সম্পাদকীয় ১...
বৃদ্ধ ভারত
ভারতে মানুষের আয়ু বাড়িতেছে, ইহা সুসংবাদ। ভারতে জন্মহার কমিতেছে, এই সংবাদও প্রার্থিত। কিন্তু এই দুইটি সুখবর মিলিয়া যে চিত্রটি প্রস্তুত হইতেছে, তাহা উদ্বেগজনক। ভারতের জনসংখ্যায় বৃদ্ধদের অনুপাত বাড়িতেছে, কমিতেছে যুবশক্তি। অর্ধশতাব্দী পূর্বে ৬৫ বৎসর ঊর্ধ্বে প্রতিটি মানুষের খরচ নির্বাহ করিতে দেশে ছিল ১৫টি কর্মক্ষম মানুষ। এখন তাহা কমিয়া দাঁড়াইয়াছে ১১টিতে। অনুপাত কমিবার এই ধারায় আশ্চর্য হইবার কিছু নাই, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সব দেশেই বৃদ্ধদের অনুপাত বাড়িয়া যায়। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে যাহা বিস্মিত করিতেছে, তাহা যুবসংখ্যা কমিবার হার। সম্প্রতি গবেষকরা বলিয়াছেন, এই অনুপাত অতি দ্রুত হারে কমিবে, ২০৫০ সালে তাহা দাঁড়াইবে একজন বৃদ্ধ প্রতি পাঁচজন কর্মক্ষম ব্যক্তিতে। এই সহস্রাব্দের শেষে একজন বৃদ্ধ প্রতি মাত্র দুই কি তিন জন কর্মক্ষম মানুষ থাকিবেন, এমনই ভয়ানক একটি চিত্র সম্মুখে আসিতেছে।
অবশ্যই ইহা একটি গণনামাত্র। গত কয়েক বৎসরে বিশ্বে জনসংখ্যার যে গতিপ্রকৃতি দেখা যাইতেছে, তাহার ভিত্তিতে একটি ‘মডেল’ তৈরি করিয়া এমন ভবিষ্যৎচিত্র আঁকিয়াছেন সংখ্যাতাত্ত্বিকরা। ইহার মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহামারী, যুদ্ধ প্রভৃতি নানা কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা হ্রাসের পরিচিত চিত্র বদলাইয়া যাইতে পারে। এমনকি প্রযুক্তির কোনও বিচিত্র উদ্ভাবনের জন্যেও মানবসমাজের প্রজনন ধারণায় বড়সড় পরিবর্তন আসা অসম্ভব নহে। কিন্তু অনাগতবিধাতা হইতে হইলে এমন কোনও আকস্মিক ঘটনার জন্য বসিয়া থাকিলে ভুল হইবে। যাহা ঘটিবার সম্ভাবনা অধিক, তাহাকেই সম্মুখে রাখিয়া কর্তব্য স্থির করিতে হইবে। ভারতের নিকট সেই কাজটি সহজ নহে। প্রায় সকল দেশেই জনসংখ্যায় তরুণের আধিক্য কমিয়াছে, বৃদ্ধদের অনুপাত বাড়িয়াছে, কিন্তু এই পরিবর্তনের ঘটিয়াছে ধীরে ধীরে, বহু দিন ধরিয়া। সমাজ এবং রাষ্ট্র এই পরিবর্তনের সহিত তাহার নীতি-নিয়ম ক্রমশ বদলাইয়াছে। কিন্তু আজ ভারত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যার ভারসাম্য বদলাইতেছে অদৃষ্টপূর্ব দ্রুত হারে। তাই সমাজ-সংসারে, অর্থনীতিতে, সর্বত্র দ্রুত পরিবর্তন করিতে না পারিলে নানা প্রকার সংকট উদ্ভূত হইতে বাধ্য।
ভারতে আমাদের আক্ষেপের কারণ এই যে, আমরা বিপুল যুবসম্পদ কাজে লাগাইয়া দেশের উন্নয়ন করিবার পূর্বেই সেই বিশেষ সুবিধা হারাইতেছি। তাহার কারণ, আমাদের যুবসমাজের একটি বড় অংশই শিক্ষার সুযোগ পায় না। কায়িক শ্রমের অধিক তাহাদের অর্থনীতিতে দান করিবার খুব বেশি কিছু রাখি নাই। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পাইলে ইহারাই আমাদের দেশের আর্থিক উন্নতি ত্বরান্বিত করিতে পারিত। তৎসহ অপুষ্টি এবং অস্বাস্থ্যও যুবসমাজের ক্ষমতাকে হীন করিয়া রাখিয়াছে। আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত হইতে হইলে তাই যুবসমাজের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াইতে হইবে, যাহাতে অল্প মানুষও অধিক মানুষের ব্যয়ভার বহন করিতে পারে। তাহার জন্য প্রয়োজন উচ্চশিক্ষা এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ। অন্য দিকে, স্বাস্থ্যোন্নতির জন্যই আয়ু বাড়িতেছে, সুতরাং বৃদ্ধরাও যাহাতে আরও দীর্ঘ দিন উৎপাদনের কাজে অংশ নিতে পারেন, একটি নির্দিষ্ট বয়সেই যাহাতে তাঁহাদের সকলকে কর্মজীবন হইতে নির্বাসিত হইতে না হয়, তাহার জন্যও নীতি পরিবর্তন করিতে হইবে। সামাজিক নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দায়বদ্ধ ও কার্যকর করিতে হইবে। রাষ্ট্র ও সমাজ দূরদর্শী এবং তৎপর না হইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাহার দাম চুকাইতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.