পঁচাত্তরে শ্রদ্ধার্ঘ্য
প্রিয় শহরে
হজাগতিক বোধ আমাদের জীবনে ক্রিয়াশীল হওয়া সত্ত্বেও মতাদর্শরূপে তার বিস্তার যে খুব সীমাবদ্ধ, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। যে সামাজিক রূপান্তর এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠা দিতে পারে, সে-রূপান্তরকে বাধা দেওয়ার সকল আয়োজনই আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে কার্যকর।’ হ্যাঁ, এমন সোজাসাপটা ভাবেই লিখতে অভ্যস্ত আনিসুজ্জামান। বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সমাজ নিয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণায় পৌঁছেছেন পঁচাত্তরে, এখনও নানা ক্ষেত্রে রীতিমতো সক্রিয়।
বইটির প্রচ্ছদ
(ব্ল্যাকমলাট)
অনেক দিন পর প্রিয় শহর কলকাতা থেকেই প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর বাছাই করা চল্লিশটি লেখার সংকলন ইহজাগতিকতা ও
আনিসুজ্জামানের ছবি।
অন্যান্য (কারিগর)।
আনিসুজ্জামানের জন্ম কলকাতায়, দেশভাগের দশ বছর আগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ ও পিএইচ ডি (১৯৬২)। শিকাগো, লন্ডন ও রাষ্ট্রপুঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ১৯৫৯-’৬৯ ও ১৯৮৫-২০০৩, মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবসরের পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত থেকেছেন। বিভিন্ন সময়ে প্যারিস, নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো এবং বিশ্বভারতীতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে পড়িয়েছেন।
অধ্যাপনার পাশাপাশি তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রটিও বিপুল। মুসলিম মানস নিয়ে প্রথম পর্বে তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য কাজ মুসলিম-মানস ও বাংলা সাহিত্য এবং মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র। আবার বাংলা গদ্যের আদি পর্ব নিয়ে তাঁর মূল্যবান গবেষণা পুরনো বাংলা গদ্য এবং ফ্যাক্টরি করসপনডেন্স অ্যান্ড আদার বেঙ্গলি ডকুমেন্টস ইন দ্য ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি অ্যান্ড রেকর্ডস। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখেছেন বহু প্রবন্ধ, কয়েকটি বই। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে আছে আরও অনেক কাজ। সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যাও অনেক। কাল নিরবধি তাঁর আত্মজীবনী। আনিসুজ্জামান বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, আনন্দ পুরস্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরোজিনী বসু পদক, এশিয়াটিক সোসাইটির ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্মারক সম্মান পেয়েছেন। রবীন্দ্রভারতী তাঁকে সাম্মানিক ডি লিট্ দিয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকার বাংলা একাডেমীর সভাপতি। অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত একদা আনিসুজ্জামানকে অভিহিত করেছিলেন ‘এক জন শ্রেষ্ঠ বাঙালি প্রবন্ধকার’ বলে। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে রচিত তাঁর প্রবন্ধাবলির নির্বাচিত সংকলনে সমাজ ও সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ইতিহাস, রাজনীতি, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল এবং আরও অনেক সাহিত্যসাধক ও পণ্ডিতের প্রসঙ্গ, গ্রন্থ-আলোচনা এমনকী কৌতুকাশ্রিত কয়েকটি রচনাও স্থান পেয়েছে। ৩১ অগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় ভারতীয় জাদুঘরের আশুতোষ শতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে বইটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামানের সঙ্গে থাকবেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, স্বপন চক্রবর্তী, শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপ মতিলাল ও আবিদা ইসলাম।

ফিরে দেখা
সুশীল মজুমদার (১৯০৬-১৯৮৮) বলতেই সত্যজিতের ‘চিড়িয়াখানা’য় কালো চশমা-পরা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিশানাথ সেন-এর কথা মনে পড়ে, যাঁর খুনের তদন্তে উদ্যোগী হন ব্যোমকেশ বক্সী ওরফে উত্তমকুমার। সুশীলবাবুর জন্ম কুমিল্লায়, শান্তিনিকেতনে লেখাপড়া। নির্বাক ছবি ‘জীবনপ্রভাত’-এ (১৯৩১) অভিনয়ের সূত্রে ফিল্মি দুনিয়ায় আসা। ১৯৩২-এ প্রথম ছবি পরিচালনা: ‘একদা’। বক্স অফিস-সফল বেশ কিছু ছবির পরিচালক তিনি লালপাথর, হসপিটাল, শুকসারি, অভয়ের বিয়ে, ভাঙাগড়া ইত্যাদি। হিন্দিতেও ছবি করেছেন। অভিনীত বহু ছবির মধ্যে নিধিরাম সর্দার, দুই পৃথিবী উল্লেখযোগ্য। তপন সিংহ ফাউন্ডেশন ও নন্দন-এর যৌথ উদ্যোগে ২৯-৩১ অগস্ট তাঁর রেট্রোস্পেক্টিভ। অন্য দিকে নন্দন-এর উদ্যোগে শতবর্ষে দেবব্রত বিশ্বাস স্মরণ ২৮ অগস্ট বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। পূরবী মুখোপাধ্যায় ও স্বপন গুপ্তের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলবেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য। দেখানো হবে দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়ে উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর তথ্যচিত্র।

পোকামাকড়
দশাবতারের দশ প্রাণীর ভেতর কেন যে একটিও পতঙ্গের স্থান হল না কে জানে! অথচ পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারাই, কী সংখ্যায়, কী মহিমায়, কী কারুণ্যে। এদের গুরুত্ব বেদজ্ঞরা যে বিলক্ষণ জানতেন তা নতুন করে মনে পড়াল ভাটপাড়া থেকে প্রকাশিত ‘ঋদ্ধি’ নামে এক অণুপত্র, তার ‘পোকা-মাকড়ের পাঁচালি’ (সম্পাদক তন্ময় ভট্টাচার্য, অতিথি সম্পাদক শীলাঞ্জন ভট্টাচার্য) বিশেষ সংখ্যায়। বাংলায় ক্রাইম-কাহিনির অন্যতম জনক পঞ্চানন ঘোষালের লেখা ‘হিন্দু প্রাণী বিজ্ঞান’-এর অংশ পুনর্মুদ্রিত করে তাঁরা ধরিয়ে দিচ্ছেন, খ্রিস্টপূর্ব কালের লাদায়ন ঋষি রীতিমতো বিশদ পতঙ্গশাস্ত্র প্রণয়ন করে গেছেন। আবার, মশকের দংশনে এক প্রকার জ্বর-রোগ হয় এমন তথ্য সুশ্রুতের রচনায় পেয়েই সার রোনাল্ড রস মশার পিছু নেন, এ কথা শ্রীঘোষালকে জানিয়েছিলেন সে সময়ের প্রখ্যাত ব্যাকটিরিয়লজিস্ট গোপালচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। পোকা থেকে মাকড়, বিট্ল্ থেকে বাগ, ফড়িং থেকে জোনাকি নিয়ে সরস, নির্ভার কলম ধরেছেন বিজ্ঞানী, অধ্যাপক থেকে শুরু করে আরও অনেকে। পোকামাকড় নিয়ে ধাঁধা-প্রবাদ-লোকগানের ঐশ্বর্য মিলল এখানে, আর আশ্চর্য, পোকামাকড় নিয়ে বইপত্তরও বাংলায় কম নেই, জানা গেল গ্রন্থপঞ্জি থেকে। কাটতি হোক, ভাল কাটতি হোক।

জন্মদিনে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে বিষ্ণু দে বলেছিলেন, তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ? উত্তমকুমার সম্পর্কে এত দিন প্রয়োগ করা যেত, তুমি শুধু ২৪ জুলাই? এটি একটু বদলে নিতে হবে এ বার, তুমি শুধু ২৪ জুলাই আর ৩ সেপ্টেম্বর? উত্তম-স্মরণ এত কাল মূলত ২৪ জুলাই, তাঁর মৃত্যুদিন উপলক্ষেই হত। এ বার ৩ সেপ্টেম্বর, তাঁর জন্মদিনকে সামনে রেখে এক অন্য রকম আয়োজন। রুদ্রজিৎ মুখোপাধ্যায় ও রোহিত মুখোপাধ্যায়ের সংগ্রহ থেকে তাঁর মুক্তি-না-পাওয়া ছবির বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে লবিকার্ড, পোস্টার, রেকর্ড-প্রচ্ছদ নিয়ে প্রদর্শনী ১-৩ সেপ্টেম্বর, নন্দন ৪-এ। আয়োজনে ‘গার্গী মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’।

