রাজকুমারের দেখা মিলল এত দিনে।
এ বার আর নগ্ন নয়, পুরোদস্তুর স্যুট-টাইয়ে সুসজ্জিত। লন্ডনে আজ একটি সমাজসেবামূলক অনুষ্ঠানে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারিকে।
লাস ভেগাসের হোটেলে হ্যারির প্রমোদ-রজনী উদ্যাপনের ছবি নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। রাজপরিবারের অস্বস্তি দূর করতে তাই এ বার ভাবমূর্তি উদ্ধারে সচেষ্ট সিংহাসনের তৃতীয় দাবিদার।
সমাজসেবামূলক সংস্থাটির সঙ্গে ২০০৭ সাল থেকেই যুক্ত হ্যারি। কিন্তু লাস ভেগাস-পর্ব পরবর্তী রাজকুমার কী ভাবে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরেন, তা দেখতে আগ্রহের অভাব ছিল না। হ্যারির সামনে সেই রাত নিয়ে মুখ খুলবে কে? প্রশ্নটা সবার মনেই উঁকি দিচ্ছিল।
লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ছ’বছরের গালফোলা অ্যালেক্স লোগান সেই রকমই ছক কষেছিল মনে মনে। একটি টিভি চ্যানেলে কাল সে বলেও দেয়, “হ্যারি সামনে এলে বলব, তোমাকে জামাকাপড়ে দেখে খুব ভাল লাগছে!” কিন্তু রাজকুমারকে ‘ফাঁদে’ ফেলা গেল না। কথাটা কোনও ভাবে পৌঁছে গিয়েছিল রাজকুমারের কানে।
তাই যখন সুযোগ এল তখন অ্যালেক্সকে চমকে দিয়ে তার দিকে আঙুল তুলে হ্যারি বলে উঠলেন, “মায়ের দিকে তাকাও। মনে হচ্ছে তোমার কিছু একটা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু মা বকবে বলে ভয় পাচ্ছো। আমি শুনেছি কাল তুমি দুষ্টুমি করে টিভিতে কিছু বলেছো। তবে এখানে সে সব কথা একদম নয়!” এর পরে অ্যালেক্স কী করবে ভেবে না পেয়ে নিজের বল নিয়ে খেলে, নিজের খেলনা পেঙ্গুইন নিয়ে হ্যারির সঙ্গেও মজা করে। |
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে রাজকুমার হ্যারি।
মাঝখানে অ্যালেক্স লোগান। মঙ্গলবার লন্ডনে। ছবি: এ এফ পি। |
অসুস্থ শিশুদের মধ্যে সাহসীদের খুঁজে পুরস্কার দেয় সমাজসেবামূলক সংস্থাটি। শিশুদের এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন হ্যারি। আর তাদের অত্যুৎসাহী বাবা-মায়েদের জন্যই হয়তো লাস ভেগাসের সেই রাতের প্রসঙ্গ মজা করে ছুঁয়ে যান তিনি। বলেন, “তোমাদের নিয়ে সাধারণ শব্দে কিছু বলার নেই আমার। তোমরা অসাধারণ। কিন্তু কখনও লজ্জা পেও না। আমিও সেটাই চেষ্টা করি!” বক্তব্য শেষ হতেই সামান্য নীরবতা। তার পরে হই হই হাসি। হাসলেন হ্যারি নিজেও।
রাজকুমারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, নগ্ন ছবি প্রকাশের পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন হ্যারি। আর এই রকম সুন্দর অনুষ্ঠান যদি ওই বিতর্কিত বিষয়ের জেরে পণ্ড হয়ে যায়, সেটা ভেবেও বিব্রত ছিলেন তিনি।
তবে পাঁচ বছরের পুঁচকে হোপ হিলিস যখন হ্যারির দু’গাল চেটে দিল তখন লজ্জায় লাল রাজকুমার। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ-সহ নানা জটিল রোগে ৫০টিরও বেশি অস্ত্রোপচার হয়েছে হোপের। সেই মেয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরার পরে অভিভূত হ্যারি।
উদ্দাম রাত শেষমেশ কোনও ভাবেই অনুষ্ঠানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তাতেই তৃপ্ত রাজকুমার। স্বস্তির হাওয়া রাজপরিবারেও। |