বন্ড এখন বিনিয়োগের বাজারে নতুন তারকা
ন্ড মানেই জেমস বন্ড নয়। লগ্নির বাজারেও বন্ড এখন ‘বিগ বয়’। পাশে আছে তুতো ভাই ডিবেঞ্চারও। আর নকুল-সহদেব নয়, বিনিয়োগের বাজারে এরা এখন ভীম-অর্জুন হতে চায়। অর্থাৎ জেনে নেওয়া দরকার এদের পরিচয়।
বন্ড এবং ডিবেঞ্চার দুই-ই হল এক বিশেষ ধরনের ঋণ। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি অর্থ সংগ্রহ করে মূলত দুটি উপায়ে। শেয়ার ইস্যু এবং ঋণের মাধ্যমে। বিভিন্ন ধরনের ঋণের মধ্যে বন্ড ও ডিবেঞ্চার অন্যতম। সরকারও বাজার থেকে ঋণ সংগ্রহ করে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে। বন্ড এবং ডিবেঞ্চার দুই-ই একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের হয়, যেমন ৩, ৫, ৭, ১০, এমনকী ২০ বছর। ইস্যুর সময়েই বলে দেওয়া হয় প্রদেয় সুদের হার।
বড় সংস্থা যখন মোটা অঙ্কের বন্ড অথবা ডিবেঞ্চার ইস্যু করে, তখন তা অনেক সময়েই করা হয় পাবলিক ইস্যুর মাধ্যমে। এ ছাড়া সংস্থাগত উদ্যোগ বা ‘প্রাইভেট প্লেসমেন্ট’-এর মাধ্যমেও বন্ড ও ডিবেঞ্চার ইস্যু করা হয়। সরকার নিজে, সরকারি সংস্থা এবং সরকারি লগ্নি প্রকল্পের আওতায় কোনও ঋণপত্র ইস্যু করা হলে তাকে সাধারণত বন্ড বলা হয়। বেসরকারি উদ্যোগে ইস্যু করা এই ধরনের ঋণপত্রের নাম সাধারণত হয় ডিবেঞ্চার।
প্রতিটি বন্ড এবং ডিবেঞ্চার একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের হয়, যাকে বলা হয় ফেস ভ্যালু। যেমন ১,০০০, ৫,০০০, ১০,০০০, এমনকী ১ লক্ষ টাকা। আপনি যখন এই ধরনের ঋণপত্রে লগ্নি করেন, তখন আপনি পান বন্ড অথবা ডিবেঞ্চার সার্টিফিকেট। বড় সংস্থার বন্ড এবং ডিবেঞ্চার সার্টিফিকেট হিসাবে না-নিয়ে সংগ্রহ করা যেতে পারে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টেও। বন্ড এবং ডিবেঞ্চারে সুদ সাধারণত দেওয়া হয় ছ’মাস অথবা এক বছর অন্তর। ডিবেঞ্চারে লগ্নি করে শেয়ারের মতো ভোটাধিকার পাওয়া যায় না।
এ বার আসা যাক সুরক্ষার প্রশ্নে। ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি অথবা সরকারি সংস্থার বন্ড সাধারণত সুরক্ষিত হয়। সুরক্ষা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে কোনও কোনও বেসরকারি সংস্থার ডিবেঞ্চার নিয়ে। সুরক্ষা দু’রকমের। নিয়মিত সুদ পাওয়ার সুরক্ষা এবং মেয়াদ শেষে মূল টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা। ডিবেঞ্চার জামিনযুক্ত (সিকিওর্ড) অথবা জামিনবিহীন (আনসিকিওর্ড) হতে পারে। প্রথমটির ক্ষেত্রে ইস্যু করা ডিবেঞ্চারের সমপরিমাণ বা তার বেশি মূল্যের কোনও স্থাবর সম্পদ জামিন রাখা হয়। স্বভাবতই সুরক্ষার দিক থেকে প্রথমটি শ্রেয়। ডিবেঞ্চার আবার রূপান্তরযোগ্য (কনভার্টিব্ল) অথবা অ-রূপান্তরযোগ্য (নন-কনভার্টিব্ল) হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ডিবেঞ্চার যদি সম্পূর্ণ ভাবে ইক্যুইটি শেয়ারে বদলে নেওয়ার শর্ত থাকে, তখন তার নাম হয় ‘ফুললি কনভার্টিব্ল ডিবেঞ্চার’ বা সংক্ষেপে এফসিডি। আংশিক রূপান্তরের শর্তসাপেক্ষে কোনও ডিবেঞ্চার ইস্যু করা হলে তার নাম হয় ‘পার্টলি কনভার্টিব্ল ডিবেঞ্চার’ বা পিসিডি। অ-রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চারের নাম এনসিডি।
