সবুজ ঘাসের গালিচার আস্তরণে ঢাকা আছে প্রায় আড়াইশো বছর আগে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তৈরি প্রায় দু’লক্ষ বর্গগজ আয়তনের ঐতিহাসিক ‘বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার’ ময়দান। বিশাল ওই সবুজ গালিচার প্রায় সবটা জুড়ে চলছে মঞ্চ ও স্টল তৈরির মহাযজ্ঞ। মঞ্চ ও স্টলও সবুজ রঙের। ওই মাঠটির দক্ষিণ দিকে তৈরি হচ্ছে তাঁতবস্ত্র মেলার জন্য ১৫০টি স্টল। উত্তর দিকে তৈরি হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি ‘জনসভা’র মঞ্চ ও সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের মধ্য অনুদান বিলি করার স্টল। আগামীকাল বুধবার মুখ্যমন্ত্রী ওই মঞ্চ থেকে ভাষণ দেবেন।
ওই মঞ্চ থেকে তিনি ৬টি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন, মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকার আর্সেনিকমুক্ত ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের ১৭টি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন। বধর্মান বীরভূম, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ মিলে ৪টি জেলার শিল্পীদের নিয়ে বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ারের ২০ দিনের তাঁতবস্ত্র মেলারও ওই দিন উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “এ ছাড়াও কিসান ক্রেডিট কার্ড, ইন্দিরা আবাস যোজনা, সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগম, মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা-সহ মোট ৩০টি প্রকল্পের উপভোক্তাদের মধ্যে থেকে কয়েক জনের হাতে ব্যাঙ্কের চেক, জমির পাট্টা, শংসাপত্র তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। বাকিদের কিসান ক্রেডিট কার্ড চেক, পাট্টা, শংসাপত্র জাতীয় নথি বিলি করার জন্য ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে থাকবে ১৬৫টি স্টল।” |
বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর খাসতালুক হিসাবে প্রচারিত মুর্শিদাবাদ জেলায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী কাল বুধবারই প্রথম পা রাখতে চলেছেন। আসলে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ হয়ে দুই দিনাজপুর পর্যন্ত এ বারের সফরে মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন ‘মিনি মহকরণ’। অতিরিক্ত জেলাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “২২টি দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের সঙ্গে জড়িত। ব্যারাক স্কোয়ারের কর্মসূচির পর মুখ্যমন্ত্রী বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। এ কারণে মুখ্যসচিব ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন পঞ্চায়েত, শিক্ষা, খাদ্য-সহ বেশ কয়েকটি দফতরের সচিব।” মৎস্য প্রতিমন্ত্রী তথা মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘির বিধায়ক সুব্রত সাহা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকছেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী-- সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম।”
বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে প্রশাসনিক বৈঠক করার পরে মুখ্যমন্ত্রী রওনা দেবেন মালদহের উদ্দেশ্য। ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর ওই সরকারি সভায় লোক টানতে জেলা তৃণমূলও মাঠে নেমে পড়েছে। তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি বলেন, “ওই সভায় মানুষের ঢল নামাতে দল ও শাখা সংগঠনগুলির প্রতিটি ব্লক নেতৃত্ব কয়েক দিন ধরে লাগাতার পথসভা ও মিছিল করছেন, ট্যাবলো নিয়ে এলাকায় এলাকায় ঘুরছেন। সভায় যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে মাইকের চোঙা বাঁধা রিকশায় বাজছে সিডি। মুখ্যমন্ত্রীর সভা উপলক্ষে জেলা জুড়ে ৪০টি তোরণ তৈরি করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।”
সুতি ১ নম্বর ব্লকে ১১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ফল্গু নদীতে একটি সেতু-সহ পাকা সড়ক নির্মাণ, ডোমকলে ও আমিরাবাদে মোট ২টি ছাত্রী আবাস নির্মাণ, ভগবানগোলা ১ ব্লকের পূর্ব কাশীপুরে পিটিটিআই ভবন নির্মাণ, সেখানেই একটি আবাসিক স্কুলভবন পড়ুয়াদের জন্য আবাসন নির্মাণ-সহ মোট ৬টি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিন ৫৫ হাজার কৃষকের মধ্যে বিলি করা হবে কিসান ক্রেডিট কার্ড, জমির পাট্টা, বাড়ির দলিল, তফসিলি জাতি ও উপজাতির ও প্রতিবন্ধীদের শংসাপত্র, ছাত্রীদের সাইকেল ও সংখ্যালঘু উন্নয়ম বিত্ত নিগমের দেওয়া বৃত্তি ও ঋণপত্র।
ওই সব প্রকল্পের উপভোক্তাদের ব্যারাক স্কোয়ারে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। মহম্মদ আলি বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাজার খানেক গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে মূলত বর্ধমান ও বীরভূম থেকে। পাশাপাশি তৃণমূলের পক্ষ থেকেও বাস, লরি ও ছোট গাড়ি মিলিয়ে প্রায় ১২০০টি গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে। মুর্শিদাবাদ জেলার উন্নয়নের গতি তরান্বিত করতেই মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঐতিহাসিক সফর।” উল্লেখ্য, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর ইন্দিরা গাঁধীর সভার কয়েক দশক পর ব্যারাক স্কোয়ার দ্বিতীয় সভাটি করতে চলেছেন আগামী কাল বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |