|
|
|
|
|
|
 |
মুখোমুখি ১... |
|
বোল বচ্চন করে লাভ নেই, কাজ করে যাও |
বললেন জিৎ। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায় |
পত্রিকা: ‘আওয়ারা’ রিলিজ হওয়ার পরেই বলেছিলেন, আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট। তা হলে ‘আওয়ারা’ কার জন্য হিট হল? আপনার জন্য, না ডায়লগের জন্য, না পরিচালকের জন্য, নাকি মোহনা আর আপনার ভাবী বেবির জন্য?
জিৎ: (হেসে) দর্শকদের জন্য। ওরাই সব। ওরা না থাকলে বাকি কোনও কিছুরই মানে নেই।
পত্রিকা: ছবিটা সুপারহিট হওয়ার পর সবাই বলছে, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় যদি কামব্যাকের মোহিন্দর অমরনাথ হন, আপনি তা হলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
জিৎ: হা হা হা, তাই বলছে? কিন্তু কী জানেন, কামব্যাক শব্দটা নিয়ে আমার প্রবল আপত্তি আছে।
পত্রিকা: কেন? এত বড় হিট হওয়ার পরেও বলবেন আপনার কামব্যাক হয়নি? লোকে বলছেন----‘জিৎ আবার এক নম্বরে।’
জিৎ: দেখুন, আমার যদি সত্যি কামব্যাক হয়ে থাকে তাহলে সেটা হয়েছে ‘ওয়ান্টেড’-এর সময়। ‘আওয়ারা’ সুপারহিট হয়েছে, চারিদিকে সবাই প্রশংসা করছে। আমি খুশি। কিন্তু কামব্যাক হয়েছে এটা আমি মানতে রাজি নই।
পত্রিকা: আপনি মানতে নাও রাজি হতে পারেন, কিন্তু ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের শ্রীকান্ত মোহতা সেদিন বলছিলেন, ভেঙ্কটেশ ব্যানারের যে ছবি সবচেয়ে বেশি টাকা উপার্জন করেছে তা হল ‘আওয়ারা’।
জিৎ: বাহ, এটা শুনতে সত্যি খুব ভাল লাগল। আসলে কী জানেন, আপনি যদি আমার কেরিয়ারটা দেখেন, ভেঙ্কটেশ ফিল্মস আজ অবধি যত হিট দিয়েছে, সেই প্রপার্টির ২৫ শতাংশ যখন আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। আর আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে বলি, ওই সব নাম্বার ওয়ান কে হল, কে হল না ওসব নিয়ে কোনও দিন ভাবিনি, আজও ভাবছি না। ওগুলো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতি শুক্রবার বদলে যায়। আর এত উচ্চতায় আমি উঠতে চাই না যেখানে আমি একা। আমার কাছের মানুষ, পরিবার, ফ্যান, বন্ধুরাই সব। ওরাই আমার অক্সিজেন। ওদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারব না। |
 |
পত্রিকা: আপনার ‘আওয়ারা’ হিট হওয়াটা আধুনিক বাংলা বাণিজ্যিক ছবির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ এই ছবিটা এমন সময় সুপারহিট হয়েছে যখন কমার্শিয়াল বাংলা ছবি চলছিল না একদমই। আপনি যতই বিনয় দেখান সেখান থেকে দেখতে গেলে তো আপনার খুশি হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
জিৎ: হ্যাঁ, আমার কাছে আওয়ারা হিট হওয়ার থেকেও এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেষ দু’বছর আর্ট হাউজ বা ততটা কমার্শিয়াল নয় এরকম ছবি একদমই চলছিল না। সেখান থেকে ‘আওয়ারা’ পুরো সমীকরণটাই বদলে দিয়েছে। কিন্তু শুধু আমি কৃতিত্ব নিতে চাই না। এটা টিম ‘আওয়ারা’র জয়।
পত্রিকা: ধরুন আজকে শুক্রবার। ছবি রিলিজ করছে। জানতে ইচ্ছে করে এই ছবি রিলিজের দিন শুক্রবার আপনার দৈনিক রুটিনটা কী?
জিৎ: তা হলে শুধু শুক্রবারের রুটিন বললেই হবে না। টেনশনটা শুরু হয় তার আগের দিন। মানে বৃহস্পতিবার থেকে। তার ঠিক আগে আগে আমরা প্রোমোশন নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি যে ভাবার কোনও সময় পাই না। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মাথাটা ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যায়।
পত্রিকা: জিম করেন না সে দিন?
জিৎ: হ্যাঁ, অবশ্যই করি। ছবি রিলিজের আগের দিন টেনশন কাটানোর সেরা উপায় জিম।
পত্রিকা: আর শুক্রবার সকালে?