বইমেলা ডট ইন
শুরুটা ফি-বছর জানুয়ারির শেষ বুধবার নয়, বইমেলা এখন ৩৬৫ দিন। শুধু মাউসে ক্লিক, খুলে যাবে বইয়ের জগৎ। দেখেশুনে কেনা যাবে পছন্দের ইংরেজি ও বাংলা বই। শহরের মধ্যে হলে এক দিনেই পৌঁছে যাবে বাড়িতে। ‘কিলাইন’ নতুন চেহারায় আনল ই-দোকান ‘বইমেলা ডট ইন’। শুধু বই-ই নয়, এটি এখন ছবি ও হস্তশিল্পেরও নতুন মঞ্চ। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা শিল্পীদের কাজ মিলবে এখানে। প্রতিষ্ঠিতদের পাশাপাশি থাকবে নতুন শিল্পীদের ছবি। কলকাতার বইমেলা তার ছন্দ হারাচ্ছে, ভরে যাচ্ছে বই-না-পড়া মানুষের ভিড়ে, অসুবিধেয় পড়ছেন বইপ্রেমীরা, যারা বছরের এই দিন ক’টির জন্য মুখিয়ে থাকেন, বইয়ের বিপণনে এ ধরনের উদ্যোগ আদৌ সফল হবে কি এ সব নিয়েই বইমেলা ডট ইন-এর নতুন জন্মলগ্নে বসেছিল প্রকাশক-লেখক-শিল্পীদের বিতর্ক সভা। বিতর্ক চলবে, উত্তর থাকবে সময়ের হাতে। তবে এই মুহূর্তে বইমেলার নতুন ঠিকানা www.boimela.in

অভিনব
তাঁর ভাবনা স্বাধীনতার বার্তা বয়ে এনেছিল ছোটদের জন্য। চার দেওয়ালের মধ্যে কয়েক ঘণ্টার বন্দি জীবন, বড়দের চোখ রাঙানি এমনটা যেন না হয়। এতে আসলে লেখাপড়ার বারোটা বাজে— এমনটাই বলেছিলেন মারিয়া মন্টেসরি। যে কোনও শিশুর মধ্যেই লুকিয়ে আছে সম্ভাবনা। শুধু মন বুঝে সেটির তল পেতে হবে সেটাই কাজ শিক্ষকের। স্বাধীনতা ওদের ছোট থেকেই করে তুলবে স্বাবলম্বী, খুঁজে পাবে আত্মবিশ্বাস। মারিয়া মন্টেসরির এই ভাবনা নিয়েই তৈরি মাদুরদহের ‘ব্লুমিং ডেল একাডেমি’ স্কুল। অন্য শিশুদের সঙ্গেই এখানে লেখাপড়া করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা। ৩১ অগস্ট তাঁর ১৪২ তম জন্মদিনে এই স্কুল এক অভিনব উদ্যোগে শামিল। ১৪২ পা হেঁটে মন্টেসরিকে শ্রদ্ধা জানাবে বিভিন্ন স্কুলের দুই থেকে এগারো বছরের ছাত্রছাত্রীরা।

কৃষি সংকট
প্রথম সবুজবিপ্লব শুরুর আগে ভারতে চাষ হত ৪২ হাজারেরও বেশি দেশি জাতের ধান। চার দশকে সবুজ বিপ্লবের ঢেউ মুছে দিয়েছে এর অধিকাংশকেই, হাজার হাজার বছরের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও যা পারেনি। বিশ্ব পরিস্থিতি আজ এমনই, ‘কৃষি’ ও ‘খাদ্য’ শব্দ দুটির সঙ্গে বিশেষণ হিসেবে ‘সংকট’ শব্দটি জুড়ে গিয়েছে। আবার প্রযুক্তির দুনিয়ায় ‘জিন’ শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘বিপ্লব’ (ইতিবাচক অর্থে)। এই সুযোগে নানা বহুজাতিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী চটজলদি জিনপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষি ও খাদ্যের ব্যবসা করতলগত করতে উদ্যত। তাই কৃষিতে জিনপ্রযুক্তির প্রয়োগ ও খাদ্য রাজনীতি বিতর্কে উত্তাল বিশ্ব। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী সভাগৃহে ৩০ অগস্ট বিকেল পাঁঁচটায় একটি আলোচনা সভায় ‘কৃষি সংকট ও জিন শস্য’ শীর্ষকে বলবেন দুই দিকপাল জিনপ্রযুক্তি বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে সুপরিচিত বিজ্ঞানী পুষ্প মিত্র ভার্গব এবং খাদ্য রাজনীতি বিষয়ে সুপণ্ডিত দেবীন্দর শর্মা। প্রধান অতিথি উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চের (ফামা) উদ্যোগে আয়োজিত এই সভা নাগরিক সমাজকে নতুন করে ভাবাবে আশা করা যায়।

