স্কুল নির্বাচনকে ঘিরে প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। এক দিকে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না হওয়া, অন্য দিকে তৃণমূলেরই দু’টি গোষ্ঠীর সমর্থিত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় পুরুলিয়ার পাড়া গার্লস হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে ছ’টি আসনেই জিতেছে সিপিএম। এই স্কুলের পরিচালন সমিতির দখল ছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের হাতে।
রবিবার পাড়া ব্লকের তিনটি স্কুলে ভোট হয়। তার মধ্যে পাড়া গার্লস হাইস্কুলে সিপিএম, তৃণমূল ও কংগ্রেসতিন দলেরই সমর্থিত প্রার্থীরা ছিলেন। পাশাপাশি, তৃণমূলেরই বিক্ষুব্ধ অংশ ‘শিক্ষা বাঁচাও কমিটি’ গড়ে প্রার্থী দেয়। ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, সব ক’টি আসনেই জিতেছেন সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধার দাবি, “তৃণমূল ও কংগ্রেস স্কুলের উন্নয়ন করতে ব্যর্থ। অভিভাবকেরা তুলনা করে ভোট দিয়েছেন। ফলে আমরা সব আসনে জিতেছি।”
রবিবার ওই ব্লকেরই দুবড়া গার্লস হাইস্কুলেও ভোট হয়। কিন্তু, ওই স্কুলের ফল নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। রাতের দিকে ভোট গণনার সময়ে স্কুলের মধ্যে গণ্ডগোল হওয়ায় নির্বাচনের ফল স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে সিপিএমের দাবি, পাঁচটি আসনে জিতেছেন তাদের প্রার্থীরা। একটি আসনের ফল অমীমাংসিত। অন্য দিকে, কংগ্রেসের দাবি, গণনায় ভুল হয়েছে। ফলে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। স্কুলটির টিচার-ইন-চার্জ স্মৃতি কোনার ভোট-ফল নিয়ে মন্তব্য করেননি। ওঅ ভোটের প্রিসাইডিং অফিসার তথা দেওলি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মাহাতো জানান, ভোট গণনার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে কিছু লোক স্কুলে ঢুকে পড়ে নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি করেছিল। খবর পেয়ে বিডিও স্কুলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠান। কিন্তু, তার মধ্যেই বহিরাগত লোকজন কিছু ব্যালট পেপার নিয়ে চলে যায়। সঞ্জয়বাবু বলেন, “মধ্যরাতের ওই ঘটনার পরে ব্যালটবাক্স স্কুলে সিল করে রেখে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা শিক্ষা দফতরকে জানানো হয়েছে।”
স্কুল সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, রাতের দিকে গণনা শেষ হওয়ার সময় সিপিএমের পাঁচ প্রার্থী এগিয়েছিলেন। ঘটনা হল, পাড়া গার্লস হাইস্কুলের মতো দুবড়াতেও পরিচালন সমিতির দখল ছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের হাতে। এ বারে দু’পক্ষের জোট হলেও প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ অংশও। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন। “নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে দলের হারের ঘটনা জেলার কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পাড়া ব্লকের দড়দা মণিবালা হাইস্কুলে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে অবশ্য জিতেছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। এখানে অবশ্য তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর প্রার্থী ছিলেন না।
পুরুলিয়া টাউন হাইস্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনেও ৬টি আসনেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। এর আগে পরিচালন সমিতির ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। মানবাজারের শাসনগড়া হাইস্কুলে রবিবার ৬টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৫টি ও তৃণমূল ১টি আসন পায়। ইতিপূর্বে এই স্কুলে তৃণমূলের ৪ জন সদস্য থাকলেও পঞ্চায়েত সমিতির মনোনীত সদস্য এবং শিক্ষক প্রতিনিধিদের সমর্থনে পরিচালন সমিতি সিপিএমের দখলেই ছিল। তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা কোর কমিটির সদস্য নবেন্দু মাহালি বলেন, “মানবাজারের স্কুলে কেন এমন ফল হল, আমরা খতিয়ে দেখছি।” অন্য দিকে, বরাবাজারের বামুনডিহা হাইস্কুলের ছ’টি আসনেই জিতেছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। গতবারে পরিচালন সমিতির দখল ছিল সিপিএমের হাতে। পুঞ্চার চন্দনপুর রবীন্দ্র পাঠাগার পরিচালন সমিতির নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীরা ৮টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। |