অটো-রাজ নিয়ন্ত্রণে এ বার বেআইনি অটোকে ‘হাতিয়ার’ করছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সোমবার বারাসতে অটোর ধাক্কায় আহত শিশু রাজকুমার দাসকে দেখতে গিয়ে কার্যত হুমকি দিলেন পরিবহণমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “২৫ হাজারের মতো অবৈধ অটো রয়েছে। বুধবারের মধ্যে সরকারি বিধি মেনে যদি অটো নিয়ে রাস্তায় না নামেন, তা হলে এটাই হবে শেষ অবরোধ। সমস্ত অবৈধ অটো খুঁজে বার করে গ্যারাজে ঢুকিয়ে দেব।”
তবে সরকারের কথা মেনে চললে বেআইনি অটো নিয়ে ভাবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “একগুঁয়েমি ছেড়ে দিয়ে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। তা হলে বেআইনি অটো নিয়ে কী করা যায়, মন্ত্রিগোষ্ঠীতে সে বিষয়ে আলোচনা করব।”
বিরোধী দল সিপিএম প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন সিটুর নেতারা অবশ্য মন্ত্রীর দেওয়া বেআইনি অটোর তত্ত্বই উড়িয়ে দিয়েছেন। সিটুর নেতা কিশোর ঘোষ বলেন, “এত বেআইনি অটো আছে বলে কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। বেআইনি অটো চললে সরকার ধরবে। এ নিয়ে আমরা কী বলব!”
এ দিন বিকেলে মহাকরণে অটোকে নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়টি নিয়ে পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, পরিবহণসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারাও। সেখানেও অবৈধ অটোর বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। |
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, মঙ্গলবার থেকে অধিক যাত্রী তোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় অটোর লাইসেন্স, রুট পারমিটও পরীক্ষা করে দেখা হবে।
তবে মন্ত্রীর দাবি, অধিকাংশ অটোই নিয়ম মেনে চলছে। কিছু অটোর জন্য বদনাম হচ্ছে। বারাসতে তিনি এ দিন বলেন, “৮০ শতাংশ অটো নিয়ন্ত্রণে চলছে। ২০ শতাংশ অটো গোলমাল পাকাচ্ছে। তাদের জন্য সব অটোচালকদের সেই অন্যায়ের ভাগ নিতে হচ্ছে।” পাশাপাশি মন্ত্রী এ-ও বলেন, “অটো-রাজ খতম করে সুষ্ঠু পরিষেবা চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পুলিশের হিসেবে, কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলি মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার অটো চলে। মন্ত্রীর বেআইনি অটোর হিসেব ধরলে, তার ৩৫ শতাংশ অটোই বেআইনি।
অটোচালকদের ধর্মঘটের জেরে অবশ্য এ দিনও বিপাকে পড়েন কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকার মানুষ। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের বিভিন্ন রুটে অটো চলাচল ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। ব্যারাকপুরে অটো চলাচল নিয়ে সমস্যা চলছে গত দু’তিন দিন ধরে। যাত্রীদের অভিযোগ, অটো কম চলার পাশাপাশি মাঝেমাঝেই বিভিন্ন রুটে অটোচালকেরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে রাজি হচ্ছেন না।
এ দিন সকাল থেকে ব্যারাকপুর-বি টি রোড, ব্যারাকপুর-ডানলপ, সোদপুর রুটের অটো আচমকাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে মণিরামপুর ও আদালত রুটের অটোও। ব্যারাকপুর থেকে ঘোষপাড়া রোড ধরে শ্যামনগর বা ব্যারাকপুর-বারাসত রুটের অটোও খুব কম চলাচল করে। এ দিন দুপুরেই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (ট্রাফিক) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় দমদমে অটো ইউনিয়ন নিয়ে বৈঠক করেন। কল্যাণবাবু বলেন, “অটোচালক ও মালিকদের সমস্যার কথা শুনেছি। কিন্তু সরকারি নির্দেশ মানতেই হবে। বিষয়টি পর্যালোচনার পরে যথাযোগ্য জায়গায় জানানোর কথা বলেছি ওঁদের। তার পরে অটো চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।”
সিটুর উত্তর ২৪ পরগনা অটো ইউনিয়নের সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “যে ভাবে গ্যাসের দাম ও বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী, সেই তুলনায় অটোর ভাড়া বাড়েনি। তবে আমরা যাত্রীদের বিপাকে ফেলে অটো বন্ধের বিরোধী।” তৃণমূলের অটো ইউনিয়নের নেতা লালন পাসোয়ানের দাবি, “চালক ও মালিকেরাই অটো বন্ধ করছেন। তবে পরিবহণমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দু’এক দিনেই সমস্যা মিটবে।” |