কার্টুন চর্চা
রেবতীভূষণ, চণ্ডী লাহিড়ী, আর অমল চক্রবর্তীর সঙ্গে আড্ডা নিজের মুভি ক্যামেরায় তুলে রেখেছেন দেবাশীষ দেব। শিল্পী হিসেবে তাঁর বহু দিনের চর্চা বাংলার কার্টুন-শিল্পীদের নিয়ে। তাঁর এই এক ঘণ্টার ছবি ‘কার্টুনিস্টদের সঙ্গে দেখা’ দেখানো হবে ৩১ অগস্ট সাড়ে পাঁচটায় কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের তিন তলায় বই-চিত্র সভাঘরে। শুভেন্দু দাশগুপ্ত আশীষ লাহিড়ীর উপস্থিতি-সহ সে দিন প্রকাশিত হবে ঋতুপর্ণ বসু-কৃত একটি কার্টুন সংকলন। ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন স্মরণে এ আয়োজন।

নতুন উদ্যমে
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সংস্কৃতির আকর খুঁড়ে পারফর্মিং আর্ট-এর প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চেয়েছিলেন আনন্দশঙ্কর। তাঁর নামাঙ্কিত সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টস-এর পঁচিশ বছর পূর্তি এ বছর। প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন আনন্দশঙ্কর আর তনুশ্রীশঙ্করের সুর এবং কোরিয়োগ্রাফিতে। তবে এঁরা কেউ পেশাদার নৃত্যশিল্পী নন। সংসার সামলাতে গিয়ে নাচ ছেড়ে দেওয়া প্রবাসী প্রতিমা চট্টোপাধ্যায় বা দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী পঞ্চাশোর্ধ্ব রাজশ্রী নিয়োগী মুহুরীদের মতো অনেকেই নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২৮ অগস্ট কলামন্দিরে তিন ঘন্টা ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৃত্যশৈলী তুলে ধরবেন এঁরা। তিন মাস ধরে মহড়া চলছে। তনুশ্রীশঙ্করের কথায়, “আনন্দ’র ইচ্ছে ছিল সেন্টারের ছাত্রছাত্রীরা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে যেন বিভিন্ন দেশের শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়। সেখানকার নির্যাসটা নিতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছেন এই অনুষ্ঠানটির জন্য। আমি চেয়েছি, একটু অন্য রকম হোক, আনন্দ’র মতোই।”

আন্তর্জাতিক
প্রিটোরিয়ার জেলে নেলসন ম্যান্ডেলা আর তাঁর আন্দোলনের সঙ্গীদের দেশজ ভাষা জানতেন বলে জেমস গ্রেগরিকে পাঠিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার, তাঁদের ওপর নজর রাখার জন্যে। শ্বেতাঙ্গ অফিসার নজরদারির বদলে নিজেকে কী ভাবে জড়িয়ে নিলেন বর্ণবৈষম্য থেকে ম্যান্ডেলার মুক্তির স্বপ্নে, জেমস-এর আত্মজীবনী থেকেই সেই আশ্চর্য কাহিনি তুলে এনে ছবি করেছেন বিলি অগস্ট ‘গুডবাই বাফানা’ (সঙ্গের ছবি)। বিলি এ-ছবির আগেই দু’-দুবার কান উৎসবে সেরা ছবির সম্মান জিতে নিয়েছেন। ম্যান্ডেলাকে নিয়ে বিলির এই ছবিটি সহ পাঁচ মহাদেশের বাছাই-করা একগুচ্ছ ছবি ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস-এর আন্তর্জাতিক উৎসবে। ২৭-৩১ অগস্ট, জ্ঞান মঞ্চে। প্রথম দিন বিকেল ৪টেয় উদ্বোধন করবেন সুমন মুখোপাধ্যায়। অন্য দিকে ভারতীয় সিনেমার একশো বছর উপলক্ষে ফিল্মস ডিভিশন নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে বি ডি গর্গ-এর ষাটের দশকে তোলা তথ্যচিত্রটি দেখাচ্ছে ২৭ অগস্ট সন্ধে ৬টায়। সঙ্গে ফিল্মস ডিভিশন-এর সন্দীপ রায়ের তথ্যচিত্রও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে।

