কয়লা নিয়ে কংগ্রেসের গায়ে কালি ছেটাতে গিয়ে পাল্টা আক্রমণ আছড়ে এসে পড়েছে খোদ নিতিন গডকড়ীর উপরেই।
কিন্তু গডকড়ী উধাও!
গোটা বিজেপি নেতৃত্ব যখন কয়লা বণ্টন দুর্নীতির প্রসঙ্গকে পুঁজি করে লোকসভার জমি তৈরি করতে মরিয়া, তখন কংগ্রেসও ছত্তীসগঢ়ে গডকড়ীর ঘনিষ্ঠ নেতা অজয় সনচেতির সস্তায় পাওয়া কয়লা ব্লক নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানাচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সনচেতির কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। আর গডকড়ী? উত্তাল রাজনীতির গণ্ডির সহস্র যোজন দূরে এখন বিদেশে সপরিবার ছুটি কাটাচ্ছেন তিনি। স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ সকলকে নিয়েই গডকড়ী এখন কানাডা সফরে।
কয়লা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গটিই লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র কাছে শেষ ব্রহ্মাস্ত। দুর্নীতির এত বড় অঙ্ক আর সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করার এমন সুযোগ আর লোকসভার আগে পাওয়া যাবে না বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা। যে কারণে সংসদের গোটা অধিবেশনটাই স্তব্ধ করে রাখল দল। হাজারো সমালোচনার পরোয়া না করেই। সংসদের অধিবেশন আজ শেষ হওয়ার পর লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিরা আজ ঘোষণাও করে দিলেন এ বারে রাস্তায় নেমে আন্দোলন হবে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে। কিন্তু যাঁর কাঁধে আসলে দলকে পরের লোকসভায় দিল্লির মসনদে বসিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত, এমন এক সন্ধিক্ষণে দেখা নেই তাঁরই। বিজেপি-র অন্দরমহলে এই নিয়ে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এর আগেও মুম্বইয়ে আদর্শ কেলেঙ্কারিতে অজয় সনচেতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তাঁকে যখন রাজ্যসভার সাংসদ করা হল, তখনও কম বিতর্ক হয়নি। এ বারে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব যখন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তখনও গডকড়ীর ঘনিষ্ঠ নেতার জন্য খোদ বিজেপি- কেই বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে আক্রমণ করতে গিয়েও ব্যাকফুটে যেতে হচ্ছে বিজেপি-কে। অথচ দলের সভাপতির এ ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই। আমাদের এখন তাঁর হয়ে সাফাই দিতে হচ্ছে, অথচ তিনি বহাল তবিয়তে বিদেশে ছুটি কাটাচ্ছেন!”
শুধু বিজেপি-ই নয়, এমন এক সময় বিদেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য আরএসএসের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও সঙ্ঘের এক নেতা বলেন, “এই মুহূর্তে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে কংগ্রেস-বিরোধিতাকে হাতিয়ার করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়াই দলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। সাম্প্রতিক অতীতে যে ক’টি রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, তাতে বিজেপি আদৌ ভাল ফল করতে পারেননি। ফলে লোকসভায় দিল্লিতে ক্ষমতা দখলের জন্য সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণই দরকার।”
এ মাসের শেষেই দিল্লির উপকণ্ঠে বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতি ও পরিষদের বৈঠক হবে। মুম্বইয়ের গত কর্মসমিতির বৈঠকে সভাপতি পদের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। এ বার পরিষদের বৈঠকেও সেটি অনুমোদন করানো হবে। বিজেপি-তে গডকড়ী-বিরোধী এক নেতার কথায়, “সভাপতি যদি মনে করেন, দলের সংবিধান সংশোধন হয়ে গেলেই তিনি অনায়াসে ফের সভাপতি হয়ে যাবেন, এমনটি নয়। সভাপতি হওয়ার পর এমন কিছু তিনি করে দেখাতে পারেননি, যার ভিত্তিতে তিনি শুধুমাত্র সঙ্ঘের আশীর্বাদ নিয়ে লাগাতার সভাপতি থেকে যাবেন।”
কিন্তু গডকড়ী-ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, সভাপতি একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কানাডা গিয়েছেন। এই সফরের কর্মসূচিটি অনেক মাস আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। সফর বাতিল করা সম্ভব ছিল না বলেই তিনি সপরিবার সেখানে গিয়েছেন। |