জিৎ: ফ্রাইডে, নো জিম। শুক্রবার সকাল সকাল মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে সোজা ডিস্ট্রিবিউটারের অফিসে। তার পর ওখানেই সারাদিন কাটানো।
পত্রিকা: এই যে টেনশন। হিট হলে উত্তেজনা। ভাল ওপেনিং না হলে হতাশা। এই আবেগগুলোর সঙ্গে মোহনা কতটা মানিয়ে নিয়েছেন?
জিৎ: মোহনার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর ‘শত্রু’, ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট লাভ’ রিলিজ করেছিল। কিন্তু ও সেরকম জড়িয়ে ছিল না। কিন্তু ‘আওয়ারা’র রিলিজের আগে আমার টেনশনটা দেখেছিল। এখন ও জানে ওই সময়গুলোয় আমাকে কী ভাবে চালাতে হবে। আর আমি এমনিতে ভীষণ আড্ডাবাজ ছেলে। খুব টেনশন হলে আড্ডা মারা আমার কাছে ভীষণ ভাল স্ট্রেস-বাস্টার। আমি শুধু খুব একটা চেঁচামেচি পছন্দ করি না। আই নিড মাই পিস। আগে অনেক বেশি রগচটা ছিলাম। পরে বুঝেছিলাম যখনই রেগে গেছি তখনই কোনও না কোনও ভুল কাজ করেছি। শেষ চার পাঁচ বছরে অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্টটটা শিখেছি অনেকটা। তাই হাতে গুনে তিন থেকে চার বারের বেশি রাগিও নি এই চার পাঁচ বছরে।
পত্রিকা: ‘বাইশে শ্রাবণ’ কি ‘খোকাবাবু’ হিট হওয়ার পরেও রেগে যাননি তা হলে?
জিৎ: (হেসে) না, না, একেবারেই না। ইন্ডাস্ট্রিতে যত বেশি ভাল ছবি হবে ততই ভাল। এখানে সারা বছর একশোটা ছবি হয়, তার মধ্যে আমি মাত্র দু’টো করি। আমি চাইব আমার দু’টো ছবি দারুণ চলুক। কিন্তু তা বলে বাকি আটানব্বইটা ছবি খারাপ ব্যবসা করুক, এটা কখনই চাইব না। এই ভাবে আমি জীবনটা দেখি না। আর বাংলা ইন্ডাস্ট্রি তো এখন একটা ভাল সময়ের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। কমার্শিয়াল কী আর্ট হাউজ, দু’ ধরনের ছবিই ভাল চলছে। অভিনেতা টেকনিশিয়ানরা ভাল রোজগার করছেন। আমি বাংলা ছবি করার আগে একটা দক্ষিণের ছবি করেছিলাম। তখন দেখেছিলাম ওখানকার চরিত্রাভিনেতারা কত বড় বড় গাড়ি চালায়। তখন মনে হত, আমাদের কলকাতায় এরকম কবে হবে। আজকে কিন্তু সেই দিনটা এসেছে। এটা কি কম বড় পাওয়া! আর কী বলুন তো, আজ অবধি আমি কোনও দিন ম্যানিপুলেশন করিনি। সাতে পাঁচেও থাকি না। নিজের কাজ করি, বাড়ি যাই। মোহনার সঙ্গে সিনেমা দেখি। রেস্তোরাঁতে খেতে যাই। আর এখন তো ও প্রেগন্যান্ট। আমি ওর সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানোর চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝেই ড্রাইভে যাই।
পত্রিকা: শুনেছি আপনি নাকি অসম্ভব জোরে গাড়ি চালান।
জিৎ: ধুর, কে বলল?
পত্রিকা: শুনেছি আপনার বন্ধুদের কাছেই। এখন নিশ্চয়ই অত জোরে গাড়ি চালাচ্ছেন না?
জিৎ: (হেসে) আমি জোরে গাড়ি চালাতে ভালবাসি এটা ঠিক কথা। নতুন গাড়িটা কিনে একদিন এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভারে চালিয়েছিলাম খুব জোরে। কিন্তু তা ছাড়া আর একদম জোরে গাড়ি চালানো ছেড়ে দিয়েছি। |
 |
‘আওয়ারা’-র দৃশ্যে |
পত্রিকা: মোহনা বকে বলে?
জিৎ: না না। তবে খুব ইচ্ছে জার্মানির অটোভানে গাড়ি চালানোর। ওখানে কোনও স্পিড লিমিট নেই। ওখানে ফেরারি চালানো বহু দিনের স্বপ্ন।
পত্রিকা: মোহনার প্রেগন্যান্সি নিয়ে আলিপুরের মদনানি পরিবার নিশ্চয়ই খুব উৎসাহিত?