শেয়ারের মতো ডিবেঞ্চার এবং বন্ডও নথিবদ্ধ হতে পারে। যদিও ঋণপত্রের বাজার শেয়ার বাজারের মতো জমজমাট নয়, তবুও নথিবদ্ধ থাকলে প্রয়োজনে বিক্রির চেষ্টা করা যেতে পারে। অন্য দিকে, অ-নথিবদ্ধ (আনলিস্টেড) বন্ড ও ডিবেঞ্চারের ক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য মেয়াদ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। ব্যাঙ্ক-সুদের ওঠাপড়ার প্রভাবে বাজারে বন্ড ও ডিবেঞ্চারের দাম বাড়ে কমে। গতিটা বেশির ভাগ সময়েই বিপরীতমুখী। ব্যাঙ্ক জমায় সুদের হার বাড়লে বাজারে বন্ড ও ডিবেঞ্চারের দাম কমে এবং উল্টোটা হয় ব্যাঙ্ক জমায় সুদের হার কমলে। বাজারে টাকার জোগান, সরকারের নতুন বন্ড ইস্যু এবং বন্ড পরিশোধের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেও দাম প্রভাবিত হয়। কোনও মিউচুয়াল প্রকল্পের সিংহভাগ তহবিল বন্ড অথবা ডিবেঞ্চারে লগ্নি করা হলে সেই প্রকল্পকে বলা হয় বন্ড ফান্ড বা ডেট ফান্ড।
সুরক্ষার ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে রেটিং থেকেও। অনেক নামী সংস্থাই কোনও রেটিং এজেন্সিকে দিয়ে তাদের বন্ড/ ডিবেঞ্চারের রেটিং করায়। ‘এএএ’ বা ‘ট্রিপল এ’ হল সর্বোচ্চ রেটিং। ‘এএ+’ বা ‘এএ’-ও মন্দ নয়। রেটিং করা নয় এমন বন্ড বা ডিবেঞ্চারে লগ্নির আগে যথেষ্ট খোঁজখবর নিতে হবে। যা যা জানতে হবে, সেগুলি হল:
(১) সংস্থাটি কত পুরনো। অতীত কাজকর্ম কেমন। পরিচালনা কাদের হাতে। সুনাম কেমন।
(২) ডিবেঞ্চার জামিনযুক্ত কি না। জামিন রাখা সম্পদের মূল্য/বাজার দর কত।
(৩) সুদের হার কত। তা বাজারে প্রচলিত সুদের হারের তুলনায় অনেক বেশি হলে সন্দেহের অবকাশ থাকবে। খোঁজ নিতে হবে এজেন্ট কমিশনের ব্যাপারেও।
(৪) শেষ তিন বছরে কোম্পানির আয় ও লাভের পরিমাণ কত ও তা বাড়ছে কি না।
(৫) কোম্পানি কোন ব্যবসায় নিয়োজিত এবং সেই ব্যবসার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কেমন। কোম্পানিটি স্থানীয় না সর্বভারতীয় ইত্যাদি।
প্রশ্নগুলির উত্তর যদি মনমতো হয়, তবেই লগ্নির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন। তা না হলে কম সুদে সুরক্ষিত জায়গায় টাকা রাখুন, যাতে সুদ এবং আসল ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে কোনও সন্দেহ না-থাকে।
সরকার অনুমোদিত কোনও কোনও বন্ড বাজারে এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়। গত বছর থেকে চালু হয়েছে করমুক্ত বন্ড। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি সংস্থা ইস্যু করেছিল ৩০,০০০ কোটি টাকা মূল্যের এই বন্ড। এখানে করমুক্ত সুদের হার ৮.২ শতাংশ এবং ৮.৩ শতাংশ। যা উঁচু হারে করদাতাদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। এ বারের বাজেটে ৬০,০০০ কোটি টাকার করমুক্ত বন্ড ইস্যু করার অনুমোদন আছে। ডিসেম্বর নাগাদ এই বন্ড বাজারে আসবে, আশা করা যায়। আগের দু’বছর বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল কর সাশ্রয়কারী পরিকাঠামো বন্ড। এ বার তা তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আছে মূলধনী লাভকর সাশ্রয়কারী বা ‘ক্যাপিটাল গেইনস’ বন্ড। কোনও দীর্ঘমেয়াদি সম্পত্তি বিক্রি করে লাভ হলে সেই লাভ ওই সম্পত্তি হস্তান্তরের ৬ মাসের মধ্যে তিন বছর মেয়াদি এই বন্ডে লগ্নি করলে কোনও মূলধনী লাভকর দিতে হয় না। সুদের হার অবশ্য কম। বর্তমানে ৬ শতাংশের আশেপাশে।
দেখা যাচ্ছে, বন্ড ও ডিবেঞ্চার দুইয়েরই আছে ভাল-মন্দ। এ কথা শেয়ারের ব্যাপারেও খাটে। প্রশ্ন হল, আপনি কতটা সাবধানে বাছাই করছেন, তার উপর। ভাল ডিবেঞ্চার ও বন্ড অবশ্যই দীর্ঘ মেয়াদে টাকা রাখার একটি উপযুক্ত জায়গা হয়ে উঠতে পারে বহু লগ্নিকারীর কাছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.