পনেরো বছর বা তার বেশি পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল করার নির্দেশ রাজ্য সরকার কার্যকর করতে না পারলে তা অন্য কোনও ভাবে বাস্তবায়িত করার ব্যবস্থা করবে আদালত। রাজ্য সরকার এই নির্দেশের ব্যাপারে ‘দায় এড়ানো’ রিপোর্ট জমা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার রাজ্যের পরিবহণসচিবকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতিরা। বৃহত্তর কলকাতার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির সময়ে এই মন্তব্য করেছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত এবং বিচারপতি অসীমকুমার মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের দায়ের করা বায়ুদূষণ সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলায় হাইকোর্ট ২০০৮-এর ১৮ জুলাই এক নির্দেশে বলেছিল, বৃহত্তর কলকাতায় ১৫ বছর বা তার বেশি পুরনো সমস্ত বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল করতে হবে। ২০০৯ সালের ১ অগস্ট থেকে ওই নির্দেশ কার্যকর করতে শুরু করে রাজ্য। এ ছাড়া, পেট্রোল-চালিত টু-স্ট্রোক অটো বদলে নতুন এলপিজি অটো চালু হয়। কিন্তু বছরখানেক পুরনো গাড়ি ধরার অভিযান চালানোর পরে তা বন্ধ করে দেয় রাজ্য। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। গত ১৫ মাসে একটিও পুরনো গাড়ি বাতিল হয়নি।
সুভাষবাবুর আবেদনের ভিত্তিতে আদালত গত জুলাইয়ে রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চায়,
১) শহরে পনেরো বছরের পুরনো গাড়ি চলছে কি না,
২) যদি চলে, তা হলে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন এবং
৩) ২০০৮ সালে আদালত যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা কার্যকর করতে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এর জবাব রিপোর্ট আকারে জমা দিতে বলে আদালত। সরকারি আইনজীবী সুন্দরানন্দ পাল বৃহস্পতিবার একটি বন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেন। খাম খুলে দেখা যায়, তাতে লেখা, পনেরো বছরের পুরনো গাড়িকে ‘সার্টিফিকেট অফ ফিটনেস’ দেওয়া হচ্ছে না।
রিপোর্টে কোর্টের কোনও প্রশ্নেরই যথাযথ জবাব না থাকায় সুভাষবাবু রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে জানান, আদালতের রায় প্রায় তিন বছর কার্যকর হচ্ছে না। রাজ্য আদালতের আদেশ অমান্য করছে। বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত জানান, পরিবহণসচিবের কাছে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, তিনি সেই তথ্য পেশ করেননি। হয় তিনি আদালতের নির্দেশ বুঝতে পারেননি, নয়তো আদালতকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এটা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। পরিবহণসচিব এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে না পারলে আদালত অন্য কোনও ভাবে তা করার ব্যবস্থা করবে।
এ দিন রাজ্যের কয়েক জন সচিবের ভলভো বাসে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার কথা ছিল। পরিবহণসচিবও সেই বাসে আছেন কি না, সরকারি আইনজীবীর কাছে তা জানতে চান বিচারপতিরা। ওই আইনজীবী সুন্দরানন্দবাবু কোর্টে জানান, আগামী শুনানির দিন তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। ওই রিপোর্টে সরকার অটো নিয়েও কোনও তথ্য দেয়নি। সুভাষবাবু আদালতকে জানান, পরিবহণমন্ত্রী বলেছেন, কলকাতায় ২৫ হাজার অবৈধ অটো চলে। অথচ, এ সংক্রান্ত তথ্য আদালতে জানানো হয়নি। বিচারপতি জানান, পরবর্তী শুনানির দিন অবৈধ অটোর ব্যাপারে সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হবে। |