শাশ্বত
ছবি: হীরক সেন।
ভূতও ভয় পায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে! আমরাও কি পাই না? কহানি-র বব বিশ্বাস আর ভূতের ভবিষ্যৎ-এ হাতকাটা কার্তিককে মনে করুন তো। তবে এ বারে পঞ্চাশের দশকের এক সাহিত্যিকের ভূমিকায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে সন্দীপ রায়ের নতুন ছবি যেখানে ভূতের ভয়-এ। সেখানে সাহিত্যিকের কাছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের এক প্রেত আসে, তাকেই সাহিত্যিক উল্টে ধমকে দেন: ‘বদ্ মতলব থাকলেও আপনি আমার কোনও অনিষ্ট করতে পারবেন না আপনি তো হাওয়া।’ শান্তিনিকেতন থেকে অল্প দূরে রায়পুরে শুটিং চলছিল, শট দেওয়ার আগে-পরে শাশ্বতর মন্তব্যে প্রায়ই হেসে ফেলছিলেন ফিল্ম ইউনিটের লোকজন। একদিন জমকালো রোদে পুরনো সস্তার পাইস হোটেলে দুপুরে খাওয়ার দৃশ্য সাহিত্যিকের, শাশ্বত বলে উঠলেন ‘ফাইনাল টেক-এর আগে এত বার খেতে হচ্ছে... লাঞ্চব্রেক-এ আর খিদে থাকবে বলে মনে হয় না।’ শাশ্বত ইউনিটের পুরনো মেম্বার, ছোট পর্দায় সন্দীপের ফেলুদা-য় তোপসে করতেন। ‘শরদিন্দুর গপ্পোটাই জমাটি, তার ওপর বাবুদার (সন্দীপ) স্ক্রিপ্ট। সংলাপে সেন্স অব হিউমার। দারুণ মজা পাচ্ছি, উল্টোদিকে আবার প্রেতের চরিত্রে দুর্দান্ত পরাণদা (বন্দ্যোপাধ্যায়), ওঁর সঙ্গে কাজ করলে আমার অভিনয়টা আরও খোলে, একটা কেমিস্ট্রি কাজ করে আমাদের মধ্যে।’ অভিনয় করতে-করতে কারও কথা মনে পড়ে? ‘হ্যাঁ, বার বার রবিজেঠুর (ঘোষ) কথা মনে হয়, অসাধারণ সেন্স অব টাইমিং ছিল।’

গবেষক
বাংলা ভাষার উৎস সন্ধান এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা দু’টোতেই তিনি সমান স্বচ্ছন্দ। সাড়ে চারশো বছরে ‘অনুবাদ’ শব্দের অর্থ যে এগারো বার বদলেছে-- এমত শব্দার্থ গবেষকের কলম থেকেই প্রকাশ পেয়েছে আশার ছলনে ভুলি-র মতো অবিস্মরণীয় মাইকেল-জীবনী। অধ্যাপক গোলাম মুরশিদের জন্ম ১৯৪০-এ বরিশালে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ডেভিড কফের অধীনে পিএইচ ডি করেন রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিষয় ‘উনিশ শতকে হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলন’। পরে সেখানেই দু’দশক অধ্যাপনা। মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু দিন ছিলেন কলকাতায়। সে সময় ‘দেশ’ ও ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। ১৯৭৩-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে আবার এ শহরে। উপলক্ষ বিদ্যাসাগর বক্তৃতা। ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে এটিই পরে বই হিসেবে প্রকাশিত রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা। এর পর মেলবোর্ন, শিবনারায়ণ রায়ের কাছে গবেষণার ফসল রিলাকট্যান্ট ডেবিউট্যান্ট। ১৯৮৪ থেকে লন্ডন প্রবাসী মানুষটি যুক্ত হন ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে। তবে কাজের ফাঁকে সেখানেও গবেষণাই ধ্যানজ্ঞান। বহু প্রবন্ধ ছাড়াও বাংলা গদ্য, নারীমুক্তি, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে বইয়ের সংখ্যাও কম নয়। উল্লেখযোগ্য কালান্তরে বাংলা গদ্য, বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার আদিপর্ব, আঠারো শতকের গদ্য, হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, কালাপানির হাতছানি: বিলেতে বাঙালির ইতিহাস ইত্যাদি। দীর্ঘ পরিশ্রমে মাইকেল মধুসূদনের জীবনী রচনার পরে হাত দিয়েছেন প্রামাণ্য নজরুল জীবনী প্রণয়নে। নতুন ভাবে লিখছেন রাসসুন্দরী থেকে তসলিমা নারী প্রগতির দেড়শো বছর। উপন্যাস লিখেছেন ‘হাসান মুরশিদ’ ছদ্মনামে। পেয়েছেন ঢাকার ‘বাংলা একাডেমী’ ও ‘প্রথম আলো’ পুরস্কার। তবে প্রতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির চাইতে বড় পুরস্কার আমার পাঠকরা, বলছিলেন তিনি, বয়স তো হল, এখনও বহু কাজ বাকি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে সদ্য ঘুরে গেলেন এ শহরে, বললেন মাইকেল মধুসূদনকে নিয়ে তাঁর গবেষণার কথা।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.