজি পরামর্শ দিয়েছেন, অপরাধের খতিয়ান তৈরির নতুন পদ্ধতি বের করা হোক। প্রয়োজনে এনএসএসও (ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন)-কেও দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। দিনের শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুলিশকর্তারাই প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এ বিষয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে। |