জিৎ: হ্যাঁ, সবাই খুশি। কিন্তু আমাদের বাড়িতে কোনও কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি নেই। বাড়িতে সব কিছু স্বাভাবিক। যেদিন শুনেছিলাম বাবা হতে চলেছি, সেদিন রাতেই বাড়ি ফিরে সেই অনুভূতির কথা লিখেছিলাম। প্রায় ছ-সাত পাতা। কোনও দিন আপনাকে পড়াব। আমার কাছে এটা ভগবানের আশীর্বাদ। আজকে বাড়ি ফিরে যখন দেখি সবাই এত খুশি, খুব ভাল লাগে। মোহনার ডেট ডিসেম্বরে। তার আগে একটা ছবির শ্যুটিং করতে হায়দরাবাদ যাব। তাই প্রায় চল্লিশ দিন আমাকে বাইরে থাকতে হবে। ফোনে তো যোগাযোগ থাকেই। অত লম্বা আউটডোর হলে স্কাইপ-ই ভরসা।
পত্রিকা: লম্বা আউটডোর হলেই স্কাইপ করেন বুঝি?
জিৎ: হ্যা।ঁ ওটা মাস্ট।
পত্রিকা: আচ্ছা, দেব তো অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর সঙ্গে অন্যরকম ছবি করার জন্য কথা বলছেন। প্রসেনজিৎও তো অন্য ধারার ছবি করছেন। আপনি কেন করছেন না এ রকম ছবি?
জিৎ: আমি কিন্তু এ করম ছবি আগে করেছি। ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’। ছবিটা চলেনি বলেই আমি কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। তারপর থেকে আমি ভাবিনি ওরকম ছবি করার কথা। তবে সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই করব। আমি কাজ করতে চাই সৃজিতদের সঙ্গে। ইনফ্যাক্ট আমি ‘হেমলক সোসাইটি’তে একটাই সিন করেছিলাম। সেটা সৃজিত অসম্ভব ভালো শ্যুট করেছিল। প্রচুর প্রশংসা পেয়েছিলাম ওই দৌড়নোর সিনটার জন্য।
পত্রিকা: এটা কখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি। দেব সম্পর্কে আপনার অ্যাসেসমেন্ট কী?
জিৎ: অসম্ভব পরিশ্রমী। অসাধারণ স্ক্রিন প্রেজেন্স। সাংঘাতিক জনপ্রিয়।
পত্রিকা: ‘দুই পৃথিবী’তে তো ওঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। দেবের কোনও ছবি দেখেছেন আপনি?
জিৎ: আমি ‘আই লাভ ইউ’ দেখেছিলাম হায়দরাবাদে। তখনও ছবিটা রিলিজ করেনি। তার পর আর কোনও ছবি দেখা হয়নি।
পত্রিকা: যে কোনও ‘কামব্যাক’ সাক্ষাৎকারে একটা কথা অবধারিত ভাবে থাকেই-- আপনার খারাপ সময় থেকে কী কী শিখেছেন। কিন্তু যে প্রশ্নটা প্রায়ই উহ্য থাকে তা হল কী কী ভুল করেছিলেন যার জন্য ওরকম একটা অবস্থা তৈরি হয়েছিল। আপনার ওই খারাপ সময়টা কেন এসেছিল বলে মনে হয়?
জিৎ: সেটা তো অনেক দিন আগেই এসেছিল। আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল ২০০৮-এ। তত দিনে আমি সাফল্য দেখে ফেলেছিলাম। কিন্তু তারপর কী ভাবে যেন সাফল্য আমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। খুব খারাপ সময় ছিল তখন। তারপর একদিন তিরুপতি গিয়েছিলাম বালাজির দর্শন করতে। ওই একটা তিরুপতি দর্শন আমার জীবনের পুরো মোড়টাই ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তারপর থেকে আবার করে সব যেন ঠিক হতে শুরু করে। বললাম না,আমি ভীষণ ভগবান-বিশ্বাসী।
তাই আমার প্রত্যেকটা ইন্টারভিউতে ভগবানের প্রসঙ্গ চলে আসে। সেই সময় থেকে শিখেছি অনেক কিছু। কিছু ভুল করেছিলাম নিশ্চয়ই। আপনাকে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সেগুলোকে ঠিক করে, এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। শুধু একটা জিনিস মনকে বোঝাতে হবে। আপনার ব্যক্তিগত জীবন হোক বা কাজের ক্ষেত্র, দুটোতেই সারাজীবন সব কিছু মসৃণ হবে না। এটা মেনে নিলে আপনার জীবন অনেক মসৃণ হবে।
পত্রিকা: বুঝলাম...
জিৎ: আর কী বলুন তো, একটা কথা আছে না ‘বোল বচ্চন’। অত ‘বোল বচ্চন’ করে লাভ নেই। যদি খারাপ সময় আসে, চুপচাপ কাজে ফোকাস কর। একদিন ভাল সময় আসতে বাধ্য। যখন আমি এইট প্যাকস বানিয়েছিলাম, কেউ জানতে পেরেছিল কি? প্রথমে করেছিলাম, তার পর লোকে দেখেছে। ওটাই বেস্ট পলিসি। চুপচাপ নিজের কাজ করে যাও।
|
|
|
 |
|
|