এক মাসে দু’বার। কলকাতার আকাশে তাই পূর্ণিমার চাঁদ এ বার ‘ব্লু মুন’। তবে শুধু আমাদের শহরই নয়, শুক্রবার এই বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে গোটা দেশ।
কী এই ‘ব্লু মুন’?
বিজ্ঞানের ভাষায়, এক মাসের মধ্যে দু’টি পূর্ণিমা হলে দ্বিতীয়টিকে বলা হয় ‘ব্লু মুন’। চলতি অগস্ট মাসের ২ তারিখেই ছিল পূর্ণিমা। তার পর আজ, শুক্রবার ফের। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন জানিয়েছেন, এর আগে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ‘ব্লু মুনে’র দেখা মিলেছিল। সে বার দ্বিতীয় পূর্ণিমাটি পড়ে ছিল ৩১ ডিসেম্বর। মধ্যরাতে আংশিক চন্দ্রগ্রহণও হয়েছিল। তবে, এ বার আর তেমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। পরের ‘ব্লু মুনে’র দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও তিন বছর। ২০১৫-র জুলাই।
কেন এই এক মাসে দ্বিতীয় বার আবির্ভাব? |
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতি ৩৬৫ দিন বা ১২ মাসে (বিজ্ঞানের ভাষায় একটি সৌর বছর) ১২টি পূর্ণিমা হয়। সাধারণত একটি পূর্ণিমা থেকে অন্য পূর্ণিমার ফারাক হয় গড়ে সাড়ে ২৯ দিন। এ ভাবে হিসেব করলে ১২টি পূর্ণিমা হতে সময় লাগে ৩৫৪ দিন (বিজ্ঞানের ভাষায় একটি চান্দ্রবছর)। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এর ফলে সৌর বছর (সাধারণ ক্যালেন্ডারে এটাই অনুসরণ করা হয়) থেকে চান্দ্রবছরের ১১ দিন ফারাক হয়। সেই হিসেবের ফারাকের ফলেই প্রতি তিন বছর অন্তর এক মাসে দু’টি পূর্ণিমা দেখা যায়। এ ভাবে প্রতি ১৯ বছরে গড়ে ৭ বার ‘ব্লু মুনের’ দেখা মিলতে পারে।
এক বছরে দু’টি ‘ব্লু মুনের’ নজিরও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে দু’টি করে পূর্ণিমা ছিল। তবে, সে বার ফেব্রুয়ারি মাসে কোনও পূর্ণিমাই ছিল না। এই ঘটনাও ফের ঘটবে। ২০১৮ সালে জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে।
ইতিহাস বলছে, ‘ব্লু মুনের’ ধারণাটি এসেছে কৃষকদের পঞ্জিকা থেকে। সে সময় চাষের কাজ হত চান্দ্রমাস অনুযায়ী। প্রতি ঋতুতে (তিন মাসে) তিনটি পূর্ণিমার নামকরণও করা হত। যেমন, গ্রীষ্মের প্রথম পূর্ণিমা, দ্বিতীয় পূর্ণিমা ইত্যাদি। কোনও ঋতুতে চারটি পূর্ণিমা
পড়ে গেলে নামকরণের সুবিধার জন্য অতিরিক্ত পূর্ণিমাটিকে ‘ব্লু মুন’ বলা হত। এখন সেটাই সামান্য বদলে গিয়ে, কোনও মাসে দু’টি পূর্ণিমা পড়ে গেলে দ্বিতীয়টিকে ‘ব্লু মুন’ বলা হয়।
কিন্তু হঠাৎ এমন অদ্ভুত নামকরণ কেন? তা হলে কি আজ চাঁদ নীল দেখাবে?
একেবারেই নয়। ‘ব্লু মুন’ মোটেই নীল নয়। সম্পূর্ণ প্রচলিত শব্দ। তবে চাঁদের নীলচে হয়ে যাওয়ার কথাও শোনা যায়। ১৮৮৩ সালে ইন্দোনেশিয়া এবং ১৯৫০-৫১ সালে সুইডেন ও কানাডায় ‘নীল’ চাঁদের দেখা মিলেছিল। বিজ্ঞানীদের দাবি, সেটাও আসলে বিজ্ঞানের খেলা। ১৮৮৩ সালে ঘুম ভেঙেছিল ইন্দোনেশিয়ার কারাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আশপাশের বিশাল এলাকা ছাই আর ধুলোয় ঢেকে গিয়েছিল। চাঁদের আলো সেই ধুলো-ছাইয়ের মধ্যে দিয়ে প্রতিসৃত হওয়ার ফলেই নীলচে দেখাত। দাবানলের ফলে সুইডেন এবং কানাডায় এই একই ঘটনা ঘটেছিল।
সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘ব্লু মুনের সঙ্গে চাঁদের নীল দেখানোর কোনও সম্পর্ক নেই। কথাটা নেহাতই চলতি হয়ে গিয়েছে।” তাই আর পাঁচটা পূর্ণিমার মতো আজও আকাশে দুধসাদা চাঁদ জ্বলজ্বল করবে। |