দেশ জুড়ে তল্লাশি, ৫ সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা
ঘনিষ্ঠরা জড়ানোয় অস্বস্তি কংগ্রেসে
য়লা খনির ব্লক বণ্টনে দুর্নীতি হয়ে থাকলে মনমোহন সরকার যে তাতে প্রশ্রয় দেবে না, তা বোঝাতে সিবিআইয়ের তদন্তকে ঢাল করতে চাইছিল মনমোহন সরকার। কিন্তু সিবিআইয়ের তদন্তের ধাক্কায় আজ কংগ্রেসই অস্বস্তিতে পড়েছে। কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে আজ দিল্লি, মুম্বই ও কলকাতা-সহ ৩০টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ৫টি বেসরকারি সংস্থা এবং তার কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সিবিআই। যে তালিকায় কংগ্রেসের সাংসদ বিজয় দারদা এবং তাঁর ভাই, মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী রাজেন্দ্র দারদার নামও রয়েছে। এ ছাড়াও কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু শিল্পপতির নামও উঠে এসেছে। যার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি-র আক্রমণের মুখে পড়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। অস্বস্তিতে পড়ে কেন্দ্রের কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল জবাব দিয়েছেন, “বিজেপি অন্তত সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা মেনে নিচ্ছে, এটাই ভাল খবর।”
সিবিআই আজ যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন খোদ কয়লামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা ইউপিএ সরকারের অস্বস্তির আর এক বড় কারণ, কার্যত সেই অস্বস্তি এড়াতেই কয়লামন্ত্রী জয়সওয়াল বলেছেন, “দেশের সকলেই আমার ঘনিষ্ঠ। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কয়েক জন জয়সওয়াল রয়েছেন। সে জন্যই প্রশ্ন উঠছে। তা হলে বলতে হয়, সব জয়সওয়ালই আমার আত্মীয়।” বিজেপি-র আক্রমণের পাল্টা হিসেবে কংগ্রেসের শিবির থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, যে পাঁচটি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তার মধ্যে বিজেপি ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের মালিকানাভুক্ত ‘নবভারত পাওয়ার’ নামে একটি সংস্থাও রয়েছে।
অস্বস্তিতে কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল। ছবি: পি টি আই
কলকাতায় আজ তল্লাশি চালানো হয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দু’টি সংস্থার দফতরে। একই সঙ্গে অভিযান চালানো হয় মহারাষ্ট্রের নাগপুর, ইয়ৎমাল, মধ্যপ্রদেশের ভিলাই, রায়পুর, ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, রাঁচি, ছত্তীসগঢ়ের কিছু এলাকা, অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদ, মুম্বই ও দিল্লিতেও। সিবিআই সূত্রের খবর, যে কয়েকটি সংস্থা এবং ব্যক্তির নামে এফআইআর করা হয়েছে তার মধ্যে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ‘জাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্যাপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘ভিনি আয়রন অ্যান্ড স্টিল উদ্যোগ লিমিটেড’ নামে দুই সংস্থার নামও রয়েছে। দুই সংস্থার দফতর একেবারে পাশাপাশি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই দুই দফতরে হানা দিয়ে বেশ কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছেন সিবিআই অফিসাররা। সংস্থা সূত্রের খবর, জাস-এর মালিকানা যে জয়সওয়াল পরিবারের হাতে তার তিন সদস্য এবং ভিনি-র তুলসিয়ান পরিবারের ৭ জনের নাম রয়েছে এফআইআরে। তবে, তাঁদের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কয়েক জনকে।
কয়লামন্ত্রীর দাবি, ইউপিএ সরকারের নীতিতে কোনও ভুল ছিল না। কিন্তু কোনও সংস্থা যদি ভুল নথিপত্র দিয়ে প্রতারণা করে কয়লা খনির লাইসেন্স নিয়ে থাকে, সিবিআই তার তদন্ত করবে। লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি দোষীদের জেলেও পোরা হবে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কোনও আমলা এর মধ্যে জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে। তবে কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কয়লা খনির ব্লকের লাইসেন্স পেয়েছেন এবং তার থেকে লাভ করেছেন, তা মানতে চাননি কয়লামন্ত্রী।
দায় অস্বীকার করেছেন কংগ্রেস সাংসদ দারদাও। তাঁর বক্তব্য, “আমি নৈতিক ভাবে নিজের কাছে সাফ। কারণ আমি নিজে সংস্থার ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলাম না।” সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, দারদার নিজের সংস্থা ‘জেএলডি যাভৎমল এনার্জি’ ছাড়াও সন্দেহের তালিকায় থাকা আরও একটি সংস্থা, জেএএস ইনফ্রা ক্যাপিটালেরও কিছু শেয়ারের মালিক বিজয় দারদা ও তাঁর পুত্র। দারদার পাশাপাশি মনোজ জয়সওয়াল নামে আরও এক কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর নামেও সিবিআই মামলা করেছে। এ ছাড়া ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মধু কোড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত সংস্থা ‘ভিন্নি আয়রন অ্যান্ড স্টিল’-এর নামও এফআইআরে রয়েছে।
সিবিআইয়ের তদন্তে এই ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসায় বিজেপি সমস্ত কয়লাখনির ব্লক বণ্টন বাতিল করার দাবি তুলেছে। কিন্তু কয়লামন্ত্রী সে দাবি খারিজ করে যুক্তি দিয়েছেন, প্রত্যেকটি কয়লাখনির ব্লক বণ্টনের বিষয় আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখছে আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী। তাদের রিপোর্টের আগেই সমস্ত লাইসেন্স বাতিল করে দিলে এই লাইসেন্স পাওয়া সংস্থাগুলি আদালতে যাবে এবং সরকারি সিদ্ধান্তের উপর সহজেই স্থগিতাদেশ আদায় করে নেবে। এতে বিজেপি-র দু’দিক থেকে লাভ হবে। এক দিকে তাদের রাজনৈতিক কার্যসিদ্ধি হবে। অন্য দিকে বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারের সুপারিশের ভিত্তিতেই লাইসেন্স পাওয়া এই সংস্থাগুলি বেআইনি ভাবে কয়লা খনি পেলেও নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.