সম্পাদকীয় ২...
তস্করবৃত্তি
দায়িত্বজ্ঞান বিষয়টি ভারতীয়দের কমই আছে। বিশেষত, নজরদারির অভাব থাকিলে স্বেচ্ছায় দায়িত্বপালন করেন, এমন ভারতীয়র সংখ্যা যৎকিঞ্চিৎ। ফলে, আধুনিক প্রযুক্তির সহিত তাহার দায়িত্বশীল ব্যবহারের যে অলিখিত চুক্তিটি থাকে, তাহা ভঙ্গ করিতে ভারতীয়দের জুড়ি নাই। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা দিল্লি হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করিয়াছিল। তাহাদের অভিযোগ ছিল, দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স চত্বরের এক ফোটোকপির দোকানে বহু পাঠ্যপুস্তকের প্রতিলিপি যথেচ্ছ বিক্রয় হইতেছে। দোকানদার বেচিতেছেন, ছাত্র-গবেষক-শিক্ষকরা কিনিতেছেন। প্রকাশক এবং লেখকরা তাঁহাদের মেধাস্বত্ব হইতে বঞ্চিত হইতেছেন। এই দোকানটি উদাহরণমাত্র। দেশময় একই ঘটনা ঘটিতেছে। বস্তুত, ইহার মধ্যে যে কোনও অন্যায় আছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতা বা বিক্রেতা তাহাই বুঝিতে পারেন না, দায়িত্বজ্ঞানের এমনই বহর! কোনও সভ্য দেশে এই ভাবে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘিত হয় না। রাষ্ট্রীয় নজরদারি থাকুক আর নাই থাকুক, নাগরিকরাই এই অন্যায় হইতে স্বেচ্ছায় বিরত থাকেন। ভারতে সেই বোধটিই নাই। ফলে, এই দেশে আদৌ ফোটোকপিয়ার যন্ত্রের ন্যায় প্রযুক্তি যথেচ্ছ ব্যবহারের অধিকার থাকা উচিত কি না, সেই প্রশ্নটি অন্যায্য নহে।
আরও বহু প্রযুক্তিতেই ভারতীয়দের অধিকার না থাকাই বিধেয়। যেমন, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি। আধুনিক বিজ্ঞানের এই আশীর্বাদটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী হইয়াছে। গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ সম্বন্ধে বিশদ জানিতে প্রযুক্তিটি অপরিহার্য। কিন্তু, ভারতীয়রা তাহাকে কন্যা ভ্রূণ নির্ণয়ের প্রযুক্তিতে পরিণত করিয়াছে। তাহাতে বহু ক্লিনিক, বহু চিকিৎসক বহু কোটি টাকার মালিক হইয়াছেন, আর দেশের প্রায় সর্বত্র লিঙ্গ-অনুপাত ক্রমে বিপজ্জনকতর হইতেছে। দোষ প্রযুক্তির নহে, দোষ ভারতীয়দের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার। এই একই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা মেধাস্বত্বের ক্ষেত্রেও প্রকট। পাড়ায় পাড়ায় সিনেমার সি ডি ভাড়া খাটাইবার ব্যবসা গড়িয়া উঠিয়াছে। অণ্ণা হজারের দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশে মোমবাতি জ্বালাইয়া ক্লান্ত হইয়া বাড়ি ফিরিবার পথে শিক্ষিত নাগরিকরা সেই দোকান হইতে সি ডি লইয়া আসিতেছেন ঘরে বসিয়া ক্লান্তি কাটাইবেন! ইন্টারনেট হইতে চুরি করিয়া সিনেমা দেখিতেছেন, গান ডাউনলোড করিতেছেন, বই ফোটোকপি করিতেছেন মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের এই কাজগুলি যে নিছক তস্করবৃত্তি, তাহা বুঝিয়াও বুঝিতেছেন না। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন সমাজের হাতে প্রযুক্তি অতি বিপজ্জনক একটি অস্ত্র। সেই অস্ত্র সামলাইয়া রাখিতে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হইতে হইবে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সেই কাজে অগ্রণী হইল। ইন্ডিয়ান রিপ্রোগ্রাফিক রাইটস অর্গানাইজেশনের সহিত একটি লাইসেন্স ব্যবস্থা তৈরি করার প্রক্রিয়া আরম্ভ হইয়াছে। বই ফোটোকপি করিতে হইলে সংশ্লিষ্ট দোকানকে বাৎসরিক লাইসেন্স ফি জমা করিতে হইবে। সেই টাকার অংশ প্রকাশনা সংস্থাগুলি পাইবে। এই টাকার হিসাব অপেক্ষা যাহা জরুরি, তাহা হইল, কোনও অবস্থাতেই বইয়ের দশ শতাংশের (বা, একটি অধ্যায়) বেশি ফোটোকপি করা যাইবে না। লেখকের মেধাস্বত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অতি জরুরি পদক্ষেপ। তবে অনুমান করা চলে, এই ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের কাজটি যেমন চলিতেছিল, তেমনই চলিবে। প্রশাসন মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন বন্ধ করিতে আন্তরিক না হইলে ইহাই ভবিতব্য। ঠেকাইবার একটিই রাস্তা— মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করিয়া ধরা পড়িলে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা হউক। এমন শাস্তি, যাহা অন্যদের নিকট ভীতিপ্রদ উদাহরণ হইয়া থাকিবে। নজরদারির পরিমাণ বাড়ুক। সমাজ যখন স্বেচ্ছায় সৎ হইবে না, তাহাকে ভয় দেখাইয়াই সৎ পথে রাখিতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.