ঝিমিয়ে থাকা শেয়ার বাজারে জিয়ন কাঠি ছোঁয়াল ইউরোপ নিয়ে সাময়িক স্বস্তি। কারণ, মূলত তার জেরেই শুক্রবার এক লাফে সেনসেক্স উঠল ৩৩৭.৪৬ পয়েন্ট। দিনের শেষে থিতু হল ১৭,৬৮৩.৭৩ অঙ্কে। ১০৩.৭০ পয়েন্ট চড়ে ৫,৩৪২.১০ অঙ্কে পৌঁছে গেল ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্টি-ও। তবে বাজারের এই চাঙ্গা ভাব আগামী দিনে কতটা বজায় থাকবে, তা মূলত দেশীয় শিল্পের হাল, সংস্কারে গতি আমদানি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে বলেই বিশেষজ্ঞদের দাবি।
শেয়ার-সূচকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ দিন বেড়েছে টাকার দামও। বৃহস্পতিবার ২৫ পয়সা বাড়ার পর এ দিনও ডলারের সাপেক্ষে তার দর বেড়েছে ৩০ পয়সা। লেনদেন শেষে মার্কিন মুদ্রার বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে ৫৫.৩৬ টাকা। গত দু’সপ্তাহে যা সর্বোচ্চ।
ইউরোপীয় সঙ্কটের ফাঁস সামান্য আলগা হওয়ার আশা বৃহস্পতিবারই সাড়া ফেলেছিল অতলান্তিকের দু’পারে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ তো বটেই, উঠেছিল মার্কিন শেয়ার বাজারও। এ দিন আবার সেই সূত্র ধরেই ঊর্ধ্বমূখী ছিল ভারত-সহ এশীয় বাজারগুলি। যার সূত্রে এ দিন উত্থানের মুখ দেখেছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, টাটা স্টিল, টাটা মোটরস-এর মতো ব্লু-চিপ সংস্থাগুলি। এক দিনে লগ্নিকারীদের পকেটে এসেছে মোট ৮৫ হাজার কোটি টাকা। তবে এখনই পেট্রোলের দাম না বাড়ায় পড়েছে তেল সংস্থাগুলির দর।
ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের (ইসিবি) কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই মারিও দ্রাঘির প্রতিশ্রুতি ছিল, যে কোনও মূল্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-কে ভাঙতে দেবেন না তিনি। টিকে থাকবে ইউরোপের ১৭টি দেশের অভিন্ন মুদ্রা ইউরো-ও। কিন্তু গ্রিস, স্পেন, পর্তুগাল একের পর এক দেশের অর্থনীতির বেহাল দশায় সেই প্রতিশ্রুতি কতটা টিকবে, তা নিয়ে সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন অনেকে। আশঙ্কা করছিলেন ইইউ ভাঙার। বৃহস্পতিবার দ্রাঘির ঘোষণায় সেই আশঙ্কা অনেকটাই ফিকে হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
দ্রাঘি জানিয়েছেন, স্পেন, পর্তুগালের মতো ধুঁকতে থাকা দেশগুলির কাছ থেকে কার্যত কোনও সীমা না-রেখেই বন্ড কিনবে ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সব দেশগুলির ধার নেওয়ার যোগ্যতা তলানিতে ঠেকায় বাজারে বন্ড বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারছিল না তারা। কোনও ক্রমে ঋণ জোগাড় করা গেলেও গুনতে হচ্ছে চড়া সুদ। এখন ইসিবি পাশে দাঁড়ানোয় সেই ছবি সম্ভবত বদলাবে। ফের জোড়া লাগবে তাদের নষ্ট হতে বসা বন্ড-বাজার। ঋণে সুদ কমবে। ফলে কমবে তহবিল সংগ্রহের খরচও। ফলে ওই দেশগুলির বেহাল অর্থনীতি মেরামতে যথেষ্ট সহায়ক হবে দ্রাঘির এই ‘ক্রেডিট কার্ড’।
তবে ইসিবি-র এই দাওয়াই দীর্ঘ মেয়াদে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে যথেষ্ট। যেমন অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এর জন্য দেশগুলিকে যে কৃচ্ছসাধনের পথে হাঁটতে হবে, তা না-পসন্দ হবে তাদের। তৈরি হবে গ্রিসের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা। তা ছাড়া, ভারতের বাজারের জন্য শুধু ইউরোপ নিয়ে আশার আলোয় চিড়ে ভিজবে না। বরং সংস্কারের হাত ধরে দেশের অর্থনীতির হাল কতটা ফিরছে, তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে এ দেশের বাজার।
|
আজ শনিবার বিশেষ লেনদেনের জন্য খোলা থাকবে শেয়ার বাজার। বিএসই এবং এনএসই-তে কেনাবেচা চলবে সকাল ১১.১৫ থেকে দুপুর ১২.৪৫ পর্যন্ত। হঠাৎ কোনও বিপর্যয়ের পর লেনদেন দ্রুত স্বাভাবিক করতে একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিএসই। তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। |