|
|
|
|
পুরনো সদস্য ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য কৃষকসভার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর গত বছর এক ধাক্কায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার সদস্য কমেছিল কৃষকসভার। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল সরকারের ১৪ মাসের শাসনে কৃষক-সহ সাধারণ মানুষের অনেকটাই মোহভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে সংগঠন ছেড়ে যাওয়া কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ কর্মসূচি। রবিবার তমলুকে জেলা সিপিএম কার্যালয়ে কৃষকসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে চণ্ডীপুরে সংগঠনের জেলা সম্মেলন করা হবে। তার আগে সেপ্টেম্বর মাসে কৃষকসভার আঞ্চলিক সম্মেলন হবে। নভেম্বর মাস থেকে সদস্যপদের পুনর্নবীকরণ শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে সংগঠন ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের ফিরিয়ে আনার উপরেই জোর দিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কৃষকসভার সদস্য সংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার। ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭ লক্ষ ৭২ হাজার। অর্থাৎ এক বছরেই সদস্য সংখ্যা কমে যায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার। সিপিএম জেলা নেতৃত্বের মতে, দীর্ঘ দিন পর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের জেরে কৃষক সমাজের একাংশ বিভ্রান্ত হয়েছিল। তারা আর গত বছর সদস্যপদ নবীকরণ করেনি। কিন্তু তৃণমূল সরকারের গত এক বছরের রাজত্বে সাধারণ মানুষ নিরাশ। ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, সারের মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি সমস্যা নিয়ে নতুন রাজ্য সরকার কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ বামেদের। এই নিয়ে ইতিমধ্যে আন্দোলন শুরু করেছে কৃষকসভা। তা দেখে কৃষকসভার ছেড়ে যাওয়া সদস্য-সমর্থকরা ফের ফিরে আসছে বলে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি। পূর্ব মেদিনীপুরে কৃষকসভার ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে অনেক সদস্য ভয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন সাহস করে ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের অনেকেই ফের আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। চলতি বছর জেলায় কৃষকসভার সদস্য ৯ লক্ষ ২৪ হাজার করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।”
এ দিনের বৈঠকে সিপিএম জেলা নেতৃত্ব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৃষকসভার রাজ্য সহ-সভাপতি বিনয় কোঙার। বৈঠকে জেলায় আমন চাষের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হয়। কৃষকসভার রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলার ২৫টি ব্লকের মধ্যে ২১টি ব্লকে ৫০ শতাংশেরও কম জমিতে আমন ধান রোয়ার কাজ হয়েছে। তাই এই জেলাকে খরা কবলিত ঘোষণা করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা কৃষকসভা। আগামী ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর জেলার চার মহকুমাশাসকের কাছে এই নিয়ে গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তার আগে ৩১ অগস্ট খাদ্য আন্দোলনের শহিদ স্মরণ দিবস ও ১২ সেপ্টেম্বর খাদ্য নিরাপত্তা দিবস পালন করবে কৃষকসভা।
বৈঠকে নন্দীগ্রাম ও খেজুরির চাষবাসের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট পর্যালোচনা হয়। কৃষকসভার স্থানীয় নেতৃত্বের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর আমন চাষে দলীয় সমর্থকের জমিতে তৃণমূলের লোকেদের বাধা দেওয়ার ঘটনা প্রায় নেই। সেখানকার সিপিএম নেতৃত্বের মতে, প্রায় প্রতি এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে দলের এক গোষ্ঠী চাষে বাধা দিতে চাইলে অন্য গোষ্ঠী তার বিরোধিতা করেছে। ফলে শেষ পর্যন্ত বিনা বাধাতেই চাষবাস করেছেন স্থানীয় সিপিএম সমর্থক। সামগ্রিক ভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলেও এতে আশার আলো দেখছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। |
|
|
|
|
|