ফের অশান্ত কোকরাঝাড়। জেলার পাঁচটি জায়গা থেকে সোমবার রাতে গ্রেনেড বিস্ফোরণের খবর এসেছে। ফকিরা গ্রাম, পাখরিদল, শালাকাটি গ্রামে বেশ কিছু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন গ্রামে নতুন করে গোষ্ঠী-সংঘর্ষেরও খবর মিলেছে। তানুলপুরে একটি কাঠের সেতুতে আগুন লাগানোর চেষ্টা চালায় দুষ্কৃতীরা। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের তৎপরতায় তা রোখা গিয়েছে। দিনভর অসম-বনধ শান্তিপূর্ণ থাকলেও রাতের দিকে ফের সেই হিংসার আগুনে জ্বলে উঠল কোকরাঝাড়। রাতে নতুন করে যে অশান্তি ছড়াল, তাতে আহত হলেন ৩ জন।
এআইইউডিএফ নেতা বদরুদ্দিন আজমলের গ্রেফতার ও নামনি অসমে সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে এ দিন বজরং দল অসমে ১২ ঘণ্টা বনধ ডেকেছিল। বনধ সমর্থন করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও আরএসএস। কেবল বড়োভূমি-ই নয়, বনধ-অবরোধ-কার্ফুর জেরে বরাক উপত্যকা বাদে বাকি অসমের জনজীবন এ দিন থমকে যায়। গুয়াহাটিতে বনধের প্রভাব ছিল সর্বাত্মক। উজানি অসমেও বনধের জেরে দোকানপাট, দফতর, যান চলাচল প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল। গুয়াহাটির কিছু এলাকায় বনধ সমর্থনকারীরা গাড়ি আটকায়। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে টায়ার জ্বালিয়ে পথ আটকানো হয়। বজরং সমর্থকদের ছোড়া পাথরের আঘাতে বেশ কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
সুনসান গুয়াহাটির রাস্তা। সোমবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
নামনি অসমে সংঘর্ষের জেরে এমনিতেই পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। চলছিল কার্ফু। বনধের জেরে কিছুই খোলেনি। কোকরাঝাড়ে দিনভর সব দোকান, বাজার এমনকী সরকারি দফতরও বন্ধ ছিল। চিরাং, বাক্সা, উদালগুড়ি, গোয়ালপাড়া, বরপেটা, বঙ্গাইগাঁও ও ধুবুরিতেও একই চিত্র। জাতীয় সড়কের সঙ্গে পূর্ত দফতরের রাস্তাগুলিতেও কোনও গাড়ি চলেনি। বন্ধের সময়, রাজ্য জুড়ে প্রায় ৬০০ বজরং দল সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ। আজ বিজনি স্টেশনে অল বড়োল্যান্ড মাইনরিটি স্টুডেন্ট্স ইউনিয়নের তরফে, বড়ো চুক্তি বাতিল, বড়ো নেতাদের গ্রেফতারি, ২ নিখোঁজ ব্যক্তির উদ্ধার ও বড়ো স্বায়ত্বশাসিত জেলা ভেঙে দেওয়ার দাবিতে ৬ ঘণ্টা রেল অবরোধ করা হয়েছিল।
এ দিন ধুবুরি-সহ নামনি অসমে সফর করেন সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা। আমগুড়ি শিবিরে শরণার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তাঁরা। মন্ত্রী প্রদ্যোৎ বরদলৈ বলেন, “হিংসা ছড়ানো দুষ্কৃতীরা যে সম্প্রদায়েরই হোক, ধরা পড়লে কড়া শাস্তি পেতে হবে।” এরই মধ্যে, ভূমিধর বর্মণের নেতৃত্বে বিশেষ সরকারি কমিটিও বড়োভূমির পরিস্থিতি নিয়ে সকলের সঙ্গে বৈঠক করেন। কোকরাঝাড়ের সাংসদ সাংসুমা খুংগুর বিসমুতিয়ারি সব দল ও সংগঠনের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান। এত সব সত্ত্বেও রাতের দিকে ফের হিংসায় জ্বলে ওঠে কোকরাঝাড়। আগামী কাল, মঙ্গলবার, আমসু ফের ১২ ঘণ্টা অসম বনধের ডাক দিয়েছে।
অসম গণ পরিষদের সভাপতি ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, “কংগ্রেসের দলের মধ্যে ও মন্ত্রিসভার অভ্যন্তরীণ কাজিয়ার ফলেই বড়োভূমি ও নামনি অসমে শান্তি ফিরছে না। দলের এক মন্ত্রী তরুণ গগৈকে সরানোর জন্য পুরনো জঙ্গি যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে অশান্তি জিইয়ে রাখছেন।” বড়োভূমির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বড়োল্যান্ড প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্টের প্রধান হাগ্রাম মহিলারির নেতৃত্বে বিপিএফ-এর ১০ জন প্রতিনিধি দিল্লি গিয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। রাজ্য পুলিশের ডিজিপি-সহ রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আজ বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ। যে দিন এই বৈঠক হল, সে দিনই রাতে ফের হিংসার খবর মিলল সেই কোকরাঝাড়ে।
আজ অসমে শান্তি ফেরানোর দাবিতে গুয়াহাটি আইআইটির ছাত্ররা, ২১ কিলোমিটার ‘হাফ ম্যারাথন’ দৌড়ের আয়োজন করে। দৌড়ে পা মেলান প্রায় ৩০০০ মানুষ। সোনারাম মাঠ থেকে শুরু হয়ে নেহরু স্টেডিয়ামে শেষ হওয়া এই দৌড়ে রাজ্যের পেশাদার দৌড়বীররা ছাড়াও, শিল্পী, সাহিত্যিক, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। |