|
|
|
|
বার্তা প্রধানমন্ত্রীকে |
লাল ফিতের ফাঁস খুলতে আর্জি নারায়ণমূর্তির |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এর আগেই নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ তুলেছিল দেশের শিল্পমহল। এ বার ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তিও একই যুক্তি দেখিয়ে সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের। বলেছেন, এখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়। সে জন্য লাল ফিতে বা আমলাতান্ত্রিক ফাঁস খোলাটা খুবই জরুরি। এর সঙ্গে সংসদীয় কাজকর্ম, শরিকি বাধা বা মন্দার যোগাযোগের যুক্তি খোঁজা অর্থহীন।
নীতিপঙ্গুত্ব নিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বারবারই শরিকি বাধ্যবাধকতা এবং বিরোধীদের ‘বিরোধিতার জন্য বিরোধিতার’ কথা বলেছে। শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও এই প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই সূত্র ধরেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজনীতি না অর্থনীতি, সরকারের কোনটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত? এ দিন এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নারায়ণমূর্তি কিন্তু বললেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সংসদ, বিরোধী, শরিক বা বিশ্বজুড়ে মন্দা এগুলির কোনও যোগ নেই। এই প্রসঙ্গে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সমস্যাগুলির কথা তোলেন। জানান, এক বছরেরও বেশি আগে এই ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কাজ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরে পরিচয় রয়েছে নারায়ণমূর্তির। ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বাস করেন, মনমোহনের সততা প্রশ্নাতীত। নারায়ণমূর্তি বলেছেন, “ওঁর প্রতি আমি সহানুভূতিশীল। তার মানে এই নয় যে, প্রশাসন বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।” তাঁর বক্তব্য, “করের চাপে যেন সফ্টওয়্যার রফতানির পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।”
ভারতের আর্থিক অবস্থা এমন কেমন? চিনের সঙ্গে তার পার্থক্যই বা কী? আন্তর্জাতিক শিল্পমহলে মেলামেশা করার অভিজ্ঞতা থেকে নারায়ণমূর্তি জানেন, চিনের সঙ্গে ভারতের তফাতটা কোথায়। তিনি বলেন, “আগে চিনের কথা তিন বার বললে এক বার অন্তত ভারতের কথা উঠত। আর এখন চিনের প্রসঙ্গ যদি ৩০ বারও আসে, ভারতের কথা এক বারও কেউ তোলে না।” তাঁর আক্ষেপ, “আমরা আমাদের নিষ্ক্রিয়তা এবং নীতি দিয়ে নিজেরাই নিজেদের পা কেটে দিয়েছি।”
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ আছে কি? নারায়ণমূর্তি জানান, “চোদ্দো মাস আগে (তৎকালীন) অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আমি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। দু’বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছি। কাজের কাজ কিছুই এগোয়নি।” বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না, যে তথ্যপ্রযুক্তি রফতানি ক্ষেত্রের ২৫%, তার সমস্যাকে জরুরি ভিত্তিতে দেখা হবে না!”
নীতিপঙ্গুত্বের জন্য প্রণববাবুর আমলে একাধিকবার সমালোচিত হয়েছে সরকার। তিনি রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হওয়ার পরে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। তখনই আশার সঞ্চার হয়। তার পরে পি চিদম্বরমকে সেই মন্ত্রকে আনেন মনমোহন। কিন্তু তার পরেও কি পরিস্থিতি বদলেছে? নারায়ণমূর্তি তেমন মনে করেন না।
ইউপিএ সরকারের প্রতি সহানুভূতি রেখেও তাঁর বক্তব্য, এখনও বড় বাধা আমলাতন্ত্র। তবে সংসদ অচল হওয়ায় সরকারকে যে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে, তা মেনে নেন তিনি। কিন্তু উন্নয়নের চাকাটা গড়াবে কি না, তা সব ক্ষেত্রে সংসদের উপর নির্ভরশীল নয় বলেই তাঁর দাবি। তাঁর বক্তব্য, এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে পুরোটাই নির্ভর করছে আমলারা কত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তার উপর।
বিরোধীদের আন্দোলন, শরিকি সংঘাত বারবারই আর্থিক সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিল থেকে বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো বিপণনে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির জন্য দরজা খুলে দেওয়া, সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত কোনও কাজই হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। এই মত পুরোপুরি মানতে নারাজ নারায়ণমূর্তি।
১৯৯১-তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও যেমন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, নারায়ণমূর্তি চান, মনমোহনও সেই পথে হাঁটুন। তাঁর মন্তব্য, “এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আরও গতি বাড়ায় আমলাতন্ত্র।” |
|
|
|
|
|